গলি থেকে রাজপথের কাহিনী - Athena Infonomics

গলি থেকে রাজপথের কাহিনী - Athena Infonomics

Tuesday December 08, 2015,

5 min Read

‘নিজের বয়সটা যখন বছর চল্লিশেক হবে, তখন পেছনে ফিরে তাকানোর কোন মানেই হয়না। তাই যা করার সেটা সময় থাকতে করাই ভালো।’ – ইওর স্টোরির সাথে কথা বলার সময় এইভাবেই শুরু করলেন দীপা কার্তিকেয়ন আর তার বন্ধু বিজয় ভালাকি। চেন্নাইয়ের লয়লা কলেজ থেকে ইকনমিক্সে মাস্টার ডিগ্রি পাশ করে যখন আরও উচ্চ শিক্ষার কথা ভাবছেন, তখনই দুজনের মনে হয় যে কোন একটা বিষয় নিয়ে যদি কেউ এক হাজার ঘণ্টা ব্যয় করে তবে সে সেই বিষয়ে পারদর্শী হবেন নিশ্চয়ই কিন্তু শিক্ষাকে যদি সঠিক জায়গায় ব্যাবহার করা না যায় তবে সেই শিক্ষার কোন উপকারিতা নেই। আর এসব ভাবতে ভাবতেই তারা ঠিক করে ফেলে যে আর সবার মতো আরও উচ্চশিক্ষায় না গিয়ে যদি কিছু একটা নতুন শুরু করা যায়। Athena Infonomics - চার দেওয়ালের একটা ছোট ঘর থেকেই যাত্রা শুরু করেছিল দুই বন্ধু, মার্কেট রিসার্চ আর পলিসি নির্ধারণ করাই এদের কাজ মুলত। সময়টা ২০১০, জীবনের পরবর্তীতে কি করা যায়, এইসব ভেবে যখন প্রায় দিশেহারা অবস্থা, তখনই ওদের সাথে আলাপ হয় একজন মানুষের, যিনি ওদের আঁকাবাঁকা পথটা অনেকটা মসৃণ করে দিয়েছিল। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করেছিলেন তিনি – এস. নারায়ণ। মানুষটা অনেকটা ভালোবেসেই যুক্ত হয়েছিল দুই বন্ধুর এই কর্মযজ্ঞে পরামর্শদাতা হিসাবে।

দীপা কার্তিকেয়ন

দীপা কার্তিকেয়ন


ইওর স্টোরিকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় দীপা বলছিলেন, Athena Infonomics এর শুরুর সময়ের গল্পটা। চেন্নাই এর মতো শহরে একটা নতুন কাজ শুরু করা খুব একটা সহজ ছিলোনা ওদের জন্য। তথ্য-প্রযুক্তির যুগে দাঁড়িয়ে মার্কেট রিসার্চের প্রয়োজনীয়তা আছে আর সেই চাহিদাটাকে কাজে লাগানই ছিল তাদের মুল উদ্দেশ্য। টার্গেট কাস্টমার বেস বানানো থেকে শুরু করে মার্কেটিং, প্রথম অবস্থায় প্রায় সবটাই করতে হয়েছিল তাদের নিজেদেরকেই। ইকনমিক্সের জ্ঞান তাদের এই কাজে অনেকটা সাহায্য করলেও তাদের ফার্ম তখনো সেভাবে পরিচিত হয়নি শহরে তাই বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়াটাই ছিল তাদের প্রধান উদ্দেশ্য।

