দেশের যৌবন শুনছে বিবেকের উপদেশ

দেশের যৌবন শুনছে বিবেকের উপদেশ

Wednesday September 02, 2015,

4 min Read

সেক্স নিয়ে কথা বলা তো দূর, ভাবাও যেন পাপ। নানা ট্যাবু, ঢাকঢাক গুড়গুড় অস্থির করে তোলে বয়সন্ধিতে সদ্য পা রাখা ছেলে-মেয়েদের। বাবা-মায়ের কাছে এইসব প্রসঙ্গ তুলতে বাধো বাধো ঠেকে। আসলে আমাদের সমাজ ব্যবস্থাই তুলে রেখেছে এই বাধার পাচিঁল। কত কিছু জিজ্ঞাস্য থাকে, অথচ একটা অস্বস্তি পিছু টানে সবসময়। তাহলে উপায়? টিন এজারদের জন্য এমনই নানা প্রশ্নের উত্তর নিয়ে হাজির ‘এডভাইস আড্ডা’। শুধু সেক্স নয়, পড়াশোনা, স্বাস্থ্য, সম্পর্ক যে কোনও ধরণের সমস্যার সমাধান নিয়ে তৈরি AdviceAdda.com.


image


বিবেক সত্য মিত্রম। একজন প্রাক্তন সাংবাদিক, যিনি একসময় রিপোর্টার, আউটপুড হেড, চ্যানেল হেড হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন পিটিআই, স্টার নিউজ, সাহারা সময়, ইন্ডিয়া নিউজ এবং এনডিব্লউএসের মতো নানা সংস্থায়। তাঁরই মস্তিষ্ক প্রসূত ‘এডভাইস আড্ডা’। AdviceAdda.com একটা পোর্টাল যেখানে টিন এজারদের অস্বস্তি,সঙ্কট নানা সমস্যার বিনা খরচে সমাধানের সুলুক দেবেন বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা।

বিবেক তাঁর এই নতুন পথের যাত্রাকে বলেন, ‘চূড়ান্ত সফল’।তার সঙ্গে আবার যোগ করে দেন, ‘আমি আমার দেশের মানুষের জন্য,দেশের জন্য, আমার প্রজন্মের জন্য সমাজ সেবা করতে চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম মুক্ত মনে প্রশ্ন করে চিন্তা দূর করতে যুব প্রজন্মকে সাহায্য করব’। বিবেকের ব্যাখ্যা, ‘বেশিরভাগ টিনএজাররা একই রকম শারীরিক, মানসিক, মনস্তাত্ত্বিক, আবেগজনিত নানা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়। এই সময় নানা প্রশ্ন মনে আসে যার উত্তর অজানাই থেকে যায়’। শেষ পর্যন্ত এইসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেতে ব্যার্থ হলে ভুল ধারণা তৈরি হয় নিজেদের মধ্যে, যেটা পরে গিয়ে ব্যক্তিগত এবং কর্মজীবনে প্রভাব ফেলে।

টিম আড্ডা

টিম আড্ডা


‘ভারতে এখনও সেক্স বা যৌনতা নিয়ে খুল্লমখুল্লা আলোচনা হয় না। হাজার সমস্যা থাকলেও, না। সবরকম সমস্যা নিয়ে কথা বলতে টিন এজারদের পাশে হাজির AdviceAdda.com। আমরা যৌনতাকে আনন্দের মাধ্যম হিসেবে নয়, এর শারীরিক দিকটি নিয়ে নানা তথ্য আদান প্রদান করি’,বলেন বিবেক। ওয়েব সাইটটির মাধ্যমে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সেক্সোলজিস্ট, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, কেরিয়ার কাউন্সেলর, প্রেরণা দেন এমন বক্তা, সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ, ফিটনেস ট্রেনার, আর্থিক উপদেষ্টা, আইনজীবীদের পরামর্শ পাওয়া যাবে।‘একসঙ্গে এত বিশেষজ্ঞকে পেয়ে যাওয়ায় ইউসার বা গ্রাহক যেকোনও বিষয়ে যেকোনও তথ্য সহজে পেয়ে যান’, বলেন বিবেক। এই পরিষেবা একেবারে নিখরচায় এবং যারা পরামর্শ চান অর্থাৎ ইউসারের পরিচয় গোপন রাখা হয়। বিবেকের মতে, ভারতে ‘এডভাইস আড্ডা’র মতো প্ল্যাটফর্ম এই প্রথম। ‘অন্যান্য ওয়েবসাইটগুলিও একই পরিষেবা দেয়। কিন্তু এই বাণিজ্যিক সাইটগুলি পরামর্শের বিনিময়ে টাকা নেয়, তাতেই অনেকে পিছু হটেন। আমি ঠিক করেছি অনলাইন পরামর্শ পরিষেবা দেবো বিনামূল্যে’, বলেন বিবেক।

