অ্যরা থাকলে ভাবনা কী

অ্যরা থাকলে ভাবনা কী

Thursday November 19, 2015,

4 min Read

পরিসংখ্যান বলছে দিনের বেলায়, যে কোনও একটি সময়ে, প্রায় ছয় লক্ষ ষাট হাজার মানুষ গাড়ি চালানোর সময় ফোন ব্যবহার করেন। আর তার সঙ্গেই জড়িয়ে আছে বিপদের হাতছানি। সৌরভ পালানের গল্পটাই ধরুন। গাড়ি চালাতে চালাতে স্মার্টফোনে চোখ বুলোচ্ছিলেন। আর তার পরিণতি অ্যাক্সিডেন্ট। মারাত্মক গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়ে হসপিটালের বেডে। কিন্তু তাতে শাপে বর হওয়ার মতো ব্যাপারও হয়েছে। 

তাঁর মাথায় আসে কী করে গাড়ি চালাতে চালাতে স্মার্টফোনের ব্যবহারকে নিরাপদ করে তোলা যায়! সেই ভাবনা থেকেই বানিয়ে ফেলেন অ্যরা (Aura) অ্যাপের ব্লুপ্রিন্ট। 

image


সিলিকন ভ্যালি ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবোটিক্সের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে খুলে ফেলেন নিজের সংস্থা মাইটিকার্মা ইনকর্পোরেশন।

সৌরভ পালানের মুখোমুখি ইয়োরস্টোরি

image


অ্যরা (Aura) ব্যাপারটি ঠিক কী?

অ্যরা (Aura) হল স্মার্টফোন এবং মোটরগা়ড়ির একীকরণ। এই মুহূর্তে এই রকম দ্বিতীয়টি নেই, যা কিনা গাড়ি চালানোর সময় স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের নিরাপদ রাখতে সাহায্য করে। এই মুহূর্তে বাজারে যা পাওয়া যায় সবই টাচস্ক্রিন বা স্পর্শ করে ব্যবহার করতে হয়। ফলে গাড়ির চালকের বারবারই রাস্তা থেকে চোখ সরে যেতে বাধ্য। এখানেই পরিবর্তন আনতে চায় অ্যরা (Aura)। স্মর্টফোন ব্যবহারের সময় চালকের মনঃসংযোগ যাতে ব্যহত না হয়, বন্ধুর মতো সেই কাজটাই করে অ্যরা (Aura)।

কোন নির্দিষ্ট প্রয়োজনগুলির কথা আপনারা তুলে ধরতে চান?

গাড়ি চালানোর সময় ফোন ব্যবহার করবেন না। মান্ধাতা আমলের এই সতর্কবার্তায় কোনও কাজ হয় না। এর ওপর আছে এই সংক্রান্ত আইনের সমস্যা। দুর্ঘটনার ভয় আছে। এবং গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো আছে জরিমানার কোপ। এই সব প্রচারে যে কাজের কাজ কিছুই হয় না তার প্রমাণ, গাড়ি চালনোর সময় ফোন ব্যবহারজনিত দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান। এই সমস্যাগুলি নিয়েই অ্যরা (Aura) ভাবনাচিন্তা করে। আমরা চাই গাড়ি চালানোর সময় চালকের মনঃসংযোগ যাতে নষ্ট না হয়, মূল্যবান জীবন যাতে নিরাপদ থাকে।

আপনাদের সামনে চ্যালেঞ্জ কী?

দেখুন, যে-কোনও হার্ডওয়্যার ডিভাইস বানানো সব সময়ই চ্যালেঞ্জের। তার পর, এই ব্যবসা শুরু করতে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন। এক বার হার্ডওয়্যার কিনে ফেলার পর, কোনও ত্রুটি দেখা দিলে তা ফেরতযোগ্য নয়। সফ্‌টঅয়্যারের ব্যবসায় এই সমস্যা নেই। সাধে কী একে হার্ডওয়্যার বলে, এই ব্যবসা আক্ষরিক অর্থেই শক্ত। ফলে যা দাঁড়াল, হার্ডওয়্যার প্রস্তুত করা এবং অর্থের যোগান, এই দুটি হল এই ব্যবসার প্রধান চ্যালেঞ্জ। তবে, ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে, হাতে কলমে অনেক কিছু শিখতে হয়েছে। আর সেই কারণেই সময় এবং মূলধনের দিক থেকেও শুরুর দিকটা অত্যন্ত কঠিন।

কোন বাজার ধরতে চান?

