বর্ধমানের টুনি ব্যবসায়ীর বিজ্ঞানী হওয়ার কাহিনী

বর্ধমানের টুনি ব্যবসায়ীর বিজ্ঞানী হওয়ার কাহিনী

Friday November 27, 2015,

3 min Read

প্রথম জীবনে টুনি লাইট দিয়ে ডেকরেশনের কাজ করতেন। সবাই তাঁকে টুনি লাইট ম্যান বলে চিনত। নাম চন্দ্রনারায়ণ বৈরাগ্য। বর্ধমানের মেমারির মানুষ। সেই টুনি লাইটের ব্যবসায়ী ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন বিজ্ঞানি। ১২ টি আবিস্কারের কৃতীত্ব রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। দীর্ঘ লড়াই পেরিয়ে আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও প্রতিবন্ধকতা টপকে আজ তার পরিচয়ে মেমারি গর্বিত। জয়ের শিখরে পৌঁছেছেন। স্কুলে শিক্ষকের চাকরি করেছেন দীর্ঘদিন। কিন্তু নিজের উদ্ভাবনী ক্ষমতায় আবিষ্কার করেছেন পদার্থ বিজ্ঞান ও জীব বিজ্ঞানের নতুন নতুন দিক। পদার্থ বিদ্যায় কোনও ডিগ্রী না থাকলেও পদার্থ বিজ্ঞানে উন্নত যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করে সাড়া ফেলেছেন বিজ্ঞানী মহলে।

image


সৃষ্টির নেশা,লড়াই আর নতুন কিছু করার জেদ সাফল্যের যে একমাত্র চাবিকাঠি তার সঠিক উদাহরণ এই গল্পের মূল চরিত্র চন্দ্রনারায়ণ। বেশ কয়েক বছর হল শিক্ষকতার চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। পেয়েছেন জাতীয় শিক্ষকের সম্মান। কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে টুনি লাইট ডেকরেশন ব্যবসায়ীর আবিষ্কারক হওয়ার কাহিনী। শিক্ষাগত যোগ্যতা নয় , উদ্ভাবনী ক্ষমতাই যে সাফল্যের একমাত্র চাবিকাঠি তাই-ই প্রমাণ করেছেন এই বাঙালী গবেষক। খুব শিগগিরই বাজারে আসছে তাঁর তৈরি “চন্দ্র মাইক্রোস্কপিক স্লাইড প্রজেক্টর”।

শুরুটা ছিল খুব কঠিন। আর্থিক প্রতিকুলতা মধ্যে পড়াশোনা চালানোই চ্যালেঞ্জ ছিল। পড়াশোনার খরচ চালাতে একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় আলোক সজ্জার ব্যবসা শুরু করেন। সামান্য পুঁজি। বাল্ব আর টুনি লাইট দিয়ে ডেকরেশনের কাজ করতেন। নিজস্ব ভাবনায় নিত্যনতুন আলোকসজ্জায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠললেন চন্দ্রনারায়ণ। পাশাপাশি শুরু হল যন্ত্রপাতি মেরামতির কাজ। এই ভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর পৈতৃক মজে যাওয়া পুকুর সংস্কার করে বাজার থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেন। বিধি বাম। বন্যায় ভেসে গেল পুকুরের মাছ। হাল ছাড়েননি। সামনে বাধা এলে যেন নতুন কিছু করার জেদ তার উপর চেপে বসে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই মাছ চাষিদের জন্য নতুন কিছু করার পরিকল্পনা করেন। মাছ চাষের জন্য উদ্ভাবন করলেন নতুন ফর্মুলা । নাম দিলেন “চন্দ্র হ্যাচারি”।

শুরু হল নতুন পথ চলা। আবিষ্কার করলেন নতুন এক ফিস রিপ্রডাক্টিভ চেম্বার। মাছ চাষে এ এক ব্যাতিক্রমি ভাবনা। যেখানে মাছেদের প্রজনন করিয়ে ডিম না সরিয়ে কেবল মাছকে সরিয়ে ঐ চেম্বারেই ডিম পোনা উৎপাদন করা যায়। চন্দ্রনারায়ণ দাবি করেন, এই পদ্ধতিতে চাইনিজ হ্যাচারির তুলনায় তিনগুণ বেশি ডিম পোনা উৎপাদন হয় এবং খরচ তিন ভাগের এক ভাগ। চন্দ্র হ্যাচারি ভারত সরকারের পেটেন্ট পায়। চন্দ্র হ্যাচারি আজ মাছ চাষিদের কাছে জনপ্রিয়। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে তারা লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বল্প মেয়াদি মৎসচাষ কোর্সে চন্দ্র হ্যাচারি অন্তর্ভুক্ত হল।

ইতিমধ্যেই হুগলীর একটি স্কুলে সহশিক্ষক পদে চাকরিও পেয়ে যান। তবে সৃষ্টিসুখের নেশা থেকে তিনি বেরিয়ে আসতে পারলেন না। জীব বিদ্যায় সাধারণ স্নাতক হয়ে পদার্থ বিজ্ঞানে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় একাধিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছেন। যেমন মাইক্রোস্কপিক স্লাইড প্রজেক্টর, মিনি মাইক্রোস্কোপ, গাছের বৃদ্ধি মাপার যন্ত্র এরকম বহু। তার এই যন্ত্রগুলি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার কাজ অনেক সহজ করেছে। চন্দ্রনারায়ণ বাবুর তৈরি মিনি মাইক্রোস্কোপ ৫০০০ এর বেশী ক্ষমতার বিবর্ধনকারী। এটি আয়তনে ছোট, দামেও সস্তা। আবার একসাথে অনেককে দেখানোর জন্য তৈরি করেছেন ছোটো হালকা মাইক্রস্কপিক স্লাইড প্রজেক্টর। “চন্দ্র মাইক্রোস্কপিক স্লাইড প্রজেক্টর” নামে কিছু দিনের মধ্যেই বাজারে আসতে চলেছে সেই যন্ত্র। এটি আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের জগতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

image


খুলে ফেলেছেন কোম্পানি। নাম দিয়েছেন “চন্দ্র সাইন্টিফিক রিসার্চ সেন্টার”। ইতিমধ্যে ডিজাইন তৈরি হয়ে গিয়েছে। নিজের বাড়িতেই ওয়ার্কসপ করছেন। মার্কেটিং এর কাজের জন্য কর্মী নিয়োগ চলছে। বিভিন্ন জায়গায় ডিস্টিবিউটর খুঁজছেন। রীতিমত হইহই ব্যাপার।

তাঁর প্রাণশক্তি, সৃষ্টিশীলতার কাছে হার মেনেছে বয়স। ৭০ পেরনো এই তরুণ থামতে শেখেননি। মাইক্রোস্কোপের নীচে দিনরাত খুঁজে চলেছেন নতুন কোনও রহস্য। হয়ত আগামিদিনে এই গবেষকের ঝুলি থেকেই বেরিয়ে আসবে অজানা বেড়ালের গল্প। যা আবাক হয়ে দেখবে গোটা বিশ্ব ।