কলকাতার ফুটপাথে কাটিয়েও স্টার্টআপ বাঙালি তরুণের

কলকাতার ফুটপাথে কাটিয়েও স্টার্টআপ বাঙালি তরুণের

Monday October 05, 2015,

3 min Read

শুরুয়াতি ব্যবসার (স্টার্টআপ) দৌড় একটু দেরিতে শুরু করলেও দ্রুত গতিতেই এগোচ্ছে কলকাতা। এই শহরের ছেলেমেয়েরাও চমকপ্রদ সব আইডিয়া নিয়ে ব্যবসা করছেন। ইয়োর স্টোরির পাঠকদের জন্য আজ এমনই এক গল্প। ব্যবসার আইডিয়া নয়, যে তরুণের কথা বলব তার জীবন আর উত্তরণের কাহিনিই চমকপ্রদ। এ যেন বাস্তবিকই গলি থেকে রাজপথে পা রাখা।

কলকাতার ফুটপাথ আর রেলস্টেশনে কেটেছে শৈশব আর কৈশোর। ছুটে বেড়াতেন শহরের এক রাস্তা থেকে অন্য রাস্তায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে একটি কমিউনিটি কলেজে স্টাডি স্কলারশিপ পাওয়ার পর থেকেই বদলে গিয়েছে সেই অশোক পালের জীবন। এখন আর খোলা আকাশের নিচে থাকতে হয় না। পুলিশের ভয়ে পালাতে হয় না। অশোক এখন একজন উদীয়মান তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোগী। ২১ বছর বয়সি অশোক বর্তমানে পার্ক সার্কাস এলাকায় ভাড়া বাড়িতে সম্মানের সঙ্গে থাকেন। সেখানেই গড়ে তুলেছেন তার স্টার্টআপ Sky Cursor. ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের জন্য বিদেশি ক্লায়েন্টদের সহায়তা করে থাকে স্কাই কারসর।


image


কোন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় বদলে গেল জীবন? অশোক বললেন,"Miami Dade College-এ এক বছর ধরে IT নিয়ে কোর্স করি। সেখান থেকে ফিরেই এ বছরের জুনে Sky Cursor চালু করি। মিয়ামিতে থাকতেই শিখেছিলাম, অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে কীভাবে নিজের ব্যবসা শুরু করা যায়"। সেভাবে সুযোগ না পেলেও ছেলেবেলা থেকেই কম্পিউটারের ওপর একটা দখল ছিল অশোকের। সেটাই বদলে দিল জীবন। মার্কিন স্বরাষ্ট্র দফতরের আর্থিক সহায়তায় চলা Community College Initiative Program-এ মনোনীত হন তিনি। তথ্যপ্রযুক্তি বা আইটি'কেই বিষয় হিসাবে বেছে নেন অশোক। ক্লাসে অশোকের কাছে পুরো ব্যাপারটাই যেন শূন্য থেকে শুরু। সেই শূন্য থেকেই স্বপ্নপূরণের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়ে এখন অসম্ভব খুশি অশোক। ছোট হোক, তিনি যে নিজেই একটা কোম্পানির কর্তা!তিলে-তিলে যে পয়সা সঞ্চয় করতে পেরেছিলেন তা দিয়েই কোনওক্রমে একটা ল্যাপটপ কিনেছেন অশোক। সঙ্গে নিয়েছেন ইন্টারনেট কানেকশন। অশোকের যে কোম্পানির কথা বলছিলাম, সেই কোম্পানির এটাই এক এবং একমাত্র সম্পত্তি। না, আর কোনও কিছুই নেই। একটি মানুষ আর একটি মেশিন।

ছেলেবেলায় একটু বোধবুদ্ধি হওয়ার পরে অশোক বুঝতে পারেন তার কেউ নেই। মা, বাবা, ভাই, বোন কেউ নেই। বাঁচার জন্য রাস্তায়-রাস্তায়, রেল স্টেশনে ঘুরে বেড়াতেন অশোক। দশ বছর বয়সে পেলেন যেন মোড় ঘুরল। Don Bosco Ashalayam-এর কর্মীরা তাকে স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। সেখান থেকেই বোর্ডের পরীক্ষায় বসলেন।পাশ করেই হাতের কাজ শিখতে যোগ দিলেন Terra Indica নামে একটা ফার্নিচার ওয়ার্কশপে। কিছু রোজগার হতে লাগল। সেই পয়সাতেই চলতে লাগল পরবর্তী পড়াশোনা। আরও পরে মার্কিন মুলুকের সেই জীবন বদলে দেওয়া স্কলারশিপ।

মিয়ামির কমিউনিটি কলেজে মার্কিনি উচ্চারণে ইংরেজি বুঝতে খুবই অসুবিধার মুখে পড়তে হয়েছিল অশোককে। কিন্তু সেটাও বাধা হয়নি। অশোকের কথায়, "একজন শিক্ষক খুবই সাহায্য করতেন। শুধুমাত্র আমার জন্য ক্লাসে ধীরে-ধীরে পড়াতেন যাতে আমি বুঝতে পারি। এমনকী ক্লাসের পরেও সাহায্য করতেন। যে কোনও জিনিস সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিতেন। ইন্টারনেটে যে ভিডিও টিউটোরিয়ালস মিলত তাতেও উপকৃত হয়েছি।" কমিউনিটি কলেজ বদলে দিয়েছে অশোককে। হাতেকলমে শিক্ষা, প্রফেশন্যাল ইনটার্নশিপ, সার্ভিস লার্নিং, কমিউনিটি এনগেজমেন্ট তাকে অন্যভাবে দেখতে শিখিয়েছে জীবনকে। আর তাই অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্টিভ জোব্‌সকেই আদর্শ করে এগিয়ে চলেছেন অশোক।

মিয়ামিতে স্টাডি স্কলারশিপের সময় একটি সংস্থায় internship করেছিলেন অশোক। সেই সংস্থার হয়ে একটি ওয়েবসাইট ডেভেলপ করেছিলেন। যা তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। এমনকী কলেজের নিজস্ব যে ওয়েবসাইট ছিল তাও নিয়মিত আপডেট করতেন অশোক। দেড় হাজার পাতার সেই ওয়েবসাইট সামলানো সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু সঙ্গীসাথীদের নিয়ে সেই কাজটাই করতে-করতে দক্ষতা বাড়িয়ে নেন অশোক। যা পরবর্তীকালে তার বিশেষ কাজে দিয়েছে। অশোক বললেন,"এখন আমার জীবন বদলে গিয়েছে। এমনকী আমার কথাবার্তার ধরনও বদলে গিয়েছে। এখন আমি অনেক বেশি প্রফেশন্যাল।" তবে লড়াই শেষ গিয়েছে বলে মনে করেন না লাহোরে অনূর্ধ্ব ১৯ রাগবি প্রতিযোগিতায় ভারতীয় দলের সদস্য থাকা অশোকের। আমেরিকা থেকে ভারতে ফিরেছেন। নিজের কোম্পানি খুলেছেন। চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশোনাও। একটি সান্ধ্য কলেজে কমার্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন। সামনে অনেকটা পথ পেরনো যে এখনও বাকি।