গরিবের মেডিসিন বাবা ওঙ্কারনাথ শর্মা। ৮০ বছরের ওঙ্কারনাথ বাড়ি বাড়ি গিয়ে অব্যবহৃত ওষুধপত্র সংগ্রহ করেন। আর সংগৃহীত সেই ওষুধ দান করেন দরিদ্র রোগী বা রোগিণীকে। তাতে তাঁদের ওষুধ কেনার খরচ-খরচাটা অন্তত বাঁচে।
ওঙ্কারনাথ নিজেও অর্থনৈতিকভাবে ধনী নন। টেকনিশিয়ান হিসাবে চাকরি করতেন নয়ডার কৈলাশ হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। ২০০৮ সালে ওঙ্কারনাথের একটি ভীষণ তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়। এরপরেই ঘুরে ঘুরে ওষুধপত্র সংগ্রহের কাজ শুরু করেন তিনি।
সাত বছর আগে সেইসময় পূর্ব দিল্লির নির্মীয়মাণ মেট্রো সেতুটি ভেঙে পড়েছিল আচমকাই। দুর্ঘটনায় দুজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এছাড়াও আরও অনেকে জখম হয়েছিলেন। এই দুর্ঘটনার পরে ওঙ্কারনাথ স্বচক্ষে দেখেন দরিদ্র মানুষ হাসপাতালে কীভাবে অবহেলিত হন। ওই দুর্ঘটনায় জখমরা সরকারি হাসপাতালে ঠিক মতো পরিষেবা পাচ্ছিলেন না। ওঙ্কারনাথের সেই সময়ে কিছু করার ছিল না।
কিন্তু সেই অসহায়তার সাক্ষী থাকতে থাকতে গরিব মানুষের পাশে থাকার জন্যে কিছু করার কথা ভাবতে শুরু করেন তিনি। সেই থেকেই ওষুধ সংগ্রহের পরিকল্পনা। ওঙ্কারনাথ বললেন, আমার নিজের বসবাসের এলাকায় প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ওষুধ সংগ্রহ করি। সুবিধামতো লোকে অব্যবহৃত ওষুধ দান করছেন। সরকারি কলোনিগুলির মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত বাসিন্দারা সাধ্যমতো দান করছেন।
তবে ওঙ্কারনাথের অভিজ্ঞতা, অভিজাত এলাকায় গিয়ে কাজ হয় না। সাধারণত ওঁরা সাড়া দেন না। এ কাজ করতে করতে ওঙ্কারনাথ এখন মেডিসিন বাবা নামে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। মানুষজন সাধ্যমতো তাঁকে সহায়তা করতে চেষ্টা করেন বলে জানালেন নিজেই। আসলে তাঁর নিজের জীবনও সংগ্রামের। একটি ছোট ভাড়ার ঘরে স্ত্রী ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে থাকেন। ৪৫ বছরের ছেলে জগমোহন মানসিক প্রতিবন্ধী।
ওষুধ জোগাড়ের কাজ করার জন্যে দিনে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার হাঁটতে হয় ৮০ বছরের ওঙ্কারনাথকে। মেট্রোতে দিনভর ঘোরাঘুরির টাকা তাঁর নেই। বয়স্ক নাগরিকের কার্ড আছে। তাতে বাসে ঘোরাঘুরিতে সুবিধা হয়। প্রতিদিন নিয়ম করে ভোর ছটা নাগাদ কাজ শুরু করেন। ওঙ্কারনাথ জানালেন, প্রতিমাসে অন্তত ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা ওষুধ বিনা পয়সায় বিতরণ করেন তিনি।
রাজধানীর মিডিয়ায় ইতিমধ্যে মেডিসিন বাবার খবর প্রচারিত হয়েছে। নিজের ওষুধ বিতরণের কাজ চালাতে একজন কর্মীও রাখতে হয়েছে তাঁকে। এছাড়া, ছেলে জগমোহনও বাবাকে সহযোগিতা করে থাকেন। ওঙ্কারনাথের লক্ষ্য, মানুষের পাশে থাকা। আর দিল্লির মানুষকে এ কথা বোঝানো, আপনিও মানুষের পাশে থাকুন।