ছাব্বিশে পা দিলো SMS

ছাব্বিশে পা দিলো SMS

Wednesday December 06, 2017,

3 min Read

দিনটা ছিল ৩রা ডিসেম্বর ১৯৯২। আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে নিল প্যাপওয়ার্থ নামের এক ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার একটি কম্পিউটার থেকে Merry Christmas এই দুটো শব্দ লিখে প্রথম বারের জন্যে পরীক্ষামূলক-ভাবে পাঠিয়েছিলেন একটি মোবাইল ফোনে। ভোডাফোনের ডিরেক্টর রিচার্ড জারভিসের মুঠো ফোনে সেদিন এসেছিল প্রথম মেসেজ, বেজেছিল প্রথম নোটিফিকেশন টোন। প্রথম এসএমএস-এর ইউরেকা মুহূর্তে উল্লাস হয়েছিল সেদিন। 

image


তারপর শুরু হল বাণিজ্যিক ব্যবহার। শুরুর দিকে অনেক টাকা লাগত এসএমএস-এ। সেসব সময় প্রয়োজন না পরলে কেউ কাউকে এসএমএস চালাচালি করত না। ফলে এসএমএসের গুরুত্বও ছিল অনেক। ধীরে ধীরে দাম কমল। ভালোবাসার বন্যা বয়ে গেল মোবাইল ফোনে। hi, I love You, Rest in peace, All the best থেকে শুরু করে তুমি কেমন আছো, কখন আসবো, মিটিংয়ে ব্যস্ত পরে ফোন করছি গোছের নানান মেসেজে ভরে যেতে শুরু করল ইনবক্স। ভরে যেত টুকলি এসএমএস-এও। সৌজন্যের সেই প্লাবনের যুগে ক্যারেক্টার সচেতনতাও ছিল। ১৬০ ক্যারেক্টারে মনের ভাব প্রকাশ একটা চ্যালেঞ্জ। নতুন নতুন অ্যাব্রেভিয়েশন আবিষ্কৃত হয়েছে এই পঁচিশ বছরে। ILU, RIP, LOL, FYI, আরও কত কী...। ভাষাবিদরা বলছেন, এসএমএস-এর দৌলতে ভাষা বদলে গিয়েছে দ্রুত। সব ভাষা। বাংলা, হিন্দি, উর্দু, তামিল, তেলেগু, সোয়াহিলি, আসান্তি, ইংরেজি, চীনা, জাপানি এমনকি ভাষা তাত্ত্বিকদের বিচারে ম্যাসকুলিন শিরোপা পাওয়া ফরাসিও বদলাতে শুরু করে। এসএমএসের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ১৪০ ক্যারেক্টারে ট্যুইটার বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলল। মাইক্রো ব্লগিং শুরু হয়ে গেল রমরম করে। ১৯৯২ থেকে ২০১৭ এই পঁচিশটা বছরে গোটা দুনিয়ার কমিউনিকেশন টেকনোলজির মানচিত্রও উল্টে পাল্টে গেছে। এসএমএস পাঠানো এক ধরণের ডেটা ট্র্যান্সফার। আজ সেই টেকনোলজি স্পেসেও তুমুল তোলপাড় চলছে। নিত্য নতুন প্রযুক্তি আসছে পুরনো প্রযুক্তি চলে যাচ্ছে অকেজো জঞ্জালের তালিকায়। বদলে যাচ্ছে ডিভাইস। গুগলের অ্যানড্রয়েডের ভার্সন বদলে বদলে যাচ্ছে কয়েক মাসের মধ্যেই।

Yahoo Messenger, AOL, NetScape, ICQ এখন অতীত। Web2.O থেকে Web3.0 পেরিয়ে চতুর্থ ভার্সনে পৌঁছে গিয়েছে ইন্টারনেট। মাইস্পেস, অর্কুটকে হারিয়ে ফেসবুক এখন একটি ভার্চুয়াল দেশের নাম। নেট নিউট্রালিটি নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। ডিজিটাল ডিভাইড নিয়ে গলার শিরা ফুলিয়েছেন তাত্ত্বিক সমাজবিদরা। এখনও এসএমএস অনেক মানুষের নিত্য ব্যবহার্য। পঁচিশ বছর পরও। 

যদিও জেনারেশন ব্যাপারটা এখন দু এক বছরের মধ্যে বদলে যাচ্ছে। কদিন আগেও থ্রি জি নিয়ে হই চই ছিল। এখন ফোর জি পুরনো হতে বসেছে। ভয়েজ ওভার ইন্টারনেট কল একটা সময় মগজের ঘিলুতে উত্তেজনা তৈরি করত। আর এখন মুকেশ আম্বানির জিওর জমাটি আয়োজনে কমিউনিকেশন জল ভাত হয়ে গেছে। বিনে-পয়সায় কল করা যায়। মনের কথা প্রিয়জনকে কিংবা অ-প্রিয়জনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বুঝিয়ে বলা যায় বিনে পয়সায়। এস এম এস পাঠাতেও কোনও পয়সা লাগে না। তবু এসএমএস আজকাল বিশেষ একটা করেন না কেউ। আপনি নিজেই বলুন না, দিনে কটা এসএমএস আপনি করেন! তুলনায় হোয়াটসআপ কিংবা হাইক, স্ন্যাপচ্যাট কিংবা টেলেগ্রামের মত অ্যাপে আপনার আঙুল বেশি চলে। ইনবক্সে শুধু আসে বিরক্তিকর প্রোমোশনাল এসএমএস। আনরিড ম্যাসেজে ভরে থাকে ইনবক্স। 

একটি সমীক্ষা বলছে ২০১২ সালের পর থেকে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে সিস্টেম ফোনের এসএমএস পরিষেবা। যত সময় এগোবে ততই এসএমএস হারাবে তার প্রয়োজনীয়তা। যেমন ভাবে ইমেইল পোস্টাল সিস্টেমের চিঠিকে ঐতিহ্যের সম্মান দিয়েছে অনেকটা সেরকম। কিন্তু ভুললে চলবে না। ২৫ বছর আগের এই বিপ্লবটাই আজকের যোগাযোগ মাধ্যমকে হাতে ধরে পরিণত করেছে। শিখিয়েছে মনের ভাব ব্যক্ত করার জন্যে শব্দগুলো দ্রুত এবং কার্যকর ভাবে পৌঁছে দেওয়াটা জরুরি।