বর্ধমানের ইউনিক ব্র্যান্ড সীতাভোগ মিহিদানা
Friday December 04, 2015,
3 min Read
বর্ধমানের সীতাভোগ মিহিদানাকে নতুন মোড়কে বাজারে আনলেন প্রদীপ ভকত। নিজের বুদ্ধিতেই তৈরি করিয়েছেন বিশেষ যন্ত্র। যার সাহায্যে সাধারণ পদ্ধতি থেকে খুব কম সময়ে ও সহজে সীতাভোগ মিহিদানা তৈরি করা যায়। নাম দিয়েছেন “রাধাবল্লভের ইউনিক সীতাভোগ মিহিদানা মেশিন"। এই সীতাভোগ মিহিদানা বিশেষ প্যাকেজিং হয়ে চলে যাচ্ছে দূর দূরান্তে। কিছু দিনের মধ্যে অনলাইনেও বিক্রি শুরু হবে। বর্ধমানের পার্কাস রোডের বাসিন্দা এই উদ্যোগপতী বর্ধমানকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
১৯০৪ সাল। তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন বেড়াতে আসেন বর্ধমান। রাজা বিজয় চন্দ ভাইসরয়কে খুশি করতে তৈরি করান সীতাভোগ আর মিহিদানা। সেই শুরু। বাংলার গণ্ডি ছাড়িয়ে বর্ধমানের এই বিশেষ মিষ্টির সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশ বিদেশে। তবে সব কিছুর মতো সীতাভোগ বা মিহিদানা নিয়েও গবেষণার অন্ত নেই। সেই তালিকায় সবার ওপরে জায়গা করে নিয়েছেন বর্ধমানের প্রদীপবাবু। জনা দশেক কর্মীকে নিয়ে চলছে তার কর্মকাণ্ড। নিজের বুদ্ধিতেই তৈরি করিয়েছেন বিশেষ যন্ত্র। যার সাহায্যে সাধারণ পদ্ধতির থেকে খুব কম সময়েই সহজে সীতাভোগ মিহিদানা তৈরি করা যায়। আজ মিষ্টান্ন শিল্পে নিজের আলাদা পরিচিতি ঘটিয়েছেন এই উদ্যোগপতি।
বাবা রামপ্রসাদ ভকতের হাত ধরে ১৯৮৬ সালে মিষ্টান্ন ব্যবসায় পা রাখেন ভকত পরিবার। আর এই ব্যবসায় প্রদীপ বাবুর হাতেখড়ি হয় ১৯৮৯-এ। সবসময়ই নতুন কিছু করার তাগিদ ছিল। তাই পার্কাস রোডে পৈত্রিক ব্যবসায় রাধাবল্লভ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে নিত্য নতুন মিষ্টি তৈরির নেশা ছিল। কিন্তু তাতেও মন ভরছিল না। চাইছিলেন এমন কিছু করতে যা বর্ধমান ছাড়িয়ে বিশ্ববাজারে জায়গা করে নিতে পারে। গতবছরই মাথায় আসে আইডিয়াটা। সীতাভোগ মিহিদানাকে নিয়েই কিছু করতে হবে। পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে করতে ভিন্ন স্বাদের সীতাভোগ আর মিহিদানা তৈরি করে ফেললেন। নাম দিলেন “রাধাবল্লভের ইউনিক সীতাভোগ মিহিদানা”।
কি এমন বিশেষত্ব আছে প্রদীপ বাবুর সীতাভোগ মিহিদানায়? সীতাভোগ সাধারণত চাল গুড়ি ও ছানার মিশ্রণকে তেল বা ঘি এ ভেজে গরম রস এ ভেজানো হয়। আর মিহিদানায় ছানার পরিবর্তে বেসন ব্যবহার হয়। প্রদীপ বাবু জানালেন, সাধারণ চাল গুড়ির জায়গায় সুগন্ধি আতপ চালের গুড়ি ব্যবহার করেন। ভাজার জন্য ব্যবহার করেন তেলের পরিবর্তে নিজের কারখানায় তৈরি বিশুদ্ধ গাওয়া ঘি। বিশেষ ফ্লেবার আনার জন্য মূল্যবান জাফরান ব্যবহার করা হয়। এরপর কাজু, কিসমিস, কেশর, পেস্তা দিয়ে সাজানো হয়। যা অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা বলে তার দাবি। সাধারণ সীতাভোগ মিহিদানা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি হলেও প্রদীপ বাবুর তৈরি ইউনিক সীতাভোগ মিহিদানার কেজি ৩০০ টাকা।
শুরুটা করেছিলেন নিজের দোকানের বিক্রির জন্য। দূর দূরান্তের মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে দোকানে। চাহিদাও বাড়তে থাকে। দুরের মানুষরাও যাতে তার ইউনিক সীতাভোগ মিহিদানার স্বাদ পান তার জন্য বিশেষ প্যাকেজিং এর ব্যবস্থা করলেন। সাধারণত ৭২ ঘণ্টা রাখা যাবে। ফ্রিজ ব্যবহার করলে প্রায় এক মাস পর্যন্ত তাজা থাকবে বলে প্রদীপ বাবুর দাবি। বিভিন্ন জায়গায় বিক্রির জন্য তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতিমধ্যে কলকাতার বিশ্ব বাংলার কাউন্টারে তার প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন।
এই স্টোরি পড়ার পর আপনাদের নিশ্চয়ই রাধাবল্লভের ইউনিক সীতাভোগ মিহিদানা খেতে ইচ্ছা করছে, একটু সবুর করুন। কিছু দিনের মধ্যেই অনলাইনেই পাওয়া যাবে প্রদীপ বাবুর এই ইউনিক সীতাভোগ মিহিদানা। এর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ সরকারও বর্ধমানের সীতাভোগ মিহিদানার ব্র্যান্ডকে বিশেষ ভাবে প্যাকেট জাত করে বিক্রির জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। আর সেটা বাস্তবে রূপায়িত হলে রাধাবল্লভের এই ইউনিক সীতাভোগ মিহিদানা বিশ্ব বাজারে আরও বড় জায়গা করে নেবে বলে আশা প্রদীপ বাবুর।