গ্রামীন উৎপাদিত দ্রব্যের বিপণনের কদরে ‘ফ্রন্টিয়ার মার্কেটস’


গ্রামীন উৎপাদিত দ্রব্যের বিপণনের কদরে ‘ফ্রন্টিয়ার মার্কেটস’

Tuesday August 25, 2015,

4 min Read

গ্রাম্য দীনতা এবং গ্রাম্য বাজারের পার্থক্যকরণ

বর্তমানে কোনও দ্রব্য ক্রেতাদের কাছে আনতে গেলে প্রথমেই খেয়াল রাখতে হয় তাঁদের পছন্দ, অপছন্দ,বিরক্তির ক্ষেত্র কিংবা অভিরুচির ওপর। এর ওপরই নির্ভর করে সাধারণ মানুষের কাছে দ্রব্যটি গ্রহণযোগ্য হবে কিনা। এ তো গেল শহুরে মানুষের আগ্রহের কথা। কিন্তু গ্রামের মানুষের তথাকথিত অনুন্নত অঞ্চলে কোম্পানি এই একই জিনিসের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে কী করে?


image


ভারতের ২৮ টি রাজ্যের মধ্যে ১১ টিতেই এ নিয়ে কাজ করেছেন ‘ফ্রন্টিয়ার মার্কেটস’-এর সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা অজৈতা শাহ। তাঁর মতে, গ্রাম্য দারিদ্রের ক্ষেত্রে কিছু পরিসংখ্যানগত তথ্য মেনে চলতে হয়। তাঁরা গ্রামের মানুষদের কাছে কোনও বাছাইয়ের জায়গা রাখে না। বরং যে দ্রব্যটি বিক্রয় করতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ তাঁদের সামনে রাখে। যাতে দ্রব্যটি সম্পর্কে গ্রামের মানুষের মধ্যে ক্রেতা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়।

গ্রামের বাজারকে সম্ভাষণ

দ্রব্যটি সম্পর্কে গ্রামের মানুষদের অবগত করতে গিয়ে পরিসংখ্যানে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসে। সেখানে দেখা যায়, ভারতে গ্রামের মানুষরাও ক্রেতা হিসেবে যথেষ্ট এগিয়ে। কারণ তাঁরা যে জিনিসটাই কিনেছেন, তার পেছনে বুদ্ধিদীপ্ত অর্থের বিনিয়োগের ছাপ রয়েছে।

‘এফএমসিজি’র বিভিন্ন দ্রব্য এক সময় বাজার ধরতে বিফল হয়েছিল। তাদের এই বিফলতা থেকেও শিক্ষা নিয়েছিলেন অজৈতা শাহ। তিনি মনে করেন, গ্রামের মানুষদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা খুব কঠিন কাজ নয়। বরং যে সমস্যাটা সর্বাধিক, তা হল, কোনও জিনিস কেনার পর তা খারাপ হয়ে গেলে, সেটি সারানোর জন্য সঠিক লোক পাওয়া যায় না। ফলে ক্রেতার সেই জিনিসটির ওপর থেকে বিশ্বাসটাই উঠে যায়। একই দ্রব্যের ওপর বারবার বিনিয়োগ করতেও তাঁরা রাজি হন না। বিশেষ করে সৌরশক্তিতে চালিত দ্রব্যগুলির ক্ষেত্রে এই অসুবিধা লক্ষ্য করা যায়। সৌরশক্তিতে চালিত দ্রব্যগুলি সাধারণত ২০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। কিন্তু কোনও কারণে সেটি যদি ছ’মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তা সারানোর কোনও জায়গা পাওয়া যায় না। ফলে ক্রেতাদের মনে জিনিসটির সম্পর্কে অবিশ্বাসের জন্ম নেয়।

