রিয়েল এস্টেট নিয়ে অজস্র প্রশ্নের উত্তর ‘প্রপচিল’

রিয়েল এস্টেট সম্পর্কে আমরা কতটুকুই বা বুঝি? বড় বড় দালালদের বড়সড় টাকার খেলা চলে এর মধ্যে। টাকা দিয়েও ফ্ল্যাট পাননি এমন উদাহরণও বিরল নয়। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের ফাঁদে পড়ে নিজেদর স্বপ্নের বাড়ি কিনতে গিয়ে আমরা অনেক সময়ই ঠকে যাই। একই অবস্থা হয়েছিল এক সেনা অফিসারের স্ত্রী। একটি বাড়ি বিক্রির পর নতুন বাড়ি কিনতে গিয়ে কত ধানে কত চাল বুঝে গিয়েছেলিন তাঁরা। প্রতারকদের ফাঁদে পড়েও বেরিয়ে আসার যে পথ তারা পেয়েছিলেন সেখান থেকে তৈরি হল এক নতুন পথ।

রিয়েল এস্টেট নিয়ে অজস্র প্রশ্নের উত্তর ‘প্রপচিল’

Sunday September 20, 2015,

3 min Read

মনিকা কানোয়ার এবং তাঁর স্বামী দিল্লিতে তাঁদের পূর্ব পুরুষের একটি বাড়ি বিক্রি করার পরিকল্পনা নেন। এমন খবর পাওয়া মাত্রই দালালরা তাঁদেরকে ছেঁকে ধরে। এক দালাল থেকে অন্য দালালের চক্করে পড়ে হাঁফিয়ে উঠছিলেন ওই দম্পতি। কিন্তু বাড়ি বিক্রির ব্যাপারে কোথাও সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পর তাঁরা ওই বসত বিক্রি করতে সক্ষম হন। এরপর শুরু হয় আর এক সমস্যা। কানোয়ার দম্পতি ভেবেছিলেন ওই বাড়ি বিক্রির টাকা গুরগাঁওতে নতুন সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করতে চাইলেন। কিন্তু এই অভিজ্ঞতাও তাদের কাছে সুখকর ছিল না। রিয়েল এস্টেট সম্পর্কে কোনও জ্ঞান না থাকা মনিকাদেবী যেন অকুল পাথারে পড়লেন। কিন্তু শেষমেশ সৌভাগ্যবশত তাঁরা ঠিকমতো খোঁজখবর পান এবং বিনিয়োগ করেন। “ সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হল, ইন্টারনেট ও অন্যান্য মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাবেন। কিন্তু কোথাও কোনওরকম বিশ্লেষণ বা তুলনামূলক আলোচনা পাওয়া যাবে না। এখান থেকেই ‘প্রপচিল.কম’-এর ভাবনা আসে। এর মূল উদ্দেশ্যই হল ক্রেতাকে বিনিয়োগের আগে সঠিক তথ্য প্রদান”, জানালেন মনিকা দেবী। এভাবেই একটা ছোট্ট প্রজেক্ট দিয়ে তাদের পথ চলা শুরু হয় ২০১৩ সালের অক্টোবরে। আর নিজেদের প্রথম অফিসের উদ্বোধন হয় ২০১৪-র ফেব্রুয়ারিতে।

রিয়েল এস্টেটে একজন মহিলা হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা

বছর চল্লিশের মনিকাদেবীর জন্যে এটা খুবই কঠিন একটা বিষয় ছিল। তার উপর রিয়েল এস্টেট সম্পর্কে কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতাই তাঁর ছিল না। এই সেক্টরে প্রথমত, মহিলাদেরকে কোনওরকম গুরুত্বই দেওয়া হয় না। দ্বিতীয়ত, প্রথাগত চিন্তাধারা অনুযায়ী রিয়েল এস্টেটে মহিলাদেরকে নেহাতই অক্ষম বলে মনে করা হয়।মনিকাদেবী যখন নতুন ময়দানে নামেন সে সময় বিভিন্ন আইটি সেক্টরগুলো নবাগতদের সঙ্গে কাজ করতে চাইত না। বরং তারা বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির ব্যানারে কাজ করতেই চাইত।


