ফুল ফুটিয়ে বদলে দিলেন বর্ধমানের "ডাকাত গ্রাম"

ফুল ফুটিয়ে বদলে দিলেন বর্ধমানের "ডাকাত গ্রাম"

Tuesday January 19, 2016,

2 min Read

বর্ধমানের পূর্বস্থলীর একটি প্রত্যন্ত এলাকা। গ্রামটির নাম ডাকাত গ্রাম। সময়টা ছিল ১৯৫৫-৫৬। হাড়হিম করা সব অপকম্মের আতুড়ঘর ছিল এই অঞ্চল। রীতিমত কাট থ্রোট আইল্যান্ড। এলাকার অনেকের নামেই পুলিশের খাতায় পাতার পর পাতা লেখা হত। আর এখন এখানে দো আঁখে বারা হাত স্টাইলে সবাই কৃষক। ডাকাতি চুরি রাহাজানি নয় ঘুরে দাঁড়িয়ে মানুষের মত বাঁচতে শিখেছেন এই গ্রামের মানুষ। মূলত ফুল চাষ করেন এঁরা। তাই ডাকাত গ্রাম এখন ফুল গ্রাম। সূর্য ডুবলে যে গ্রামের রাস্তায় বেরতে কোলজের জোর লাগত, সেখানে এখন ভোর রাত থেকে চলে ফুলের চাষ। দূর দূরান্ত থেকে গাড়ি আসে। ফুল গাছের চারা সাপ্লাই করে এই গ্রাম। ফুল গাছের চারা চলে যায় বিহার , ঝাড়খন্ড, অসম, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ। আর এসব সম্ভব হয়েছে এক কৃষকের চেষ্টায়। তাঁর নাম শম্ভুনাথ দত্ত। 

image


উদ্যোমি এই কৃষকের এক বিঘা জমিতেই বুনলেন বদলের বীজ। ফুল, বেগুন আর লঙ্কা চাষ করলেন। যারা রাতে চুরি ডাকাতি করত তাদেরকেই চাষের কাজে লাগালেন। সতপথে অর্থ উপার্জনের রাস্তা পেয়ে ধীরে ধীরে বদল এল। এবার অল্প অল্প করে পয়সা জমিয়ে নিজেরাই জমি কিনে চাষ শুরু করলেন। যে হাতে টাকা পয়সা ছিনতাই, চুরি ডাকাতি চলত সে হাতেই ফুল ফুটল। হাসি ফুটল চোখের কোণে। স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় এখানকার ফুলের চারার চাহিদা বাড়তে লাগলো। যেখানে একসময় ছিল ধূ ধূ প্রান্তর সেখানে এখন গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ক্যালেন্ডুলারা আলো করে আছে। গোটা গ্রাম পরিশ্রমের সুগন্ধে মম করে।

image


শম্ভুনাথবাবুর দেখানো পথেই চলছেন তাঁর ছেলে শঙ্কর দত্ত। তিনি বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে এই চাষকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হর্টিকালচার বিভাগ থেকে প্রথাগত প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বাবার সেই এক বিঘা জমি বাড়তে বাড়তে এখন ছত্রিশ বিঘা। সবটাই ফুলে ফুলে ঢাকা। এই চাষে নিশ্চিত লাভ। আর তাতেই সকলে উৎসাহিত। বাংলা ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে চাহিদা বেড়েছে এখানকার ফুলের চারার। নিজে তৈরি করেছেন শঙ্কর মাস্টার নার্সারি নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সব চাষিকে একত্রিত করে পূর্বস্থলী নার্সারি ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি গঠন করেছেন। এখন নয় নয় করে সাড়ে চারশো বিঘা জমিতে ফুলের চারা চাষ হচ্ছে। সকলের মাটির বাড়ি পাকা হয়েছে। 

শম্ভু বাবু নিজের উদ্যোগে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। কেউ এই ব্যবসায় আসতে চাইলে তার পাশে দাঁড়ান, সহযোগিতা করেন। এলাকার প্রায় পনেরো হাজার মানুষকে তিনি এই ব্যবসার সাথে যুক্ত করেছেন। পূর্বস্থলীতে ঝুঁকি নিয়ে ধান বা আলু চাষ না করে ফুল চাষ করে বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করছেন কৃষকরা। আর এভাবেই খারাপ স্মৃতি ফুল দিয়ে ঢেকে দিয়েছে ডাকাত গ্রাম।