বিজয় ভালাকি

বিজয় ভালাকি


Athena Infonomics প্রধানত এনার্জি, আরবান ডেভেলপমেন্ট আর শিক্ষার মতো সেক্টর গুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছিল। এরপর আস্তে আস্তে আরও বিভিন্ন কাজ পেতে শুরু করে এরা। শেষ তিন বছরে প্রায় ষাটখানা প্রোজেক্টের সাথে কাজ করেছেন দীপারা। প্রধানমন্ত্রী উপদেশক বোর্ডের তত্ত্বাবধানে পি.পি.পি (পাব্লিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মডেলের মূল্যায়ন করা থেকে শুরু করে, রাওান্দা ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ট্যুরিজ্‌ম বা ওয়াটারসাপ্লাই এর ক্ষেত্রে কাস্টমারের ফিডব্যাক ইনডেক্স তৈরি করা, সবরকম প্রোজেক্টই করেছেন এরা। প্রথম প্রোজেক্টের স্মৃতি আওরাতে গিয়ে দীপা মনে করিয়ে দেয় যে ‘রিসার্চের মতো কাজে আসলে কাজ করার পদ্ধতিটাই প্রধান। বিভিন্ন পরিসংখ্যান কে কাজে লাগিয়ে সঠিক মুল্যায়ন করে সেগুলকে সঠিক ফর্মুলাতে ব্যাবহার করে উত্তর বের করাতেই এই কাজের সাফল্য। আর এগুলো খুব সফলভাবেই করেছে এই দুই মেয়ে। ক্রমশঃ দেশের বাইরেও অনেক কাজ পেতে শুরু করে এরা। জাপান, কোরিয়া থেকে শুরু করে অনেক এশিয়ান কান্ট্রিতেই আস্তে আস্তে কাজের সুযোগ আসছে তাদের কাছে। আসলে অঙ্কের ভাষায় কঠিন সমস্যার সবথেকে সঠিক সমাধান করে দেওয়াই হল তাদের কাজ, আর ইকনমিক্স নিয়ে পড়াশুনা করার সুবাদে এই কাজটাতে তারা বেশ পারদর্শী, যা তাদের সফলভাবে এগিয়ে যেতে অনেকটা সাহায্য করেছে।

image


মার্কেট রিসার্চ নিয়ে কাজ শুরু করলেও বাজারের চাহিদা অনুযায়ী, এই কাজের সাথে সাথে কনসালটিং এজেন্ট হিসাবে কাজ করতে শুরু করে Athena Infonomics। আসলে তারা উপলব্ধি করে যে এই বাজারে পরামর্শদাতার চাহিদা বেশ, আর সেটা যদি অর্থনৈতিক পরামর্শ হয় তাহলে তো আর কথাই নেই। তাই এই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় স্কিল-সেট আয়ত্ত করতে থাকে তারা। যদিও একটা প্রচলিত ধারণা আছে যে এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে গেলে অভিজ্ঞতাটা একটা বড় সম্পদ। চুলে পাক ধরলে তবেই একজন বিশেষজ্ঞ পরামর্শদাতা হওয়া সম্ভব কিন্তু এই ভুল ধারণাটাকে বদলে দেওয়ার ইচ্ছা ছিল দীপা, বিজয় দের। তারা সুযোগ করে দিয়েছে অনেক নতুন প্রতিভাকে তাদের সাথে কাজ করার জন্য। কর্মী নিয়োগের সময়ই এই বিষয়টা তারা আলোচনা করে নেয় যে প্রচলিত ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে, চ্যালেঞ্জের সাথে কাজ করাটাই Athena Infonomics এর কাজের বৈশিষ্ট। তাই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে খুব একটা কিছু অসুবিধা হয়না তাদের কারণ নতুন জায়গায় নিজের মতো করে ভালো কাজ করার ইচ্ছাটাই হল আসল, আজকের প্রজন্মের কাছে। যদিও প্রাথমিক অবস্থায় যে কোন কোম্পানির কিছু কিছু অসুবিধা মোকাবিলা করতেই হয়।

