ই-কমার্সে অশনি সংকেত !

Sunday January 03, 2016,

3 min Read

উৎসবের মরশুম শেষ। এই উৎসবের মরশুম কারও ভাল কেটেছে, তো কারও মোটামুটি। কারও বা একেবারেই ভাল নয়। কিন্তু উৎসবের উচ্ছাসকে সামনে রেখে প্রশ্নাতীতভাবে দারুণ কেটেছে দেশের ই-কমার্স সংস্থাগুলির। তবে এই ফুলেফেঁপে ওঠা একদিনে হয়নি। খতিয়ান বলছে, শেষ ১৮ মাসে ই-কমার্স সাইটগুলিতে অভূতপূর্ব লগ্নি হয়েছে। শুধু বিনিয়োগই বৃদ্ধি পায়নি। তাল মিলিয়ে বেড়েছে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে জিনিসপত্র কেনার প্রবণতাও।

গত বছরে দেশে নতুন আসা ১২টি ই-কমার্স সংস্থায় এত বড় অঙ্কের বিনিয়োগ এসেছে যা ভারতে জন্ম নেওয়া একটি নতুন সংস্থার চেনা পরিচিত চেহারাই বদলে দিয়েছে। অনেকে মজা করে বলছেন, আগে নতুন শিল্পোদ্যোগী শুনলে লোকে তার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতেন না। এখন সেই পরিস্থিতি আর নেই। ই-কমার্স ব্যবসার নতুন উদ্যোগীরও বিয়ের বাজারে চাহিদা চোখে পড়ার মতন। নতুন ব্যবসা মানেই আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েও তা টেনে নিয়ে যাওয়া। ই-কমার্সে ঢালাও বিনিয়োগ এমন চিরাচরিত ধারণাকেও দ্রুত ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে দিয়েছে।

ঘরে বসেই পছন্দের জিনিস হাতে পাওয়া আর সোনায় সোহাগার মত সঙ্গে মোটা টাকার ডিসকাউন্ট। এই জোড়া হাতছানি বহু মানুষকে দোকান ছেড়ে ই-কমার্স সাইট থেকে অনলাইনে জিনিস কিনতে উৎসাহ জুগিয়েছে। ফলে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে বিক্রি। কিন্তু প্রশ্ন হল এই সুখের দিন কী সত্যিই দীর্ঘস্থায়ী হবে? আদৌ কী এই ডিসকাউন্টের আতসবাজি এবছরের দীওয়ালি প‌র্যন্ত স্থায়ী হওয়ার পরিস্থিতিতে রয়েছে?

এমন প্রশ্ন ওঠার কিন্তু ‌যথেষ্ট কারণ রয়েছে। শিল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন সূত্র ‌যা হিসেব দিচ্ছে তাতে এই খুশির বেলুন মুহুর্তে চুপসে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বেসরকারি হিসেব বলছে, দেশের প্রথমসারির ১০টি ই-কমার্স সংস্থার একটি নির্দিষ্ট সময়ে তাদের খরচের পরিমাণ বা বার্ন রেট দৈনিক ৯ মিলিয়ন ডলার। ‌যদি ধরা হয় যে ই-কমার্সের বাৎসরিক বৃদ্ধির হার ১৫০ শতাংশ, তাহলে আগামী দীওয়ালিতে তাদের ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখতে গেলে প্রাত্যহিক ২২ মিলিয়ন ডলার করে খরচ করতে হবে। ‌যদি তারা বর্তমানে গ্রাহকপিছু তাদের পরিকল্পনা ধরে রাখতে চায় তাহলে তাদের এছাড়া কোনও উপায় নেই। এখন এই পরিমাণ টাকা ঢালার মত বিনিয়োগকারী পাওয়া দুষ্কর। কেউই এভাবে টাকা ঢালাতে চাইবেন না।

তাহলে উপায় ! উপায় একটাই, ই-কমার্স সাইটগুলোকে তাদের বার্ন রেট কমাতে হবে। কিন্তু কীভাবে? এ নিয়ে কিছু সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা।

এক, এমন যদি হয় যে একটি ই-কমার্স সংস্থা আচমকাই নতুন এতগুলো পরিকল্পনা নিয়ে বাজার কাঁপাল যে অন্যদের কার্যত টুঁটি টিপে মেরে ফেলল, তাহলে তার চিন্তা নেই।

দুই, এমন যদি হয় যে একটি বহুজাতিক সংস্থা ভারতের সব ই-কমার্স সংস্থাকে কিনে নিল এবং একাই দেশে ব্যবসা করল।

তিন, এমন যদি হয় যে দেশের সবকটি ই-কমার্স একজোট হয়ে গেল এবং বহুজাতিক সংস্থার বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াইয়ের ময়দানে নামল

চার, এমন যদি হয় যে অর্থাভাবে বেশ কয়েকটি দেশীয় ই-কমার্স সংস্থা এই ব্যবসা ছেড়ে পালিয়ে গেল ।

এখন এটা বলা খুব মুশকিল যে এরমধ্যে কোন শর্তটা কাজে লেগে ‌যাবে বা আদৌ কোনও শর্ত কাজে লাগবে কিনা ! তবে এটা ঠিক ২০১৫-এ যেভাবে ই-কমার্স ব্যবসা ফুলেফেঁপে দাপট দেখিয়েছে, সেই ছবিই আগামী দীওয়ালিতে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ‌ক্ষীণ।

Share on
close