যাঁদের গাড়ি এবং স্মার্টফোন দুটোই আছে। এবং নিজের গাড়ি নিজে চালান। এঁরা সকলেই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহক হতে পারেন। এর বাজার কিন্তু খুব বড়। কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যারই পঁচিশ শতাংশ মানুষ এবং কিশোর-কিশোরী এই বাজারের অন্তর্ভুক্ত। যার বাজার দর একত্র করলে দাঁড়ায় সাত দশমিক চার বিলিয়ন ডলার।

এখন ব্যবসার কোনো পর্যায়ে আছেন?

এই মুহূর্তে আমরা কিক্‌স্টার্টারের মাধ্যমে ক্রাউড-ফান্ডিংয়ের ওপর জোর দিয়েছি। আমারদের প্রোডাক্ট যাঁদের পছন্দ হবে, তাঁরা অগ্রিম অর্থ দেবেন, এই ভাবে যদি লাভজনক ক্রেতা পাওয়া যায়, তবেই আমরা প্রোডাক্টি প্রস্তুত করব এবং ক্রেতাদের কাছে পাঠিয়ে দেব।

পরের পরিকল্পনা কী?

আমরা ঠিক করেছি, রিটেল চ্যানেলগুলির মাধ্যমে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছতে। এবং বিপদমুক্ত ড্রাইভিংয়ের প্রচারে নন-প্রফিট সংস্থাগুলির সঙ্গে কাজ করব আমরা। এর পর আমাদের পরিকল্পনাটি হল অটোমোবাইল ওইএম-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তাদের নতুন গাড়িরগুলির জন্য আমাদের প্রযুক্তির লাইসেন্সিকরণ।

মাইটিকর্মা নিয়ে কিছু বলুন।

সংস্থায় রয়েছে সাত জনের একটি দল। প্রত্যেকেই দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার। এঁদের গুগুল, নভিদিয়া, ডেলের মতো সংস্থায় কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সফ্‌টওয়্যার, নেটওয়ার্কিং, হার্ডওয়্যার এবং মেকানিক্যাল ডিজাইনে এঁরা দক্ষতা সম্পন্ন।

আর আপনি?

রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি আছে আমার। পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই ডিগ্রি অর্জন করেছি। সিলিকন ভ্যালিতে কাজ করেছি তিন বছর। সেই সময় প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলির পাশাপাশি শুরুয়াতি সংস্থাগুলির সঙ্গেও কাজ করেছি। সিলিকন ভ্যালির রোবোটিক্স সংস্থা, যা কিনা সান ফ্রান্সিসকো বে এলাকায় শুরুয়াতি রোবোটিক্স ব্যবসাগুলিকে সাহায্য এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। সেই সংস্থার আমি এক জন সক্রিয় প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

image


আপনার চালিকা শক্তি কী?

আমি সব সময়ই ভাবি প্রয়ুক্তিকে ব্যবহার করে মানুষের জীবন যাপনের মানকে উন্নততর করে তুলতে। যা-কিছু অর্জিত জ্ঞান, প্রযুক্তগত দক্ষতা, তাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের জীবনকে আরও নিরাপদ, মসৃণ করে তুলতে। আমরা বিশ্বাস করি , লক্ষ-লক্ষ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীকে, মোটরগাড়ির চালককে, পথচারীকে মাইটিকর্মা নিরাপত্তা দিতে সক্ষম। আর এটাই আমাদের চালনা শক্তি।

শুরুয়াতি ব্যবসার সাফল্যের চাবিকাঠি কী বলে আপনার বিশ্বাস।

এক, এগিয়ে যেতে হবে। সামনে পথ যদি দেখা নাও যায়, তবু হাঁটতে হবে। এভাবেই এক দিন সঠিক পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

দুই, কর্মতৎপর এবং নির্ভীক হতে হবে। আর এটা আপনাকে প্রতিযোগিতায় টিঁকে থাকতে সাহায্য করবে।

তিন, অর্থ অনেক সমস্যারই সমাধান করতে পারে, এটা ঠিক। কিন্তু , মনে রাখতে হবে, চ্যালেঞ্জটা হল আর্থিক সঙ্গতি ছাড়াই সমস্যার মোকাবিলা করা।

লেখা- মালবিকা ভেলায়ানিকাল, অনুবাদ- দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়

Share on
close