গোটা দেশের স্টার্টআপ ঝড়ের ঝাপটা এসে পড়ুক কলকাতায়। আগামী ৫ বছরে ১০ হাজার উদ্যোগপতি তৈরির লক্ষ্য মাত্রা নিক পশ্চিমবঙ্গ। তৈরি হোক পাঁচ হাজার কোটির সম্পদ। গ্লোবাল বিজনেস সামিটের মঞ্চ থেকে ডাক দিলেন মোহনদাস পাই। তিনি যখন মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন বেঙ্গালুরুতে যে স্টার্টআপ সাফল্য দেখতে পাচ্ছেন তার অধিকাংশই বাংলার তরুণ তরুণীদের হাতে গড়া। হাজার হাজার বাঙালি টেকনোক্র্যাট বেঙ্গালুরুতে এবং দেশের অন্যত্র জমিয়ে দিয়েছেন। তুরন্ত উত্তর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপনি ওদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন সরকার সবরকম সাহায্য করতে তৈরি। এটাই ছিল স্টার্টআপ দুনিয়ার কাছে রাজ্যসরকারের দেওয়া নতুন বছরের গুরুত্বপূর্ণ উপহার।
এটাকেই বোধহয় বিগ বং থিওরি বলে। প্রতিবছর শীতে এরকমই গাগরম করা বাণিজ্যিক বিস্ফোরণ হয় কলকাতায়। লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের আশ্বাস পান বাংলার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। দেশের তাবড় তাবড় শিল্পপতিরা আসেন। রাজনৈতিক জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আসেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও। বাংলা প্রতিবছর বড়দিনের পর নতুন বছরে একটা সেলিব্রেশন পায়। এবারও তাই হল। তবে এবার তুলনায় আরও একটু যেন বেশিই অ্যগ্রেসিভ ছিল বেঙ্গল সামিটের মঞ্চ। এসেছিলেন দেশের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী পিযুষ গোয়েল, কেন্দ্রীয় সড়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু, রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বাণিজ্য জগত থেকে দেশের উজ্জ্বল প্রায় সব নক্ষত্রই হাজির হয়েছিলেন বেঙ্গল গ্লোবাল সামিটে। এবারই প্রথম মুকেশ আম্বানি আসেন সামিটের মঞ্চে। এসেই দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগকে। বললেন বিনিয়োগের জন্যে পশ্চিমবঙ্গকেই তিনি রেকমেন্ড করেন। কারণ এখানে ব্যবসা করা সোজা। অন্তত বিজনেস সামিটের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুকেশের সার্টিফিকেট বাংলার টেম্পারেচার বাড়িয়ে দিল।
মুকেশ বলেন ইতিমধ্যেই তাঁর সংস্থা ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে এই রাজ্যে। ভবিষ্যতে আরও বিপুল বিনিয়োগের পথ খুঁজছেন ওঁরা। বাংলার লক্ষ গ্রাম নিরাশায় আলোহীনতায় ডুবে নিস্তব্ধ নিস্তেল আর থাকবে না। এবার বাংলার সমস্ত স্কুল, আড়াই হাজারেরও বেশি কলেজ, হাসপাতাল এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে হাই স্পিড ইন্টারনেট দিয়ে জুড়ে দেবেন মুকেশ। গোটা রাজ্যে ইন্টারনেট ইনফ্রাস্ট্রাক্চার তৈরির মৌলিক কাজটাই করবে মুকেশের সংস্থা। শুধু তাই নয় ছোটো আর মাঝারি উদ্যোগপতিদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজ্যের শিল্প মানচিত্রে দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব বিস্তার করতে চান এই বিজনেস টাইকুন। পাশাপাশি রাজ্যে ক্রীড়া ক্ষেত্রকেও বিকশিত করতে চান তিনি। তাঁর রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন চায় রাজ্যের একলক্ষ তরুণ ফুটবলারকে প্রশিক্ষিত করে তুলতে।
ফোকাস বড় শিল্প টানায় থাকলেও এবারের বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটের মূল মন্ত্রই ছিল স্টার্টআপ। সমান গুরুত্বের সঙ্গে জায়গা করে নিতে পেরেছে ছোটো ও মাঝারি শিল্পের দাবিও। বেঙ্গালুরু থেকে এসেছেন স্টার্টআপ মুভমেন্টের আইকন মোহনদাস পাই। বাংলার স্টার্টআপ পলিসি তৈরিতে মেন্টরিং করবেন পাই। এখবর গত অক্টোবর থেকে মুখে মুখে ফিরছিল। কিন্তু এদিন চক্ষু কর্ণের সমস্ত বিবাদ ভেঙে খোদ মুখ্যমন্ত্রী বলেই দিলেন মোহনদাস পাইকে আপনি বাংলা থেকে চলে যাওয়া হাজার হাজার উদ্যোমী তরুণ তরুণীদের বাংলায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন সরকারের তরফ থেকে যা লাগবে তাই দেওয়া হবে। তৈরি করে দেওয়া হবে স্টার্টআপ গঠনের উপযুক্ত পরিবেশ। ঠিকঠাক পরিকাঠামো। কিন্তু বাংলার হারিয়ে যাওয়া সম্পদ ফিরিয়ে দিন এই ছিল তাঁর আর্তি।