বন্যপ্রাণের ছবি তুলতে Going Wild নতুন স্টার্টআপ

বন্যপ্রাণের ছবি তুলতে Going Wild নতুন স্টার্টআপ

Thursday December 17, 2015,

4 min Read

স্টার্টআপ সংস্কৃতিতে ক্রমেই মজছে কলকাতা। চাকরি জীবনের নিশ্চয়তা ছেড়ে প্যাশনকে পেশাতে পরিণত করতে সাহসী হচ্ছে বাঙালি। শখ, বুদ্ধিমত্ত্বা ও মননশীলতার মেল বন্ধনে গড়ে তুলছেন অভিনব সব উদ্যোগ।

image


সৌম্যজিত, তমানুদ ও দিব্যেন্দু, তিন বন্ধুর এমনই এক উদ্যোগ, গোয়িং ওয়াইল্ড (www.goingwild.in)। কেউ চাকরি করতেন তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে, কেউ রিটেলে তো কেউ রিয়্যাল এস্টেটে। ঘুরে বেড়ানো ও ছবি তোলা এই নেশাতেই গাঢ়তর হয়েছিল বন্ধুত্ব। সময় সুযোগ পেলেই কখনও একা, কখনও বা দল বেঁধে বেরিয়ে পড়তেন। জঙ্গল ও বন্য পশু পাখীই ছিল সবথেকে প্রিয় ছবির বিষয়। দেশের নান জঙ্গলে ঘুরে বেরিয়ে তুলেছেন অসাধারণ সব ছবি, হয়েছে অভিজ্ঞতা।

এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের মতো করে কিছু গড়ে তোলার ইচ্ছেটা তখনই মাথা চাড়া দিচ্ছিল। নিজেদের সব থেকে প্রিয় কাজটাকেই যদি পেশা করে ফেলা যায়, আরও অনেককে স্বাদ দেওয়া যায় এই ভালোলাগার; সেখান থেকেই শুরু পরিকল্পনা।

“গত বেশ কয়েক বছর ধরে বাড়ছে ছবি তোলার জনপ্রিয়তা, ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রবেশ আমূল বদলে দিয়েছে ফটোগ্রাফির জগতটাকে, সাধারণের নাগালের মধ্যে এসেছে নানা উন্নতমানের ক্যামেরা ও লেন্স, নেহাতই শখের ফটোগ্রাফাররাও অসাধারণ সব কাজ করছেন। তাদেরই কিছুটা হাত পাকানোর সুযোগ করে দিই আমরা”, বললেন গোইং ওয়াইল্ডের সহ প্রতিষ্ঠাতা সৌম্যজিত।

image


ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি ট্যুর, কাস্টমাইসড্ ওয়াইল্ড লাইফ ট্যুর ও ফটোগ্রাফি ওয়ার্কশপের আয়োজন করে গোয়িংওয়াইল্ড। কোম্পানির শুরু ২০১২ এর অক্টোবর মাসে।

নিজেদের ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফির অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে সৌম্যজিতদের। “দীর্ঘদিন ধরে নিজেরা বিভিন্ন জঙ্গলে ঘুরেছি, ফলে সেই জায়গাগুলি সম্পর্কে খুব ভাল করে জানা বোঝা রয়েছে, কোন সময় কোথায় ট্যুর পরিকল্পনা করলে পর্যটকরা সব থেকে ভাল অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারবেন সে বিষয়গুলি আমাদের কাছে পরিস্কার”। স্থানীয় গাইড ও ট্র্যাকারদের সঙ্গেও দীর্ঘদিনের পরিচয়ে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে, ফলে আমরা দায়িত্বশীল পর্যটন গড়ে তুলতে পেরেছি”, জানালেন সৌম্যজিত।

