গ্রাহকের সুবিধামতো জায়গায় এবং নির্ধারিত সময়ে পরিষেবা। বিশেষ কোনও পরিষেবার বুকিং থেকে ডেলিভারি, সবই ঘটে চলেছে চাহিদার দিকে নজর রেখে। সাম্প্রতিককালে ভারতের কয়েকটি শহরে এই On demand-রই রমরমা। গাড়ির চালক, পোশাক তৈরির কারিগর, কলের মিস্ত্রি, টেকনিশিয়ান্স, সবই এখন এই বৃত্তের একটা করে অংশ। ফেল কড়ি, মাখো তেল আগেও ছিল। এখন সেই তেল মাখার জন্য আপনাকে বাইরে দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না। যা করার তা পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাই ঘরে বা অফিসে গিয়ে দক্ষিণার বিনিময়ে করে দেবে।
Vyomo-র আত্মপ্রকাশ
শুধু কি কলের মিস্ত্রি বা ড্রাইভারেই সীমাবদ্ধ এই পরিষেবা? শুরুতে হয়তো তাই ছিল। এখন কিন্তু Beauty and Wellness-এর অন ডিমান্ড দুনিয়াও উর্ধ্বমুখী। ভারতে যে ব্যবসার সম্ভাব্য বাজার প্রায় ৪৮০ কোটি মার্কিন ডলার। যে বাজার এতটা চওড়া সেখানে উৎসাহ বাড়াটাই স্বাভাবিক। ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছে VanityCube, Bulbul কিংবা BigStylist-এর মতো সংস্থা। সেই তালিকাতেই সংযোজন বেঙ্গালুরুতে গড়া ওঠা স্টার্টআপ Vyomo. দুই ক্লাশমেটের ব্রেনচাইল্ড। London Business School-এ পড়ার সময়েই এমন একটি বিষয়ের কথা ভাবেন অভিনব খারে এবং পুণম মারওয়া। সেই ভাবনাকে বাস্তব রূপ দিতেই স্যালোন এবং রূপচর্চার বিভিন্ন পসরা নিয়ে এসে গিয়েছে সংস্থাটি। ২০১৫ সালের মে মাসে প্রথমবাবের জন্য পরিষেবা সংক্রান্ত মোবাইল অ্যাপটি বাজারে ছেড়েছিল Vyomo. প্রথম ৪৫ দিনের মধ্যে যা ডাউনলোড করেন প্রায় ৫৩ হাজার কাস্টমার।
Vyomo পরিষেবার নেটওয়ার্ক
বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লক্ষ-লক্ষ মানুষ। তাদের মধ্যে একাংশ পরিষেবা নিতে চান। এত সংখ্যক মানুষের কাছে কীভাবে পরিষেবা পৌঁছে দেয় Vyomo? এখানেই ব্যবসায়িক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে সংস্থাটি। মুম্বই, দিল্লি ও বেঙ্গালুরুর তিন হাজার স্যালোন ও স্পা-এর সঙ্গে চুক্তি করে নিয়েছে Vyomo. এছাড়া সেই তালিকায় আছেন প্রায় দেড় হাজার বিউটিশিয়ানও। কোনও একজন গ্রাহক কোনও একটি বিশেষ এলাকা থেকে পরিষেবা চাওয়া মাত্রই নিকটবর্তী স্যালোন বা স্পা থেকে লোক পৌঁছে যাচ্ছে। দেখা গিয়েছে অ্যাপসটি যারা ডাউনলোড করেছেন তার ৩০ শতাংশই (সংখ্যায় প্রায় ১৭ হাজার) সংস্থার প্রকৃত গ্রাহক। Vyomo-এর নেটওয়ার্কে থেকে লাভ হচ্ছে স্যালোন, স্পা এবং বিউটিশিয়ানদেরও। ফ্রি ল্যান্সিংয়ের ভিত্তিতে কাজ দেওয়া হয় এখানে। ফলে যত বেশি কাজ তত বেশি রোজগার। একজন বিউটিশিয়ানের মাসিক রোজগার তাই ১০-১২ হাজারে সীমাবদ্ধ থাকছে না। ক্ষেত্রবিশেষে তা পৌঁছে যেতে পারে ৫০ হাজারেও। এই রেভিনিউ মডেল আকর্ষণ করেছে বিউটিশিয়ানদেরও। তাঁরাও একইভাবে উৎসাহিত হচ্ছেন ভালো পরিষেবা দিতে। এব্যাপারে একটি মজার কথা বলেছেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা তথা সিইও অভিনব খারে। তাঁর কথায়," স্যালোন অ্যাপয়নমেন্ট বুক করার জন্য আমরা গ্রাহকদের সুযোগ দিই। আর তা না হলে পুরো স্যালোনটাকেই গ্রাহকের বাড়িতে পৌঁছে দিই"।
কাস্টমার ফিডব্যাক
এই ধরনের পরিষেবায় গ্রাহকের মতামতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে সংস্থাটি। অর্থের বিনিময়ে গ্রাহক সার্ভিস নিয়েছেন এবং এটা এমন এক পরিষেবা যা একবার বা দু'বারে সীমাবদ্ধ থাকে না। ফলে গ্রাহক সন্তুষ্ঠ না হলে তিনি দ্বিতীয়বার সাড়া দেবেন না। এজন্য তাই কল সেন্টার ইন্টারঅ্যাকশন থেকে নিয়মিত গ্রাহকের ফিডব্যাক নিয়ে থাকে সংস্থা। টার্গেট অডিয়েন্সের কথা মাথায় রেখে সর্বক্ষণ সমীক্ষাও করা হয়। এই পরিষেবায় আর একটি জিনিসকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন অভিনব। তা হল কথার দাম।