ভিড়ের মাঝে চিনিয়ে দেবে ‘রেড পোলকা’

ভিড়ের মাঝে চিনিয়ে দেবে ‘রেড পোলকা’

Thursday September 10, 2015,

4 min Read

সচরাচর যে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলির সঙ্গে আপনারা পরিচিত এবার সেগুলি সযত্নে সরিয়ে রাখুন। কারণ আপনার অপেক্ষায় রয়েছে আরও এক্সাইটিং কিছু। এখন নতুন নতুন ফ্যাশন প্ল্যাটফর্ম আবিষ্কারের সময়। আজকাল এত ই-কমার্স, অ্যাপসের ভিড়ে ঠিক ব্র্যান্ড খুঁজে পাওয়া সত্যিই মুশকিল। তাই বিশাখা সিং, বিশ্বাস করেন, যো দিখতা হ্যায়, ও বিখতা হ্যায়-এই আদর্শে। বিশাখা একাধারে ‘রেড পোলকা’র সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা।

‘রেড পোলকা’ আদতে অন লাইন ফ্যাশন এবং লাইফস্টাইল পোর্টাল। ক্রেতা টানতে পণ্যকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা মূল লক্ষ্য। মূলত বিক্রেতাদের জন্যই এই পোর্টাল, একটা প্ল্যাটফর্ম যেখানে নানান ধরণের ডিজাইন ক্রেতাদের অপেক্ষায় থাকে। ভিড়ের মধ্যে নিজেদের ক্লায়েন্টের পণ্য আলাদাভাবে চিনিয়ে দেওয়াই পোর্টালের ইউএসপি। ‘রেড পোলকা’ আপাতত মহিলা ক্রেতাদের কথা ভেবেই পোর্টাল সাজিয়েছে।

image


১৫ বছর ধরে মিডিয়া মার্কেটিং (বিপণন)-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিশাখা। কাজ করেছেন দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া গ্রুপ, সিএনবিসি টিভি এইটিন, টাইমস নাওয়ের ব্র্যান্ডিং এবং লঞ্চিং স্ট্র্যাটেজি নিয়ে। খবরের চ্যানেলগুলির সঙ্গে কাজ করার সময় গ্রাহকদের মানসিকতা, তাদের চাওয়া পাওয়ার ভালই অভিজ্ঞতা হয়েছে বিশাখার।‘ ক্রেতাদের মানসিকতা,তাদের আচরণ বুঝতে অনেক গবেষণা করেছি আমি’, জানান বিশাখা। সেটাই বড় শিক্ষা দিয়েছিল বিশাখাকে। তাঁকে বুঝতে শিখিয়েছে, ক্রেতাদের মন বুঝে যদি ব্র্যান্ডের মাধ্যমে বার্তা দেওয়া যায়, তহলে চমৎকার ঘটতে পারে। উদাহরণ টেনে প্রাক্তন মিডিয়াকর্মী বলেন, টাইমস নাউয়ের সূচণার সময় কাজ করতে গিয়ে দেখেছেন, দর্শকের মন বুঝে যখন তারা স্ট্র্যাটেজি বদলের দিকে নজর দিলেন তখন মার্কেট শেয়ার হঠাৎ ৫শতাংশ বেড়ে ৫৫ শতাংশে দাঁড়ায়।

বাজার এবং ক্রেতাদের মানসিকতা বুঝতে বিশাখা ফিউচার গ্রুপে যোগ দেন। সেখান থেকে নিজের প্রথম সংস্থা 'আরোরা কমস' শুরু করেন। 'আরোরা কমস' ডিল করে ব্র্যান্ড নিয়ে।বাজারে ব্র্যান্ডের পরিচিতি তৈরি করতে সাহায্য করে। সেই সময় বিশাখা নানা ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করেছেন। বোঝার চেষ্টা করেছেন কীভাবে কেনাকাটার ধরণ ব্র্যান্ডের বিক্রি বাড়িয়ে দেয়। বুঝতে পারেন ক্রেতাদের অভ্যেস বদলাচ্ছে, বদলাচ্ছে শপিংয়ের ধরণও। ‘আমি মহিলাদের কেনাকেটার বিষয়টির দিকে নজর দিই। রিসার্চ করে বুঝতে পেরেছি মহিলাদের জিনিসপত্র বাছাবাছির জন্য বিরাট সম্ভার চাই’, বলেন বিশাখা। তাই বোধহয় উইন্ডো শপিং তাদের দারুণ পছন্দ,কারও কারও তো রীতিমতো অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। আর এই উইন্ডো শপিংয়ের আশ মেটাতে ‘রেড পোলকা’র জন্ম।

