বিশ্বসেরা স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম হবে ভারতে: লক্ষ্যে নিশ্চল কর্নাটকের শিল্পমন্ত্রী
Sunday December 20, 2015,
3 min Read
রাষ্ট্রসংঘের এক গবেষণা অনুযায়ী বিশ্বের সব থেকে বেশি তরুণ রয়েছে ভারতে। সংখ্যাটা ৩৫ কোটিরও বেশি। দেশের যুবসম্প্রদায়ের গড় বয়স ১০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। তারুণ্য নামক এই সম্পদকেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে লাগাতে চান কর্নাটকের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী আর ভি দেশপান্ডে।
কর্মচঞ্চল মানুষটিকে দেখলে কে বলবে, বয়স সত্তর ছুঁই ছুঁই। ছুটে বেড়াচ্ছেন কর্নাটকে বিশ্বমানের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরির লক্ষ্যে। স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম, মানে এমন এক ব্যবস্থা যেখানে শুরুয়াতি ব্যবসা সহজেই অঙ্কুরিত হয়ে বেড়ে উঠতে পারে। কর্নাটকের বুকে আপাতত সেই ব্যবস্থা গড়ে তোলায় ব্রতী আর ভি দেশপান্ডে।
নয়ের দশকের শেষ দিকের কথা। এ দেশে তখনও স্টার্টআপ শব্দটার আমদানি হয়নি। সে সময়েই ব্যাঙ্গালোর তথা কর্নাটককে আইটি উদ্যোগপতিদের আঁতুড়ঘর করে তোলার কর্মযজ্ঞ শুরু করে দিয়েছিলেন আর ভি দেশপান্ডে, পাশে পেয়েছিলেন মোহনদাস পাই-এর মতো বিজনেস লিডারকে। ১৯৯৯ সালে শুরু হয় কর্নাটক ইনফর্মেশন টেকনোলজি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড, কিটভেন ফান্ড নামেই যা বেশি জনপ্রিয়। ১৫ কোটি টাকার সেই প্রকল্পের সাহায্যেই ১৭টি আইটি সংস্থা শুরু হয়েছিল। মন্ত্রীর নিজের কথায়, ‘আজ সকলে মসৃণভাবে ব্যবসা করার কথা বলেন, কিন্তু সেই ২০০২ সালেই আমরা এই পরিকল্পনা করেছিলাম’। রাজ্যে শিল্পস্থাপনকে সহজতর করে তুলতে ২০০২ সালে তৈরি হয়েছিল কর্নাটক ইন্ডাস্ট্রিজ ফেসিলিটেশন আইন। উল্লেখ্য কর্নাটকই দেশের প্রথম রাজ্য যেখানে পৃথক তথ্যপ্রযুক্তি দফতর ও তথ্যপ্রযুক্তি আইন চালু হয়। আর এই গোটা সময়টাতেই রাজ্য মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন আর ভি দেশপান্ডে।
স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের নিরিখে বিশ্বের প্রথম ২০টা শহরের মধ্যে বেঙ্গালুরুর স্থান ১৫ নম্বরে। এই পরিসংখ্যান যদি শিল্পক্ষেত্রে কর্নাটকের সাফল্যের একটা সূচক হয়, তাহলে সেই সাফল্যের রহস্যে ব্যাখ্যা করেছেন রাজ্যের শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রী। প্রশাসন ও শিল্পপতিরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন বলেই এই সাফল্য এসেছে বলে তাঁর মত। ‘প্রযুক্তির প্রবর্তনের ক্ষেত্রে কর্নাটক বরাবরই দেশকে পথ দেখিয়েছে। এই রাজ্যেই রয়েছে তাবড় রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’, বলেন মন্ত্রী। মন্ত্রিত্বের তৃতীয় ইনিংসে আগের দুই ইনিংসের সাফল্যের পুনরাবৃত্তিই ঘটাতে চাইছেন তিনি। এবার তাঁর লক্ষ্য একটি স্টার্টআপ কাউন্সিল গড়ে তোলা।
পরিসংখ্যান বলছে বিশ্বের তরুণতম উদ্যোগপতিদের ঠিকানা এখন বেঙ্গালুরু। সান ফ্রানসিস্কোর সিলিকন ভ্যালির উদ্যোগপতিদের গড় বয়স যেখানে ৩৬.২ বছর, সেখানে বেঙ্গালুরুর সিলিকন উপত্যকায় গড় বয়স ২৮.৫ বছর। শিল্পের পরিবেশকে আরও তরান্বিত করতে এবার কলেজ পড়ুয়াদেরও এই কর্মযজ্ঞে জড়িয়ে ফেলতে চান আর ভি দেশপান্ডে। উদ্দেশ্য, লেখাপড়ার ফাঁকেই জেনারেশন জেডের মনে শিল্পভাবনার বীজ বপন করা। আর নতুন প্রজন্মের নতুন ভাবনাগুলোকে যাতে লালন-পালন করে বড় করে তোলা যায়। এভাবেই স্টার্টআপ কাউন্সিলের নকশা তৈরি করেছেন তিনি। এই কাজে তিনি স্যোশাল মিডিয়াকেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে চাইছেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের স্মার্ট সিটি প্রকল্পে বেঙ্গালুরুর নাম ওঠেনি। বেঙ্গালুরুকে শুরুয়াতি ব্যবসা ও উদ্যোগপতিদের কাছে হটস্পট করে তুলে কর্নাটকের বাণিজ্য মন্ত্রী যেন সেই খামতিই পূরণ করতে চাইছেন। সফল যে হবেন, গ্যারান্টি নেই। তবে ব্যর্থ হলেও তার থেকে তিনি শিখতে চান।
ন্যাসকমের রিপোর্ট অনুযায়ী স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের নিরিখে ভারত এখন সারা বিশ্বে ৩ নম্বরে, সব মিলিয়ে ৪২০০ স্টার্টআপ সংস্থা রয়েছে এদেশে। কোনও দেশের আর্থসামাজিক উন্নতির ক্ষেত্রে আর্থিক সম্পদ থাকাটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নতুন শিল্পস্থাপন হলে সেই সম্পদ যে বাড়বে তা বলাই বাহুল্য। একদা রাষ্ট্রপতি ভবনের বাসিন্দা এক বরেণ্য বিজ্ঞানীও অনেকটা এরকমই স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁর ভিশন ২০২০ ছিল ভারতকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার স্বপ্ন।
রাজনীতির কাদা ছোড়াছুড়ির ঊর্ধ্বে উঠে আর ভি দেশপান্ডের মতো নেতারা সেই স্বপ্নকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। হয়তো ২০২০ নয়, আরও কিছুদিন পরে... সেই স্বপ্ন সত্যি হবে।