কি করে ‘ফ্রন্টিয়ার মার্কেটস’ এই সমস্যার সমাধান করবে

বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যে নিজেদের অফিস খুলেছে ‘ফ্রন্টিয়ার মার্কেটস’। জীবন সাহোগিস নামে একজন ‘ফিল্ড স্টাফ’-এর সহযোগিতায় বিভিন্ন জায়গায় ক্রেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সেখানে কোনও দ্রব্যকে বিক্রি নয়, বরং ‘ফ্রন্টিয়ার মার্কেটস’ নামক ব্র্যান্ডটিকে বিক্রির চেষ্টা চলছে। মানুষের কাছে ‘ফ্রন্টিয়ার মার্কেটস’-কে এমন ভাবে আনা হচ্ছে, যাতে সাধারণের মধ্যে বিশ্বাস জাগে, কোনও কেনা দ্রব্য খারাপ হলে ‘ফ্রন্টিয়ার মার্কেটস’ সেটি সারানোর উদ্যোগ নেবে। ‘ফ্রন্টিয়ার মার্কেটস’-এর প্রতিষ্ঠাতা ক্রেতাদের সম্পর্কে নিজস্ব মতামত হল, ‘যদি ক্রেতারা দ্রব্যটির কোনও দোকান দেখতে না পান, তাহলে জিনিসটি সম্পর্কে বিশ্বাস জন্মাবে না। অতীতে সৌরশক্তিতে চালিত দ্রব্যগুলি নিয়ে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাই আমরা ক্রমেই জিনিসের বিক্রয় কমিয়ে, খারাপ হয়ে যাওয়া জিনিসগুলি সারাই করতে শুরু করেছিলাম। যাতে দোকান না থাকলেও সাধারণ মানুষ আমাদের বিশ্বাস করতে থাকেন।’ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাজারের চাহিদা পর্যবেক্ষণ করে ‘ফ্রন্টিয়ার মার্কেটস’ একটি ক্যাটালগ তৈরি করেছে, যাতে সৌরশক্তি পরিচালিত দ্রব্যগুলি নিয়ে বিস্তারিত লেখা রয়েছে। যেমন--- লন্ঠন,পাখা। এছাড়াও সৌরশক্তিটে যে ইনভার্টার এবং রাস্তার আলো জ্বালানো যায়ে, তাও কাটালগটিতে উল্লেখ রয়েছে।


image


১। বর্তমানে এরা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী শিল্প, যেমন, অঙ্গনওয়ারি, নবার্ত, বিভিন্ন মহিলা সংগঠনের অংশীদার হয়েছে।

২। বর্তমানে এদের ক্রেতার সংখ্যা ৩২০০।

৩। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ ক্রয় করা দ্রব্যটি আবারও কিনতে উৎসাহী হয়েছে।

৪। দুটি রাজ্য --- অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থান

৫। ১০০০০ ক্রেতার পূণাঙ্গ নথিভুক্তিকরণ

৬। ১৪ জনের দলের সঙ্গে রয়েছেন তিনকোটি সদস্য --- অজৈতা শাহ ছাড়াও সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল টমলিনসন এবং ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট অফ স্ট্র্যাটেজিক মার্কেটিং অ্যান্ড ফিল্ড অপারেশান’ অক্ষিতা বক্সী।

৭। রাজস্ব পদ্ধতিঃ দ্রব্যটির বিক্রয় এবং বাজার গবেষণা ও দ্রব্যটির গুণমান নির্ণয় এবং উৎপাদনকারীর উপলব্ধির মধ্যবর্তী ব্যবধানের ওপরই নির্ভর করে কর প্রদান।

ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) ক্রেতাদের ভবিষ্যতে সাহায্যের জন্য ব্যবহার

‘ফ্রন্টিয়ার মার্কেটস’ ক্রেতা সম্পর্কিত তথ্যের নথিভুক্তিকরণ চালু করেছে। যাতে কী দ্রব্যটি তাঁরা কিনেছেন, দ্রব্যটির গুণমান তাঁদের বিচারে কী, তা সম্পর্কে পরিপূর্ণ বিবরণ নথিভুক্ত করা হয়েছে। এক এককটি দ্রব্যের জন্য এক একটি নম্বর রাখা হয়েছে। যেখানে ফোন করে কিংবা মেসেজ করে দ্রব্যটি সম্পর্কে অসুবিধার কথা জানাতে পারেন ক্রেতারা। অজৈতা শাহ জানাচ্ছেন, এর ফলে একটি দ্রব্য কিনেই সাধারণ মানুষ থেমে থাকছেন না, অনান্য দ্রব্যগুলিও কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন। সেই সঙ্গে অন্যান্য রাজ্যের মানুষ এতে উৎসাহী হয়ে উঠছেন। এখানেই থেমে থাকছে না ‘ফ্রন্টিয়ার মার্কেটস’। তাদের লক্ষ্য, আরও নানাভাবে ক্রেতাসুলভ করে ব্যবসাটিকে বাড়ানো।

Share on
close