image


আর এসব চরাই উতরাই পেরিয়ে রিয়েল এস্টেটের জগতে মনিকাদেবীর মতো মহিলারা নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। প্রপচিলে মনিকাদেবী ও তাঁর স্বামীর কাজই হল বিভিন্ন স্থাবর সম্পত্তির মূল্যের তুলনা দেওয়া এবং ইচ্ছুক বিনিয়োগকারীর কাছে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পৌঁছে দেওয়া। কেবলমাত্র মূল্যই নয়, জায়গার পরিমাণ, অবস্থান এবং আরও বিবিধ বিষয়ে তুলনামূলক আলোচনা করে দেওয়া। এক কথায় নিজের বাড়ি কিনতে গিয়ে ক্রেতারা যাতে কোনওভাবেই আর হোঁচট না খান তার ব্যবস্থা সেরে রাখা।

প্রপচিল.কম কী?

শুরুর দিকে প্রথম এক বছর মনিকাদেবী এই নিয়ে বিস্তর গবেষনা চালান এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে বাছাই করতে থাকেন। যা পরবর্তীতে দাম নির্ধারন ও তুলনামূলক বিষয়ের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। এইভাবে পরবর্তী এক বছর কেটে যায় নিজেদের ক্ষেত্র তৈরি করতে ও সংস্থার ভিত মজবুত করতে। নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার পর প্রথম পর্যায় চালু হল ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং দ্বিতীয় পর্যায় ২০১৫-র জুলাইয়ে শুরু হয়।

দেশ জুড়ে ছড়িয়ে প্রপচিলের কাজ। গুরগাঁও, নয়ডা, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, ভোপাল, ইন্দোর, ভিয়ারি, নিমরানার মতো জায়গায় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছ প্রপচিলের বহুতল। দেশের কোনায় কোনায় তারা ছড়িয়ে পড়তে চায়।

শিক্ষক থেকে উদ্যোগপতি


image


বিজ্ঞানে স্নাতক মনিকাদেবী, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর কিছু কোর্স করেছেন বটে কিন্তু কোনওদিনই নিজের কেরিয়ার নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার সুযোগ পাননি। স্বামী সেনাবাহিনীতে থাকার সুবাদে তাঁকেও যাযাবরের মতো ঘুরতে হত। প্রায় ১৫ বছর তিনি বিভিন্ন আর্মি স্কুলে পড়িয়েছেন। মনিকাদেবীর জন্ম উত্তরাখণ্ডের রুরকিতে। তাঁর পরিবার এখনও সেখানেই থাকে। তাঁর বাবার ওষুধের ব্যবসা ছিল। ছোটো থেকেই তিনি তাঁর বাবাকে ব্যবসা করতে দেখেই বড় হয়েছেন। কিন্তু স্বপ্নেও কোনওদিন ভাবেননি যে একদিন তিনি নিজেই ব্যবসা শুরু করবেন। “আমাদের যাত্রাপথে আমরা এটুকু শিখেছি যে, বয়সে কিছুই যায় আসে না। মনের ইচ্ছেটাই আসল। আবার অভিজ্ঞতা, পরিপক্বতা, আবেগের স্থিরতা এগুলো সময় এবং বয়সের সঙ্গেই আসে যা কোনও উদ্যোগ শুরু করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ”, জানালেন মনিকাদেবী।

প্রপচিলের ডিরেক্টর হিসাবে মনিকাদেবী ও তাঁর স্বামী বিভিন্ন শহরের যান, তাদের প্রজেক্টের জায়গা নির্বাচন করার জন্যে। কানোয়ার দম্পতি সাধারণত এক সপ্তাহ সেখানে থাকেন এবং তার মধ্যেই তাঁরা মূল কাজগুলো সেরে ফেলেন। পরিশ্রম ও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে নিজের জীবনটাকে বদলে ফেলা যায়, মনিকাদেবী তার অন্যতম উদাহরণ। বর্তমানে তাঁরা অ্যাপার্টমেন্ট সংক্রান্ত তথ্যমূলক কাজও করছেন।