দারুণ হিট নীলকমল পালের ফাইবারের টেরাকোটা

দারুণ হিট নীলকমল পালের ফাইবারের টেরাকোটা

Friday January 29, 2016,

3 min Read

কথায় বলে সোনার পাথর বাটি। অলীক যা হয় না। নীলকমল পাল বানিয়ে দেখিয়ে দিলেন কেমন ভাবে ফাইবার দিয়ে টেরাকোটার কাজ করা যায়। শুধু তাই নয় এসব সামগ্রীর দারুণ চাহিদা। কারণ এক তো হালকা। তার ওপর ভেঙে যাওয়ার ভয় নেই। মাটি নয় তাই দীর্ঘদিন টিকে যাবে নকল টেরাকোটার কারুকার্য। শুধু কি তাই! আপনার প্রিয়জনের স্ট্যাচু বানাতে চান? চাই শুধু একটা ফটো। তা স্পষ্ট হোক বা অস্পষ্ট। তা দেখে ডাইস তৈরি করে তার উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবলীলায় স্ট্যাচু বা মূর্তি তৈরি করে দিতে পারেন নদীয়ার কৃষ্ণনগরের ঘুরনি গোয়ালা পাড়ার এই নীলকমল পাল।

image


তার হাতের যাদুতে তৈরি ফাইবারের স্ট্যাচু বাননোর লাইন পড়ছে রীতিমত। পাশাপাশি তিনি তৈরি করেন চোখ ধাঁধানো শিল্পীত ওয়াল হ্যাঙ্গিং। ১২ জন কর্মীকে নিয়ে চাহিদা যোগানের এই অঙ্ক সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন নীলকমল বাবু।

কৃষ্ণনগর মৃৎ শিল্পের জন্য বিখ্যাত। অন্যদের মতো নীলকমল পালও মৃৎ শিল্পের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন। বছরের পুজোর সময় ছাড়া রোজগারের সুযোগ নেই মৃৎ শিল্পীদের । সমস্যা থাকলেও প্রথা ভেঙে কেউ বের হওয়ার সাহস দেখান না। তবে অনেকেই থাকেন যারা নতুন কিছু করতে চান। তাদের তালিকায় অবশ্যই নীলকমল বাবুর নাম থাকবে। মৃৎ শিল্পের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির সংমিশ্রণে যে বিপ্লব ঘটতে পারে তা করে দেখিয়েছেন নীলকমল পাল।

নীলকমল বাবুর এই শিল্পের নাম টেরাকোটা ফাইবার শিল্প। দেখে বোঝার উপায় নেই এটা ফাইবার, মনে হবে পোড়া মাটির শিল্প। আইডিয়াটা এসেছিল ১৯৯৭ সালে। ৯৮ এ পথ চলা শুরু। প্রথমে মাটি দিয়ে মডেল তৈরি করে তার উপর প্লাস্টার প্যারিস দিয়ে ডাইস তৈরি করা হয়। কলকাতা থেকে ড্রাম ভর্তি লিকুইড ফাইবার আনা হয়। সেই ফাইবারে কেমিক্যাল মিশিয়ে ডাইসে ঢালা হয়। ১০ থেকে ১২ মিনিটেই মডেল রেডি হয়ে যায়। এরপর রঙ তুলির সাহায্যে প্রাণবন্ত করা হয় সেই শিল্পকে।

দিনদিন চাহিদা বাড়ছে নীলকমল বাবুর প্রডাক্টের। বিশেষত যে হোলসেল ব্যবসায়ীরা মাটির শিল্প এখন থেকে কিনে বাইরে বিক্রি করতেন তাদের কাছে ফাইবার শিল্প অনেক বেশি লাভজনক হয়ে উঠেছে। কারণ ওজন হালকা হওয়ায় বাইরে এই শিল্প পাঠাতে খরচ হচ্ছে অনেক কম। ভেঙে যাওয়ারও সম্ভাবনা নেই। চাহিদা বাড়লেও যোগান দিতে পারছেন না নীলকমল বাবু। কারণ প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ টির বেশি মডেল তৈরি করা সম্ভব নয়।

এবছর নীলকমলবাবুর নতুন কনসেপ্ট ছবি দেখে স্ট্যাচু তৈরি। পাল টেরাকোটা র ব্যানারে এই ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে। অনেকেই এখন প্রিয়জনের স্ট্যাচু ঘরে রেখে দিতে চায়। মাটি বা সিমেন্টের হলে তার রক্ষণাবেক্ষণ অনেক কঠিন। কিন্তু নীলকমল বাবুর তৈরি ফাইবার স্ট্যাচু অনেক কমফোর্টেবল। বাজার ধরতে দাম সাধ্যের মধ্যেই রেখেছেন। নীলকমল বাবুর কাছে কাজ শিখে এখন এই পাড়ার অনেকেই এই কাজে যুক্ত হয়েছেন। মাটির কাজ করে যা রোজগার করতেন তার থেকে অনেক বেশিই আয় করছেন তাঁরা। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে এখানকার শিল্প পাড়ি দিচ্ছে ভিন দেশে। একদিন প্রথা ভেঙে নতুন কিছু করার যে সাহস দেখিয়ে ছিলেন নীলকমল বাবু আজ তা অন্যদেরও ভাবতে শিখিয়েছে। সবাই কে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে।