প্রচলিত ধারণা ভাঙার শক্তিই অসীমের সবচেয়ে বড় পুঁজি

ভারতে বহু মানুষ দূরারোগ্য কিডনির সমস্যা ভুগছেন। যার জেরে একসময়ে মূত্রাশয় কাজ বন্ধ করে দেয়। ক্রমশ মৃতু্যর দিকে এগিয়ে যায় মানুষ। এর থেকে মুক্তি পেতে ডায়ালিসিস একমাত্র সমাধান। কিন্তু বহু মানুষই আর্থিক দুর্বলতার কারণে ডায়ালিসিস করাতে পারেন না। এটা নাড়া দেয় অসীম গর্গকে। চলতি নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করতে পছন্দ করা অসীম একটি এক ছাদের তলায় সম্পূর্ণ ডায়ালিসিসের সুবিধাযুক্ত সেন্টার চালুর পরিকল্পনা করেন। সেই লক্ষ্য ছুঁতে একগুচ্ছ বাধা অইতক্রম করতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে একদিন অসীম গড়ে তোলেন দীপচাঁদ ডায়ালিসিস সেন্টার।

প্রচলিত ধারণা ভাঙার শক্তিই অসীমের সবচেয়ে বড় পুঁজি

Thursday September 03, 2015,

3 min Read

মার্কিন ‌যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের মত হাসপাতাল ছাড়াই এককভাবে এক ছাদের তলায় ডায়ালিসিসের সুবিধা ভারতে তেমন জনপ্রিয় নয়। আমজনতার কাছে ডায়ালিসিস মানেই হাসপাতালে যেতে হবে। হাসপাতাল ছাড়া এ চিকিৎসা অসম্ভব। কিন্তু সেই ভাবনাকে ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এবং তথাকথিত দরিদ্র মানুষের কাছে এই চিকিৎসার সুবিধা পৌঁছে দিতে অসীম গর্গ অগ্রণীর ভূমিকা পালন করেন।

image


ছোট থেকেই অসীমের ব্যবসার দিকে মন। ফলে স্কুলের পাঠ শেষ করেই ব্যবসা সংক্রান্ত পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। গুরগাঁওয়ের আইটিএম থেকে পাশ করার পর আইআইএম বেঙ্গালুরু থেকে জেনারেল ম্যানেজমেন্টে এমিবএ করেন অসীম। শুধু ব্যবসাই নয়, ব্যবসা ক্ষেত্রে অভিনবত্বের খোঁজ করতে পছন্দ করতেন তিনি। ‌যা আদপে তাঁর পরিবার থেকেই পাওয়া।


image


দেশ জুড়ে কিডনির সমস্যা নজর কাড়ে অসীমের। সমস্যার গোড়ায় গিয়ে দেখেন ডায়ালিসিসের সুবিধার অভাবে অনেকেই সঠিক সময়ে ডায়ালিসিস পান না। ফলে মুত্রাশয় কাজ বন্ধ করে দেয়। জীবন মরণ সমস্যার মুখে পড়েন রোগী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে ডায়ালিসিস করার জন্য আমজনতাকে হাসপাতালের দিকে চেয়ে বসে থাকতে হয়না। বরং সেখানে অনেক এমন সেন্টার রয়েছে যেখানে ডায়ালিসিস করার যাবতীয় আধুনিক সুবিধা রয়েছে। রয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। কম খরচে আন্তর্জাতিক মানের ডায়ালিসিসের সুযোগ। এসব বিবেচনা করেই আসীম শুরু করেন স্ট্যান্ড অ্যালোন ডায়ালিসিস ক্লিনিক। কিন্তু শুধু তৈরি করলেই তো হল না, এমন সেন্টারকে পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গিতে টেনে নিয়ে ‌যাওয়ার জন্য দরকার অভিজ্ঞতার। সেই অভিজ্ঞতার খোঁজে অসীম পাড়ি দেন সিঙ্গাপুরে। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসাবে কাজ করার সুবাদে কিডনির আধুনিকতম চিকিৎসাগুলিকে খুব কাছ থেকে দেখার, সেগুলির ব্যবহারিক দিক জানার সুযোগ পান তিনি। এশিয়ার বৃহত্তম এই ডায়ালিসিস কেয়ার সংস্থা থেকে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পর ফের ভারতে ফিরে আসেন অসীম। কিন্তু তাঁর নবতম ভাবনাকে ব্যবসার কাজে লাগান ‌যতটা সহজ হবে বলে তাঁর মনে হয়েছিল, ততটা হল না। কারণ এ দেশে হাসপাতাল কেন্দ্রিক চিকিৎসার একটা রেওয়াজ আছে। যা মানুষের মনে গেঁথে গেছে। এই ধারণা থেকে তাঁদের বার করে আনা মোটেও সহজ ছিলনা। এমন একটা রীতিবিমূখ ব্যবসায়ে টাকা ঢালতে প্রাথমিকভাবে লগ্নিকারীরাও রাজি ছিলেন না। এমনকি অভিজ্ঞ চিকিৎসক থেকে নার্স, সকলেই হাসপাতালের বাইরে এমন অপ্রচলিত ডায়ালিসিসে সচ্ছন্দ বোধ করলেন না। ফলে তাঁদেরও পাশে পেলেন না অসীম। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হল রোগীদের নিয়ে। কারণ তাঁরা হাসপাতালের বাইরে ডায়ালিসিস করায় ভরসা পেলেন না।


এত বাধার মুখে পড়েও প্রচলিত ধারণা বদলাতে বদ্ধপরিকর অসীম গর্গ নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকেন। তাঁর ডায়ালিসিস সেন্টার চালু রাখতে প্রাথমিকভাবে পরিবারের লোকজন ও বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে একটা পুঁজি জড়ো করলেন অসীম। তারপর তাঁর মত প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে নতুন চিন্তাকে বাস্তবের রূপ দিতে চাওয়া কিছু সম-মনভাবাপন্ন চিকিৎসককে নিয়ে একটি দক্ষ চিকিৎসকদের দল গড়লেন। ধীরে ধীরে ভিড় হতে শুরু করল ডিসিডিসিতে। এই মুহুর্তে অসীম গর্গের ডিসিডিসির দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় ৮টি সেন্টার রয়েছে। সব মিলিয়ে রয়েছে ডায়ালিসিসের আধুনিকতম ৮০টি মেশিন।

image


যাঁদের ডায়ালিসিসের খরচ টানার ক্ষমতা নেই তাঁদের জন্যও চিকিৎসার সুবিধা দিচ্ছে গর্গের এই স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। আগামী দিনে হাসপাতালগুলিতেও ডিসিডিসির শাখা খোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন অসীম। একটা বড় অঙ্কের পুঁজিও জোগাড় করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। আগামী তিন বছরের মধ্যে ভারতের বিভিন্ন কোণায় ১০০টি এমন ক্লিনিক গড়ে তোলার লক্ষ্য স্থির করেছেন গর্গ। একেবারে একটা অপ্রচলিত ধারণাকে নিজের বিশ্বাসের জোরে আজ এমন এক উচ্চতায় তুলে নিয়ে গেছেন অসীম। তাঁর মতে, কঠোর পরিশ্রম, চেনা ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা ও নিজের পছন্দের ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মত মনের জোর থাকলে, বৃত্ত পূর্ণ করার জন্য বাদবাকি শর্তগুলো কোনও চেষ্টা ছাড়াই সাফল্যের পিছু ধাওয়া করে।