তাঁরা নিজেরা সঙ্গে যান প্রতিটি ট্যুরে, এবং নিশ্চিত করেন যাতে সেরা ছবিটি তুলে আনতে পারেন অতিথীরা।

image


প্রথম আর্থিক বছরে মাত্র চারটি ট্যুর করতে পেরেছিলেন সৌম্যজিতরা, এখন প্রতি মাসে গড়ে ৪-৫ টি ট্যুর করেন। সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট প্রচারে সাহায্য করেছে তাঁদের, এছাড়াও ছিল বিভিন্ন মানুষের সহায়তা। “একবার শুরু করলে, আপনি যদি অতিথীকে খুশি করতে পারেন, তার থেকেই আরও অনেকের কাছে ছড়িয়ে যাবে আপনার কথা”, বললেন সৌম্যজিত। সুন্দরবন, বান্ধবগড়, পাঙ্গোলাখা, তাবোড়া, রণথম্বোর ইত্যাদি নানা জঙ্গলে বন্য পশু ও পাখীর ফটোগ্রাফি ট্যুরের আয়োজন করেন তাঁরা। নির্দিষ্ট দিনের ট্যুর তো রয়েছেই, এছাড়াও কর্পোরেট সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবার ও ব্যক্তির জন্য তাঁদের প্রয়োজন মতো ট্যুরেরও আয়োজন করা হয়।

image


প্রত্যেক সদস্যের দিকে আলাদা করে নজর দেওয়া হয় ট্যুরে। “ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফির একটা উত্তেজনা রয়েছে, রয়েছে কিছু কৌশল, এখানে আপনার ফটোগ্রাফির বিষয় জীবন্ত বস্তু, সে আপনার জন্য অপেক্ষা করবে না, তার মধ্যেই তুলে নিতে হবে সেরা ছবিটা, যা আপনার সারা জীবনের সঞ্চয়, এই কৌশলটাই আয়ত্ত্ব করতে সাহায্য করি আমরা। নিয়ে যাই সঠিক জায়গায়”, বললেন সৌম্যজিত। তিনি আরও বলেন, “সারাবছর ধরে বিভিন্ন বনাঞ্চলে কী হচ্ছে সে বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর রাখি আমরা, যা আমাদের ট্যুর পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে”।

image


ট্যুরের পাশাপাশি ফটোগ্রাফির কর্মশালাও আয়োজন করে গোয়িংওয়াইল্ড। থাকে ক্লাসরুম সেশন, যেখানে ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফির প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়। রয়েছে অনলাইন কর্মশালার ব্যবস্থাও। ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী নিতে পারে প্রাথমিক পাঠ। সাপ্তাহিক কোর্স মেটেরিয়ালের পাশাপাশি রয়েছে নিয়মিত মেন্টরদের সঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কথা বলার সুযোগ। ব্যক্তিগত ওয়ার্কশপেরও ব্যবস্থা করে গোয়িং ওয়াইল্ড যেখানে একজন মেন্টর সরাসরি একজন অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে কথা বলেন, অংশগ্রহণকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী এটা একদিন বা তার বেশ সময়েরও হতে পারে। স্থান ঠিক করা হয় অংশগ্রহণকারীর সুবিধা অনুযায়ী। প্রাথমিক পাঠের শেষে অংশগ্রহণকারীকে তাঁদের সঙ্গে কোনো ট্যুরে নিয়ে যাওয়া হয় হাতে কলমে শিক্ষার জন্য। শিখিয়ে দেওয়া হয় খুঁটিনাটি।

image


অনলাইন ও অফলাইন মার্কেটিং বাড়ান, শহরের কেন্দ্রে একটি অফিস তৈরি, কর্মী নিয়োগ ও আরও উন্নতমানের ক্যামেরা, লেন্স ইত্যাদি কেনার জন্য বিনিয়োগ সংগ্রহের চেষ্টা করছে গোয়িং ওয়াইল্ড।

ভারতের প্রাকৃতিক ঐতিহ্যকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তাঁরা চান আরও বেশি সংখ্য বিদেশী অতিথীকে নিয়ে যেতে। এছাড়াও ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফিকে একটি মেইনস্ট্রিম পেশায় পরিণত করতে চান তাঁরা। আগামী দিনে নিজেদের একটি গ্লোবাল ব্র্যান্ড হিসেবেই দেখে গোয়িং ওয়াইল্ড। এছাড়াও পরিবেশ সংরক্ষণ ও বনাঞ্চলে স্থানীয় মানুষের উন্নতির জন্যও কাজ করতে চান ও এটাকে তাঁদের কাজের অঙ্গ হিসেবেই মনে করেন তাঁরা।