বেঙ্গালুরুর উবের-এ প্রথম মহিলা ড্রাইভার

বেঙ্গালুরুর উবের-এ প্রথম মহিলা ড্রাইভার

Saturday August 29, 2015,

3 min Read

কর্মস্থলে যেতে গাড়ি বুক করেছিলেন বায়োকনের বস কিরণ মজুমদার শ। গাড়িতে উঠে একরকম চমকেই ওঠেন। গাড়ির চালকাসনে বসে আছেন এক মহিলা! তাঁকে যিনি গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেলেন সেই ভারতীর কাছেও সেটা ছিল একটা গর্বের মুহূর্ত।

বেঙ্গালুরুতে কিরণ  মজুমদার শ এবং ভারতী

বেঙ্গালুরুতে কিরণ মজুমদার শ এবং ভারতী


উবের বেঙ্গালুরুর প্রথম মহিলা চালক ভারতী। সম্প্রতি একটা গাড়িও কিনেছেন আর হয়ে গিয়েছেন ব্যবসার অংশীদার। এই একটা পদক্ষেপ ভারতীকে দিয়েছে নিজের ইচ্ছেমতো কাজের স্বাধীনতা। অন্য মহিলা চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার আত্মবিশ্বাস আর মাসের শেষে অনেকগুলো টাকা যা দিয়ে তিনি সহজেই মেটাতে পারেন তাঁর নিজের ফোর্ড ফিয়েস্তার ইএমআই। আগামী বছর একটা মার্সিডিজ কেনার পরিকল্পনাও নিয়ে ফেলেছেন ভারতী। একটু পিছন ফিরে দেখা যাক, শুধুমাত্র গাড়ি চালানোর দক্ষতা কীভাবে তাঁকে এনে দিয়েছে এই সাফল্য।

ভারতীর লড়াইয়ের কাহিনি

অন্ধ্রপ্রদেশের একটা ছোট শহর থেকে উঠে আসা ভারতী ২০০৫ সালে চলে আসেন বেঙ্গালুরুতে। সেখানেই থাকতেন তাঁর ভাই। ভারতীর পড়াশোনা ক্লাস টেনের বেশি এগোয়নি। নামেন কাজের সন্ধানে। একটা দর্জির দোকানে কাজও পান। কিছুদিন এই কাজ করলেও মন বসেনি। কাজের ফাঁকেই অন্য কাজের সন্ধান করতে থাকেন। এইসময়ই খোঁজ পান একটি এনজিও-র, যারা মহিলা ড্রাইভার খুঁজছিল। এটা এমনই কাজ যা করতে গেলে ড্রাইভিং শিখতে হবে, আবার সেটা শিখতে গেলে দর্জির কাজ ছাড়তে হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়াটা তাঁর পক্ষে তখন কঠিন ছিল। বিশেষত আরও একটা বিষয় ভারতীকে ভাবিয়ে তুলছিল। প্রথমত সেই সময় আর কোনও মহিলা ড্রাইভারের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল না। তাছাড়া ড্রাইভার মানেই পুরুষদের একচেটিয়া একটা ব্যাপার ছিল। সেখানে কি তিনি জায়গা করে নিতে পারবেন?

ভারতী

ভারতী


বিষয়টা নিয়ে বেশ কিছুদিন চিন্তাভাবনা করার পরে টেলারিংয়ের কাজ ছেড়ে ড্রাইভিং শেখারই সিদ্ধান্ত নেন ভারতী। মহিলা ড্রাইভারদের উতসাহ দিতে ২০০৯ সালে রাজধানী দিল্লিতে তখন যোগ্য মহিলা চালকদের সন্ধান চলছে। সুযোগটা এসে যায় ভারতীর সামনেও। মাস গেলে ১৫ হাজার টাকা বেতনের প্রস্তাব। সঙ্গে ইয়োলো ব্যাজ। এতে ভারতীর আত্মবিশ্বাস একধাক্কায় অনেকটাই বাড়ে। কিন্তু সেই কাজ নেননি ভারতী। আসলে বেঙ্গালুরুতেই থাকতে চাইছিলেন তিনি। এরপর কাজের সন্ধানে বিভিন্ন ট্র্যাভেল ও ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। এইসময় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয় অ্যাঞ্জেলসিটি ক্যাবসের, যা বেঙ্গালুরুর প্রথম মহিলা পরিচালিত ট্যাক্সি সার্ভিস। সেখানেই কাজ নিয়ে নেন ভারতী। এরপর ২০১৩ সালের অক্টোবরে যোগ দিলেন উবেরে। বেঙ্গালুরু উবেরের প্রথম মহিলা ড্রাইভার। সেখানে কাজ করার চারমাসের মধ্যেই নিজের একটা গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেন ভারতী। পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতেই একটা ফোর্ড ফিয়েস্তা বুক করে ফেলেন। যেটা ভারতীর জীবনে এক বড় সাফল্য। স্বপ্নের রাজপথে ডানা মেলার লাইসেন্স মিলে যাওয়া।

ভারতীদের সংখ্যা এত কম কেন? 

ভারতী বললেন, "আমাদের সমাজে মহিলা চালকদের সহজভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। প্রথমত, পুরুষ আধিপত্য। তারওপর গাড়ির চালক হওয়ার মধ্যে যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা বহু মহিলাই নিতে পারেন না। এছাড়াও রয়েছে একটা বড় কারণ। মেয়েরা সাংসারিক কাজকর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় বাইরের জগতের সঙ্গে তাঁদের সেভাবে পরিচয় হয় না। ফলে বিপরীত পরিবেশে মানিয়ে নেওয়াটাও সকলের জন্য সমান হয় না।" আর তাই মহিলাদের অধিকার নিয়েও সমান সচেতন ভারতী চান আরও বহু সংখ্যক মহিলাকে তাঁর ড্রাইভিংয়ের দক্ষতা শেখাতে।

ভারতীর কাজের প্রশংসা করেছেন বেঙ্গালুরু উবের-এর জেনারেল ম্যানেজার ভাবিক রাঠোড়ও। "ভারতী যখন নিজেই একটা গাড়ি কেনার কথা বললেন আমরা অত্যন্ত খুশি হয়েছিলাম। তৃপ্তিও পেয়েছিলাম ও যখন নিজেই স্বাধীনভাবে গাড়ি চালাতে লাগল। আমরা নিশ্চিত, ভারতীয়দের মাইন্ডসেট পরিবর্তনেও ভারতী উদাহরণ হয়ে উঠবে", বলছেন ভাবিক। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তাই উবের দিয়েছে প্রথমবার তাদের গাড়ি ব্যবহারকারীদের ৫০০ টাকার ছাড়। ক্যাম্পেনটাও ছিল জোরদার। ক্যাচলাইন 'ভারতী'।