মূলধন – প্রাথমিক ধাক্কা সামলে এখন Athena Infonomics নিজের একটা জায়গা তৈরি করতে পেরেছে এই ইন্ডাস্ট্রিতে। শুরুর দিকে মূলধন জোগাড় করাটা একটা সত্যিকারের সমস্যা হয়েছিল তাদের জন্য। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আজকে তারা উঠে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর আয় প্রায় দ্বিগুন হচ্ছে এখন আর এর ফলে তাদের সাফল্যের রাস্তাটাও মসৃণ হচ্ছে ক্রমশ।

সাংগঠনিক প্রক্রিয়া – প্রথমদিকে কাজ করার প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ আসুবিধা হয়েছিল। নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে অফিস পরিচালনা সবেতেই অভিজ্ঞতার অভাব চোখে পরার মতো ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে সেটা একটা সিস্টেমের আওতায় এসে গেছে।

পাবলিক পলিসি স্পেস – আসলে এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে গেলে প্রথম যোগ্যতা হল ধৈর্য। এই ধৈর্য যদি থাকে তবেই এখানে টিকে থাকা সম্ভব আর সাথে কাজ করার জন্য পছন্দমতো পার্টনার খুব প্রয়োজন।

ইওর স্টোরির সাথে কথা বলার সময় দীপা তার এই কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা আমাদের বলছিলেন,

অদূরদর্শিতা – কোন ব্যাবসা শুরু করার সময় অনেক মানুষের সান্নিধ্যে আসা যায় কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে তাদের সাথে আর যোগাযোগ নাও হতে পারে। কিন্তু দীপা মনে করেন যে প্রথম দিন থেকে যাদের সাথে কাজ শুরু হয়েছিল তাদের সবাইকেই মনে রাখা দরকার, তাদের অবদান স্বীকার করা দরকার।

নতুনকে আবিষ্কার – প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে নতুন কিছুকে আবিষ্কার করা দরকার। উদাহরন স্বরুপ তিনি বলছিলেন যে আর.টি.আই যেমন এখন অনেক মানুষকে সচেতন করে তুলেছে। সাধারণ মানুষ এখন বিভিন্ন সরকারি কিংবা বেসরকারি কাজের পরিসংখ্যান জানতে চায় আর এই চাহিদা তাদের কাজের তাগিদকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। নতুন নতুন সিস্টেম আনতে হচ্ছে কাজের সুবিধার জন্য।

বয়সের বাঁধা - Athena Infonomics এটা প্রমাণ করে দিয়েছে যে সঠিক প্রতিভা এবং নিষ্ঠা সহকারে কাজ করলে কখনই কোন বাঁধা ধরা নিয়ম কাজের গতিকে বেঁধে রাখতে পারেনা।

প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট – ছোট বড় যেকোনো প্রোজেক্টের ক্ষেত্রেই ম্যানেজমেন্টের একটা বড় ভুমিকা থাকে। অর্থনৈতিক যোগান, ভালো কাজের লোক আর সঠিক পরিকল্পনা খুব সহজেই একটা প্রোজেক্টকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে উন্নতির পথে।

আজ Athena Infonomics যা, তার পেছনে অনুপ্রেরণা বা আরও এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্রটা দীপা শিখে নিয়েছিল আর বুঝেছিল যে তার এই ঘরোয়া পলিসি কন্সালটিং ফার্ম কে সে আরও বড় আরও উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতেই হবে তার কাজের মাধ্যমে। দীপা বলছিলেন, যে সরলতা নিয়ে তারা কাজ করে চলেছে সেইভাবেই এগিয়ে যেতে চায় আরও অনেকদূর। এখন তাদের কাছে চ্যালেঞ্জ একটাই আর সেটা হল Athena Infonomics কে একটা ইন্সটিটিউশন তৈরি করা যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিভারা আসবে এবং তাদের সাথে হাতে হাত রেখে কাজ করবে আর সাথে তাদের স্বপ্ন একটা বাস্তব রুপ পাবে।

( লেখক – আলক সনি , অনুবাদ – নভজিত গাঙ্গুলী )