সৌরশক্তিই ভবিষ্যৎ, ভারতীয় চিন্তাধারাকে চ্যালেঞ্জ ইনভিকটাস-এর
বছর খানেক আগের কথা। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে কলকাতায় ফিরে এল পাঁচ বন্ধু। তাঁদের লক্ষ্য ছিল এক, ব্যবসা। মুনাফা লাভের সঙ্গে দেশের উন্নয়নের কাজে আসবে যে ব্যবসা। গোল টেবিলে আধ ঘণ্টার আলোচনায় একমত হল সবাই। সিদ্ধান্ত হল, অপ্রচলিত শক্তিই হবে তাঁদের ব্যবসার উৎস। শেষপর্যন্ত সৌরশক্তিকেই হাতিয়ার করে শুরু হল উদ্যোগ। গড়ে ওঠল ‘ইনভিকটাস’।
Saturday September 19, 2015,
3 min Read
এক সময়ে যে অপ্রচলিত শক্তি নিয়ে সন্দিহান ছিলেন পাঁচ বন্ধু, নিমেষের আলোচনায় সেই জট কেটে গেল। চাকরি ছেড়ে স্থায়ীভাবে নিজেদের ‘বস’ হয়ে উঠলেন তাঁরা। কলকাতার সৌরশক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন অসুবিধার সমাধান শুরু করল ‘ইনভিকটাস’। কাজের পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পেল পরিকাঠামো। কিছু সময়েই পাঁচ বন্ধুর দল বেড়ে দাঁড়াল বাইশে। যাদের মধ্যে রয়েছেন ৪০ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দুই ব্যক্তি। এঁরা দু’জনেই অপ্রচলিত শক্তিক্ষেত্রে কাজ করায় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় অগ্রণী ভূমিকা নেন। কোম্পানির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অভিষেক প্রতাপ সিং জানিয়েছেন, ‘‘ইতিমধ্যেই কলকাতায় সৌরশক্তির মাধ্যমে বহু প্রজেক্ট গড়া হয়েছে। ছাদের ওপর ‘সোলার প্যানেল’ বসিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা হচ্ছে। এসবই সৌরশক্তির ফসল।’’ তবে কোম্পানির কর্মকাণ্ডের পরিধি বাড়লেও রাজ্যে অপ্রচলিত শক্তির বাজার নিয়ে খুশি নন অভিষেক। তাঁর মতে, ‘‘রাজ্য সরকার উদ্যোগ নিলেও এখনও সেভাবে অপ্রচলিত শক্তি গ্রহণে রাজ্যবাসী সাড়া দেননি। অথচ দেশের ছোট, বড় শহরে অপ্রচলিত শক্তি এখন জীবনযাত্রার অঙ্গ হয়ে উঠছে। মূলত, কেন্দ্রীয় সরকারের অপ্রচলিত শক্তিকে কাজে লাগানোর ‘গাইডলাইন’-ই মেনে চলছে রাজ্যগুলো। পশ্চিমবঙ্গেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সল্টলেক, কলকাতা ও নিউটাউনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এই অঞ্চলে বাড়ির ছাদে সৌরকোষ (সোলার প্যানেল) বসানো হচ্ছে।’’
তবে একটা বিষয় ভাববার আছে। প্রচলিত শক্তি ছেড়ে কেনই বা অপ্রচলিত শক্তির দিকে ঝুঁকবে মানুষ? এর ব্যাখ্যাও রয়েছে ‘ইনভিকটাস’–এর কাছে। কোম্পানি বলছে, প্রচলিত শক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রচুর ডিজেল লাগে। কর্পোরেট সংস্থাগুলি বিদ্যুতের প্লান্ট গড়তে গিয়ে ডিজেল নির্ভর হয়ে উঠেছে। আগে ডিজেল সস্তা হওয়ায় শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ডিজেল ব্যবহার হত। এখন দেখা যাচ্ছে, ক্রমশই বাজারে ডিজেলের দাম উর্ধ্বমুখী। সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে আগামী দিনে ডিজেলের মূল্য আর নিয়ন্ত্রণ রাখা হবে না। ফলে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে অপ্রচলিত শক্তির দিকেই বেশি ঝুঁকবে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। ভাবা হচ্ছে, প্রতিনিয়ত পরিবেশে ডিজেলের ক্ষতিকারক প্রভাবের দিকটাও।
তবে ইতিবাচক দিক থাকলেও ‘সোলার প্যানেল’ বসানোর আগে বহুবার ভাবেন সাধারণ মানুষ। মূলত, সোলার প্যানেলের দাম বেশি হওয়ায় চিরাচরিত শক্তির পথেই হাঁটেন তাঁরা। অনেক সময় সোলার প্যানেলের ওপর বিনিয়োকগের থেকে শেয়ার বাজার বা সোনা কেনাকেই বেশি শ্রেয় বলে মনে করেন গ্রাহকরা। দেশবাসীর এই চিন্তাধারায় পরিবর্তন ঘটাতে চায় ‘ইনভিকটাস’। ইতিমধ্যেই সে কারণে কাজ শুরু করে দিয়েছে তারা। মডেল হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে কলকাতা, রাজারহাট ও নিউটাউনকে।
সৌরশক্তি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে প্রচার শুরু করেছে ওই কোম্পানি। কীভাবে সৌরশক্তি বিদ্যুতের মাশুল কমায় ও পরিবেশ রক্ষা করে, তা মানুষকে বোঝানো হচ্ছে। ‘ইনভিকটাস’ এর পরিকল্পনা, আগামী দিনে রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্ত ক্ষেত্র, হাসপাতাল, স্কুলগুলিকে সৌর বিদ্যুৎ চালিত শক্তির আওতায় আনা। এখানেই শেষ নয়, ভবিষ্যতে বেঙ্গালুরু ও দিল্লিতে ব্যবসা ছড়াতে চায় ‘ইনভিকটাস’। কিন্তু এতে যা পুঁজির প্রয়োজন, তা কোম্পানির হাতে নেই। আপাতত এ রাজ্যকেই পাখির চোখ করছে তারা। আর তাদের পরিচিতরা ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা বললে পাঁচ বন্ধুর মুখে একই বুলি ‘‘দাঁড়াও পথিকবর, এখনও যে বহু পথ আছে বাকি।’’