স্লেট-পেন্সিল দিয়েই ই-লার্নিং, অ্যাপে 'বর্ণপরিচয়' দুই বাঙালির

স্লেট-পেন্সিল দিয়েই ই-লার্নিং, অ্যাপে 'বর্ণপরিচয়' দুই বাঙালির

Tuesday September 15, 2015,

3 min Read

পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অসম ও বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তে ছড়িয়ে গিয়েছে বাঙালি। ভাষা মানচিত্রে ডালপালা মেলে দিয়েছে বাংলাও। বিশ্বজুড়ে বাংলা ভাষায় কথা বলেন এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৫ কোটি। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষার তালিকায় বাংলার স্থান সপ্তম। ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে গর্বের। সেই গর্বের সঙ্গেই রয়েছে দায়িত্ব। নিজের ভাষার মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব। পরবর্তী প্রজন্মের হাতে বাংলা ভাষাকে পৌঁছে দেওয়ার কাজ। বাংলা ভাষার সেই গুরুত্বের কথা সকলের কাছে পৌঁছে দিতেই ২০১৫ সালের মার্চে 'বর্ণপরিচয়' অ্যাপ চালু করেন দুই তরুণ বাঙালি সন্দীপ সাহা এবং স্বর্ণেন্দু দে।

image


কী করে এই 'বর্ণপরিচয়'? বলা ভালো শিশুদের 'ই-পাঠশালা'। বিশেষ পদ্ধতিতে বাংলা অক্ষর ও সংখ্যা শেখানোর প্রয়াস। এমন এক উদ্যোগ কেন? কর্মসূত্রে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে গিয়েছে বাঙালি। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে অনেকটাই দূরে সরে যেতে হয়েছে তাঁদের। ফলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বাংলা ভাষায় পঠনযোগ্য কিছু মানে স্মার্টফোন বা ট্যাব।নিজের ভাষার সঙ্গে সেটুকুই তাদের যোগসূত্র। ভাষার সেই শিকড়কে আরও মজবুত করতেই বর্ণপরিচয়ের কথা ভাবেন সন্দীপ-স্বর্ণেন্দু। শুধু বাংলা নয়, হিন্দি ও ইংরেজির জন্যও 'বর্ণপরিচয়' খুলেছেন তারা।

প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষাদানের এক বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন বানিয়েছেন ওই দুই বাঙালি তরুণ।এই অ্যাপে কাজে লাগান হয়েছে বাঙালির স্লেট-পেন্সিল কনসেপ্টকে। শিশুদের বাংলা অক্ষর ও সংখ্যা চেনানোর জন্য রয়েছে বিভিন্ন মজার ব্যাপারস্যাপার। খানিকটা খেলতেই-খেলতেই অক্ষর ও সংখ্যা শিখে ফেলা। পড়া, লেখা ছাড়াও এতে রয়েছে ম্যাচ-মেকিং। অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে লেখার জন্য রয়েছে শিশুদের মনের মতন ব্যবস্থা। বিভিন্ন রঙের পেন্সিল থাকছে। রংবেরঙের সেই পেন্সিল দিয়েই লেখার অনুশীলন করা হবে। ফলে বিভিন্ন রঙের সঙ্গেও পরিচয় ঘটতে থাকছে শিশুদের। রয়েছে আরও অনেক কিছু। বিখ্যাত হয়ে যাওয়া বেশ কিছু ছড়ার এক বড়সড় ভাণ্ডার স্টোর করা রয়েছে এতে। সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন ছবি, অডিও ক্লিপ।

image


স্লেট-পেন্সিল হাতে ধরলে যেমন অনুভূতি হয়, সেই অনুভূতিই অ্যাপ্লিকেশনটিতে ধরার চেষ্টা করেছেন সন্দীপ ও স্বর্ণেন্দু। স্লেটে কিছু লেখার পরে তা মুছে ফের লেখার জায়গা তৈরি করা হয়। এই অ্যাপেও তা করার চেষ্টা করা হয়েছে। ব্যবহারকারীদের জন্য একটা ইরেজার টুল রাখা হয়েছে। বিষয়টি যে বেশ চ্যালেঞ্জিং মানছেন স্বর্ণেন্দু। এই অ্যাপে এত বেশি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে যে মেমরি ম্যানেজমেন্টের দিকটি নিয়েও খাটতে হচ্ছে তাদের।না হলে যে কোনও সময়েই সিস্টেম স্লো হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে।

২০১২ সালের ৩১ মার্চ সার্ভিস বেসড ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপ কোম্পানি হিসাবে কাজ শুরু করে সন্দীপ ও স্বর্ণেন্দুর ইনোফায়েড (Innofied)। এই স্টার্টআপের ঝুলিতে 'বর্ণপরিচয়' ছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েকটি অ্যাপ্লিকেশন।যেমন Locat’r, BuizzConf, The Little Indian Archer, Demons Doom, Cordial, Max International, Pupil Aspire, Fitness Pro ইত্যাদি।

স্বর্ণেন্দু দে এবং সন্দীপ সাহা, ইনোফায়েডের দুই কর্ণধার

স্বর্ণেন্দু দে এবং সন্দীপ সাহা, ইনোফায়েডের দুই কর্ণধার


কেমন সাড়া মিলছে 'বর্ণপরিচয়' থেকে? সন্দীপের কথায়,"আমেরিকা, ইউরোপ-সহ সব মহাদেশেই বাঙালিরা ছড়িয়ে রয়েছেন। সেই কমিউনিটি থেকে আমরা দুর্দান্ত সাড়া পাচ্ছি।আমাদের এই অ্যাপটা বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়। সবমিলিয়ে প্রায় হাজার চারেক ডাউনলোড হয়েছে"। স্বর্ণেন্দু বললেন,"কলকাতা ও বাংলাদেশে অনেকেই আমাদের এই অ্যাপ ব্যবহার করছেন। আমরাও টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছনোর জন্য যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি। নামি ব্লগারদের সঙ্গে কথা বলছি, কথা হচ্ছে রিভিউ প্ল্যাটফর্মগুলির সঙ্গে। 94.3 Radio One টক শো'তেও বর্ণপরিচয়ের ব্যাপারটা তুলে ধরা হচ্ছে"।

বর্ণপরিচয়কে আরও আকর্ষণীয় করার কাজও চলছে পুরোদমে। প্রথম ব্যবহারকারীদের বিষয়টি যাতে কোনওভাবেই একঘেয়ে না লাগে তা নিশ্চিত করতে জোর দেওয়া হয়েছে কার্টুনের ওপর। শিশুমনে কার্টুনের যে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ইউকে-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিলের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বে ই-লার্নিং শিক্ষাদানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে ভারত। সন্দীপ-স্বর্ণেন্দু সেই ই-লার্নিং শিক্ষাদানের প্ল্যাটফর্মকেই বিশ্ব-বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়েছেন। সাফল্য মিলেছে।তবে এখানেই শেষ নয়। আরও আরও শিশুর কাছে উত্তরাধিকারের ব্যাটন পৌঁছে দিতে অনেক কিছুই করতে চান তারা।