'লক্ষ্মীছাড়া' দেবাদিত্যর Chowman এক লক্ষ্মীপুজোর গল্প

'লক্ষ্মীছাড়া' দেবাদিত্যর Chowman এক লক্ষ্মীপুজোর গল্প

Monday May 29, 2017,

3 min Read

ভালোবাসেন গান গাইতে আর খেতে। ভ্রমণ সাহিত্যের পোকা। পায়ের তলায় সর্ষে। চষে বেড়ান গোটা বিশ্ব। হাতে স্টিয়ারিং হলে তো কথাই নেই। দেবাদিত্য চৌধুরী। জনপ্রিয় ব্যান্ড লক্ষ্মীছাড়ার অন্যতম সদস্য সেই '৯৮ সাল থেকে। দেবাদিত্যের আরেকটা গুণ তাঁর ব্যবসায়ীক জ্ঞান। ওঁর হাত ধরেই কলকাতায় চাউম্যান, চেন অব রেস্টুরেন্টের আবির্ভাব ২০১০ সালে। গায়ক দেবাদিত্য থেকে উদ্যোগপতি দেবাদিত্যের এই সফর কোনও সিনেমার রোমাঞ্চকর গল্পের থেকে কিছু কম নয়।

image


সেন্ট জেভিয়ার্সের প্রাক্তনী দেবাদিত্য কখনও নিজেকে ছোট গণ্ডিতে বেঁধে রাখেননি। গান থেকে জনসংযোগ, রেস্তোরাঁ চেন, দেশ থেকে দেশে ঘুরে নানান অভিজ্ঞতা ঝুলিতে পুরেছেন IISWBM এর ম্যানেজমেন্টের ছাত্রটি। যখন যা করেছেন পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, এগিয়ে গিয়েছেন নিজের দক্ষতায়। লক্ষ্মীছাড়া ব্যান্ডের সঙ্গে গান গাইতে গাইতে দেশে বিদেশে প্রচুর ঘুরেছেন। সেখান থেকে নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে। নিজে খেতে ভালোবাসেন আর ভালোবাসেন বন্ধুবান্ধবদের খাওয়াতে। চাউম্যান এই সবের যোগফল। চাউম্যানের শুরু গল্প বলছিলেন সংস্থার কর্ণধার। বাজারটাকে ভালোই বোঝেন। তাই সাধ্যের মধ্যে দাম রেখে সেরা চাইনিজ কুইজিন শহরের মানুষের পাতে তুলে দিতে চাউম্যান করার ভাবনা। গোটা পরিকল্পনা একাই ছকে নিয়েছিলেন এই তরুণ উদ্যোগপতি। খাদ্যরসিক বাঙালির কাছে দেবাদিত্যের রেস্তোরাঁ এখন ফেভারিট ডেসটিনেশন। হোম ডেলিভারির ব্যবস্থাও রেখেছে চাওম্যান।

শহরের বাছা মাস্টার শেফ চিকেন, ফিস, প্রন, ডাক, ক্র্যাব, ল্যাম্ব, পর্ক দিয়ে মেনু তৈরি করেছেন। ক্রকারি থেকে সসেজ সব থাইল্যান্ড ও চিন থেকে আনানো। রেস্তোরাঁর অ্যাম্বিয়ান্স আর ইন্টিরিয়রের জন্য জিনিসপত্র আনা হয়েছে চিন এবং হংকংয়ের বাজার থেকে। আতিথেয়তা থেকে খাবার পরিবেশনে রুচির ছাপ স্পষ্ট, যা চাউম্যানকে অন্য রেস্তোরাঁ থেকে আলাদা করে রাখে। যত দিন গড়িয়েছে চাউম্যানের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বালিগঞ্জ, সল্টলেক, গল্ফগ্রিন, গড়িয়া, বিটি রোড সহ শহরের ৮টি প্রাইম লোকেশনে ছড়িয়ে পড়েছে চাউম্যানের ৮ আউটলেট। আদতে বাড়ির কাছে চাইনিজ ফাইন ডাইনিংয়ের অভিজ্ঞতা তৈরি করে দেয় দেবাদিত্যের এই রেস্তোরাঁ। চাউম্যানই একমাত্র রেস্তোরাঁ যারা শহরের অভিজাত ক্লাব যেমন ক্যালকাটা ক্লাব, ক্যালকাটা রোয়িং ক্লাব, ডালহৌসি ইন্সটিটিউট ক্লাবে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। রেস্তোরাঁর পাশাপাশি শহরের কোণায় কোণায় হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা রেখেছে চাউম্যান। তার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক বাইক এবং ডেলিভারি বয় রয়েছে।

কী করে এতকিছু একসঙ্গে সামলান? প্রশ্ন করায় বলছিলেন, মানুষের মাথা মেশিনের মতোই। যত চলবে কার্যক্ষমতা বাড়বে। অনেকটা শান দেওয়ার মতো। তাই কাজের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখা উপভোগ করি। যে দিন ক্লান্ত হব, বুঝতে হবে ফুরিয়ে আসছি। তাই ক্লান্তিবোধকে যতদূরে সম্ভব ঠেলে রাখাই ভালো। গান থেকে ভ্রমণ, বই থেকে খাওয়া দাওয়া মনের আনন্দে গ্রহণ করি, হেসে নিজের ইউএসপি ফাঁস করে দিলেন কর্মোদ্যমী এই উদ্যোগপতি।

সম্প্রতি বিটি রোডের ওপর কাশীপুরে অষ্টম আউট-লেটটি খুলল চাউম্যান। ইন্টিরিয়র, অ্যাম্বিয়ান্স থেকে মেনু, সব এক। ‘এতদিন দক্ষিণ কলকাতার এবং মূল কলকাতার মধ্যে ঘোরা ফেরা করলেও এবার একটু কলকাতার উত্তরের দিকে বা কলকাতা থেকে একটু বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। আপাতত কাশীপুরে পৌঁছলাম। এবার ডানলপ-শ্যামবাজার ওই এলাকাতেও কয়েকটি আউলেট খোলার ইচ্ছে রয়েছে’, জানান দেবাদিত্য। মেনু অন্যান্য চাউম্যনের মতোই। চিলি মাউন্টেন লবস্টার থেকে চিলি গার্লিক ল্যাম্ব, চিলি গার্লিকসাংহাই স্টাইল নুডলস, পেপার গার্লিক প্রন মেনুতে থাকছে সবই। তাছাড়া নানান ধরনের স্যুপ, লোভনীয় স্টার্টার, মেন কোর্স মেনু সেসব তো আছেই। খরচ ২ জনের জন্যে ৮০০ টাকা যথেষ্ট। এটাইতো চেয়েছেন দেবাদিত্য, সস্তায় অথেনটিক চাইনিজ ফুড মধ্যবিত্তের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই যাত্রায় যে তিনি রীতিমতো সফল, চাউম্যনের আউটলেটগুলোয় প্রতিদিনের ভিড়ই তা বলে দিচ্ছে।