একুশের মঞ্চে ওঁরা ৬ চাঁদের পাহাড়ের শঙ্কর!

একুশের মঞ্চে ওঁরা ৬ চাঁদের পাহাড়ের শঙ্কর!

Saturday February 13, 2016,

3 min Read

২১ ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস। চন্দনের নেতৃত্বে অক্ষরযাত্রার দল ঢাকা‌র রাস্তায় পৌঁছে গিয়েছে। গত পরশু। কলকাতা থেকে ঢাকা এই ৩৩০ কিলোমিটারের লম্বা রাস্তা ওঁরা পাড়ি দিয়েছেন সাইকেলে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডের দিন যাত্রা শুরু করেছিলেন কলকাতা থেকে শান্তির দূত হয়ে। শুধু উত্তিষ্ঠত জাগ্রত এই কথাটুকু পৌঁছে দিতেই ৬ তরুণের এই দুর্দান্ত অভিযাত্রা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ঢাকায় শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানাতে এতটা পথ সাইকেলে দৌড়ে এসেছেন। চন্দন বিশ্বাস ছাড়া দলে আছেন আছেন অঙ্কুর বর্মন, রাহল সেন, রজত সাহা, সুব্রত চ্যাটার্জি ও ব়্যান্সডেল ম্যানুয়েল। 

পেশাদার অভিযাত্রী ওঁরা নন। সময় ও সুযোগ পেলে পর্বতারোহণ করে থাকেন। সাইক্লিং, স্পিড বাইকিং-সহ অভিযানমূলক অন্যান্য খেলাধূলাতেও অংশ নেন। টাচ অব হেভেনের অন্যতম প্রধান সদস্য চন্দন বললেন, দুই বাংলার মানুষের কাছে আবেদন, দুপাড়ের বাংলায় যে ঘুমিয়ে থাকা সম্ভাবনা আছে সেগুলো যেন জেগে ওঠে। আমরা যেন রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক আবর্তের বাইরে বেরিয়ে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে দুনিয়ার দরবারে উজ্জ্বল একটা জায়গায় তুলে ধরতে পারি। এই অঞ্চলের মানুষ যেন কর্মেতে বীর হয়ে ওঠেন, এরকমই বেশ কিছু শুভ বার্তা নিয়ে এই লম্বা পথের ক্লেশ সহ্য করা।

image


বিভূতিভূষণের চাঁদের পাহাড়ের শঙ্কর বাংলাদেশের অজ গ্রামের বেকার ছেলে। এদেশে চাকরি না পেয়ে সে চলে গিয়েছিল আফ্ৰিকায়। সেখানে নিয়তি শঙ্করকে অভিযাত্রী করে তুলেছিল। ভালোবাসার টান এলে নিয়তির কারবার মন্দ চলে না! লোকে বলে, পথেঘাটে কত বিপদ। তাছাড়া, মানুষের অজানা ভয়ের তো কোনও শেষ নেই। অজান্তে কত ভয় মানুষকে জ্বালায়। তাও ভালবাসার টানেই মানুষ ঘর ছাড়ে। পাকাপাকিভাবে না হলেও অন্তত কিছুদিনের ভবঘুরেমি না হলে চলেই না বহু মানুষের। এ কাজে পথেঘাটে বিপদের ভয় আছে বটে, এ সত্ত্বেও মানুষকে চেনাজানার যে আনন্দ, তা যেন মাটি থেকে তুলে নেওয়া উপার্জন! চাঁদের পাহাড়ে শঙ্কর তো হীরের খনির হদিস পেয়েছিলেন। কোথায় কী মিলে যাবে, তা কখনও আগেভাগে বলা যায় না। একারণে বিপজ্জনক অভিযানও একটি খেলা। তাতে মৃত্যুর ঝুঁকি আছে। উল্টো পথে আছে ঝুলিভর্তি অভিজ্ঞতার অসামান্য ধ‌নসম্পত্তি।

অভিযানমূলক খেলার সঙ্গে যুক্ত প্রতিভাদের স্বীকৃতি দিতে এবং অভিযানমূলক খেলাকে জনপ্রিয় করতে সম্প্রতি কলকাতায় গঠিত হয়েছে একটি নতুন সংস্থা। টাচ অব হেভেন। এই সংস্থাটি চন্দন বিশ্বাস-সহ কয়েকজন তরুণ অভিযাত্রীর উদ্যোগে গঠিত হয়েছে। ১৯৪৯ সালে এদেশের প্রথম মহিলা পর্বতারোহী দলের হিমালয় অভিযানের নেত্রী দীপালি সিনহা এই সংস্থার অন্যতম শুভানুধ্যায়ী। চন্দন পেশায় একজন ফটোগ্রাফার। নেশায় অভিযাত্রী। পড়াশোনা করেছেন সেন্ট জেভিয়ার্সে। টাচ অব হেভেনের প্রথম অভিযান অক্ষরযাত্রার দলনেতা। স্বভাবতই তাঁর দায়িত্ব গুরুতর। ইতিমধ্যে চন্দন অর্ধেক ভারতবর্ষ সাইকেলে চেপে ঘুরে ফেলেছেন।

২৪ বছরের অঙ্কুর বর্মন এ দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। কর্পোরেট সংস্থায় কাজ করেন অঙ্কুর। পড়াশোনা করেছেন দমদম মতিঝিল কলেজে। মূলত, পর্বতারোহী। তবে অভিযানমূলক অন্যান্য ধরনের খেলাধূলাতেও ওঁর সমান আগ্রহ আছে।।

রাহুল সেন গড়িয়ার বাসিন্দা।‌ বয়স ২৬। বাবা-মায়ের এক সন্তান। ১০ মাস আগে রাহুলের মেরুদণ্ডে জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছে। এরপরে এটিই প্রথম অভিযান। পর্বতারোহী অভিযাত্রী সঙ্ঘের কাছ থেকে পর্বতারোহণের বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ‌ এছাড়া, ২০১৩ সালে হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে পর্বতাভিযানের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

৪৬ বছরের টগবগে মানুষ রজত সাহা। পেশায় সফল ব্যবসায়ী। থাকেন পূর্ব কলকাতার উল্টোডাঙায়। ব্যবসার ফাঁকে সময় পেলেই বেরিয়ে পড়েন অভিযানে। টাচ অব হেভেনের নতুন সদস্যদের মধ্যে একজন রজত।

সুব্রত চ্যাটার্জি চল্লিশ টপকেছেন। বিবাহিত মানুষ। কলকাতাতেই বড় হয়েছেন। এই শহর তাঁর প্রিয় শহর। তবে, মাঝেমাঝেই কলকাতা থেকে বেরিয়ে পড়েন নতুন কোনও অভিযানে। ওঁর মতে,ভবঘুরেমির নেশাই সর্বশ্রেষ্ঠ নেশা।

রেন্সডেল ম্যানুয়েল অ্যাংলো ইন্ডিয়ান যুবক। দলের যে তিন সদস্য বিবাহিত তাঁদের ভিতর একজন ম্যানুয়েল। পেশায় শিক্ষক। বসবাস হাওড়ায়। এই অভিযানে ম্যানুয়েল অবশ্য দৌড়বেন। ইংরেজি মাধ্যম যে স্কুলটিতে শিক্ষকতা করেন, ক্লাশের ফাঁকে স্কুলছাত্রদের অভিযাত্রী হতে উদ্বুদ্ধ করানোটা তাঁর সুঅভ্যাস।