নাম গোপন রাখার ফলে প্রাইভেসির সঙ্গে আপোষ করতে হয় না।তাই বিশেষজ্ঞদের সামনে একেবারে নিজেদের মেলে ধরেন ইউসাররা। ‘আমরা কোনও জিজ্ঞাস্য পেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশেষজ্ঞর কাছে সেটা পাঠিয়ে দিই। এবার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ইউসারের অ্যাকাউন্টে পাঠানোর পাশাপাশি ওয়েবসাইটেও পোস্ট করে দিই, যাতে একই সমস্যায় যারা ভুগছেন তাঁরা পরামর্শ কাজে লাগাতে পারেন’,বিবেকের ব্যাখ্যা। তিনি জানান, এডভাইস আড্ডায় বেশিরভাগ প্রশ্ন আসে পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, সম্পর্ক, বিষন্নতা এবং যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে। ইউসাররা বেশিরভাগই ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ পুরুষ, ৪০ শতাংশ মহিলা। ‘আমাদের গ্রাহকদের একটা অদ্ভুত ব্যাপার হল তাঁরা লেগে থাকেন, সরে যান না’, বলেন ‘এডভাইস আড্ডা’র প্রতিষ্ঠাতা। ‘যারা একবার কিছু জিজ্ঞেস করেছেন তাঁরাই আবার নতুন প্রশ্ন নিয়ে হাজির হচ্ছেন’। বিবেক মানলেন, গ্রাহকদের আনুগত্য তাঁকে প্রেরণা যোগায়। ‘মাত্র পাঁচ মাস হল ওয়েবসাইট লঞ্চ করেছি, ইতিমধ্যে ওয়েবসাইটে ৩০০০০০ হিট হয়েছে। দিনে গড়ে ৫০০০-৭০০০ জন আমাদের ওয়েবসাইটটি খুলে পড়েন।তারমধ্যে ২০০০ এরও বেশি নাম রেজিস্টার করেছেন’। তার সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘এডভাইস আড্ডা’র যা সাফল্য এখনও পর্যন্ত এসেছে পুরওটাই কোনও প্রচার ছাড়াই।

বিবেক সত্য মিত্রম

বিবেক সত্য মিত্রম


ওয়েবসাইট থেকে এই মুহূর্তে কোনও আর্থিক লাভ পাওয়া যাচ্ছে না বটে, তবে এটাকে আরও বাড়ানোর কথা ভাবছে টিম ‘এডভাইস আড্ডা’। বিবেক জানান, আরও বড় হতে গেলে দুটি মূল বিষয়ের কথা তাঁরা ভাবছেন। সেটা হল স্কুল,কলেজ এবং কপোর্রেট হাউজগুলিতে সরাসরি গিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা। এবং অনলাইন কাউন্সেলিং প্রোগ্রামে প্রত্যেককে আলাদাভাবে কেরিয়ারের দিশা দেখানো, মানসিক সমস্যা এবং সম্পর্ক সংক্রান্ত নানা বিষয়ে কথা বলা পরামর্শ দেওয়া, যেগুলি নিয়ে ঘনঘন গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রশ্ন আসে। বিবেক যোগ করেন, ‘এডভাইস আড্ডা’র মতোই একই চিন্তা ধারার লোকজন এবং সংস্থার খোঁজ করছেন তাঁরা যারা ওয়েবসাইটকে আর্থিক সমর্থন যোগাবে। তাঁর ‌যুক্তি, ‌যুবসমাজের সঙ্গে সব ধরণের ব্র্যান্ড, পণ্য, পরিষেবার সংযোগ ঘটনোর ক্ষমতাই এই ওয়েবসাইটকে লাভজনক করে তুলতে পারে ।

যে কোনও উদ্যোক্তার মতোই বিবেকের স্বপ্নও আকাশ ছোঁয়া। ‘ভারতের ৭৫ কোটির যুবসমাজ, যারা মনের কোণে জমিয়ে রাখা হাজারো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কাউকে খুঁজে পায় না, তাদের পাশে দাঁড়াতেই আমার এই ওয়েবসাইট শুরু করার পরিকল্পনা। আমি ‘এডভাইস আড্ডা’কে ফেসবুক,টুইটারের চাইতে বেশি জনপ্রিয় করে তুলেতে চাই, কারণ এটা শুধু ভাবের আদান প্রদানই করে না, ‘এডভাইস আড্ডা’ সমস্যারও আদান প্রদান করে, সমাধান বাতলে দেয়’,বলেন বিবেক। বিবেক শেষ করলেন আরও বড় আশা দেখিয়ে। ‘বিশ্বের সর্ব কনিষ্ঠ জাতি হওয়া আমাদের অহংকার এবং প্রধানমন্ত্রীও আমাদের বিশাল জনশক্তির উল্লেখ করে বিশ্বের অন্যান্য দেশকে এখানে বিনিয়োগের আহ্বান করেছেন। কিন্তু কীভাবে এই জনশক্তি গঠনমূলক হবে যদি প্রতি বছর ৫০০০০ বেশি যুবক-যুবতী আত্মহত্যা করে শুধুমাত্র তাদের সমস্যাগুলি (মূলত আর্থিক, পারিবারিক এবং প্রণয় ঘটিত) কারও সঙ্গে আলোচনা করতে না পারার জন্য। চলুন আমাদের যুবসমাজের জীবন চিন্তামুক্ত রাখি। আর তখনই এই যুবসমাজ জাতিকে ‘বিশ্বগুরু’ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারবে’।