অবচেতনভাবে উইন্ডো শপিংয়ের অভ্যেস সব মহিলার মধ্যেই রয়েছে। ধরুন ডিনারে যাচ্ছেন। রাস্তায় কোনও দোকান পড়ে গেলে সাজানো কপাটে একবারটি তাকিয়ে দেখবেনই। ‘রেড পোলকা’, তিনি বলেন, ‘মহিলা ক্রেতাদের অভ্যেস এবং মানসিকতার দিকটা মাথায় রেখে তাদের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করে। বিক্রেতাদের ব্যাপারে বিশাখা বলেন, আজকাল বিক্রির জন্য দোকানদারদের অনলাইন-অফলাইন নানা বিকল্প রয়েছে। তার ফলে ব্যাপ্তি এত বেড়ে গিয়েছে তাঁদের পক্ষে সামলে ওঠা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক এই জায়গাটাকেই কাজের জন্য বেছে নিয়েছে ‘রেড পোলকা’।

বিশাখা  সিং

বিশাখা সিং


জামা কাপড়, বাড়ি সাজানোর জিনিসপত্রে নানা ডিজাইন ক্রেতাদের সামনে নিয়ে আসে ‘রেড পোলকা’। অন্যদিকে, তালগোল পাকানো হাজারো জিনিসের ভিড়ে নিজেদের পণ্য হারিয়ে যাওয়া থেকে বিক্রেতাদের মুক্তি দেয়। ‘শুধু ই-কমার্স নয়, সব ব্যাবসায়ীদের ব্যবসা সচল রাখা মূল উদ্দেশ্য’, বলেন বিশাখা।

অনলাইনে পণ্য কীভাবে ডিসপ্লে হবে তার জন্য থিম ভাবা হয়। মুড অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে সেটা বদলে যায়। ‘রেড পোলকা’র উদ্দ্যেশ্য ক্রেতার নজর ধরে রাখা। তার জন্য ভিড়ের মাঝে কীভাবে পণ্যকে আকর্ষণীয় করে তুলবে ভেবে ভেবে তারই উপায় খোঁজে বিশাখার অনলাইন পোর্টাল। ‘ক্রেতাদের আগ্রহ এবং তাদের আচরণ লক্ষ্য করি। প্রত্যেকের পছন্দ অনুযায়ী থিমের বদল ঘটাতে থাকি’,জানান বিশাখা। উদাহরণ হিসেবে বিশাখা বলেন, তাঁদের একটি থিম ‘ব্রিথ ইজি’, গ্রীষ্মকালের কথা মাথায় রেখে এই থিম সাজানো হয়েছে। সব থিমই মূলত পোশাক নিয়ে। পোর্টালে এক একটি আর্টিকেলে পোশাকের সঙ্গে মানানসই কেমন গয়না থাকবে, কোন অনুষ্ঠানে কেমন পোশাক হবে আরও নানা পরামর্শ থাকে । আরও একটু গভীরে গিয়ে ওয়ার্কিং উইমেন অর্থাৎ মহিলারা যারা চাকরি বা নানা জায়গায় কাজ করেন তাদের নিয়েও ‘রেড পোলকা’ টিমের নানা পর্যবেক্ষণ রয়েছে। আর্টিকেলেও তাই মূলত কাজের পোশাক এবং তার আনুষাঙ্গিক হালকা গায়নাগাটির বিষয়গুলি উল্লেখ থাকে।

‘রেড পোলকা’র আয় কীভাবে? বিশাখা জানান, বিক্রেতাদের পণ্য অনলাইন প্রদর্শণের জন্য নামমাত্র ফিস এবং পণ্য বিক্রির ওপর কমিশন নেওয়া হয়। এখনও পর্যন্ত ৩৫টি ব্র্যান্ড পোর্টালে রেজিস্টার করেছে। ৩০ শতাংশ ক্রেতা বারবার ফিরে আসেন । বিশাখার মতে, এটা খুব ভালো লক্ষণ। যার মানে দাঁড়ায়, পোর্টালে দেখা জিনিসপত্র তাঁদের মনে ধরেছে। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং মডেলেও কাজ করছে ‘রেড পোলকা’।

২০১৫র জানুয়ারিতে ‘রেড পোলকা’ লঞ্চ হয়। এনজেল ইনভেস্টরদের(যাদের মনে করা হয় ব্যবসার দেবদূত, টাকা যুগিয়ে সাহায্য করেন)কাছ থেকে ১কোটি ৬০ লক্ষ টাকার ফান্ডিং জোগাড় করছে। দলে আরও দক্ষ পেশাদার লোক আনার ইচ্ছে রয়েছে বিশাখার। শিগগিরই ‘রেড পোলকা’র অ্যাপও আসতে চলেছে। রিসার্চ, বিচার বিশ্লষণের জন্য চিফ টেকনোলজি অফিসার(CTO)এর পাশাপাশি আরও দক্ষ পেশাদের নিয়োগ করা হয়েছে।

গত কয়েক মাসে ফ্যাশন পোর্টালে বিনিয়োগ বেড়েছে, বাজার দখলের প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। যেভাবে ই-কমার্স সাইটের বহর বাড়ছে, সেই ভিড়ে আলাদা করে অস্তিত্বের জানান দিতে অন্যরকম কিছু ভাবনা অত্যন্ত জরুরি।আর সেটাই প্রতিনিয়ত করে চলেছে বিশাখার ‘রেড পোলকা’।