আর পাঁচটা ছাপোষা গ্রামের মতই বনকাপাসি। চাষই ভরসা। আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কেটে যাচ্ছিল গরিব চাষাভুষোদের জীবন। কিন্তু এই প্রত্যন্ত গ্রাম এক শিল্পীর হাত ধরে দেখল অন্য উপায়। বাড়ল উপার্জন। গোটা গ্রাম যা ছিল চাষের ওপর নির্ভরশীল বদলে হয়ে গেল শিল্পীদের গ্রাম। অবলীলায় দেশের শিল্প মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে বনকাপাসি। এক জন শিল্পী হাজার শিল্পীর জন্ম দিয়েছেন। ঠিক একটি প্রদীপ দিয়ে অসংখ্য প্রদীপ জ্বালানোর মত।
বর্ধমানের মঙ্গলকোটের বনকাপাসি। এখন সবাই শোলা শিল্প গ্রাম নামে একডাকে চেনে। আর যার হাত ধরে এই মিরাক্যাল ঘটেছে তিনি হরগোপাল সাহা। তার কাছে কাজ শিখে গ্রামে প্রায় হাজার খানেক শিল্পী রোজগারের পথ পেয়েছেন। এই গ্রামের শোলা শিল্প দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে পাড়ি দিচ্ছে আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানি সহ বিভিন্ন দেশে।
একটুকরো শোলা। ছুরি দিয়ে কেটে তাতেই ফুটে উঠছে অমূল্য শিল্পকর্ম। দেবদেবী, মনিষীদের অবয়ব থেকে বিভিন্ন কারুকার্যের অপূর্ব শিল্পকলা। বাবা মোহন সাহার কাছেই হাতে খড়ি হরগোপাল বাবুর। বাবা যখন কাজ করতেন তখন এই গ্রামের খ্যাতি ছিল না কিন্তু হরগোপাল বাবু শিল্পকে বিপণনের জায়গায় প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন, পেরেছেন গ্রামের হাজার মানুষের মুখে অন্ন সংস্থানের সুযোগ করে দিতে। নিজের গ্রামের সুখ্যাতি দেশ বিদেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন হরগোপাল।
অন্নপূর্ণা সাজ ভাণ্ডার নামে গ্রামে একটি ওয়ার্কসপ রয়েছে। সেখান থেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে গ্রামের এই হাজার খানেক মানুষ এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল হয়েছেন। বাইরে থেকে কাঁচামাল এনে কাজ করেন ওরা। সরকারি উদ্যোগে তৈরি করে দিয়েছে শোলা হাব। সরকারি মেলাতেও ডাক পাচ্ছেন। এখন চাহিদাও বেড়েছে বনকাপাসির শোলা শিল্পের। প্রতিবছর পুজোয় আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মান থেকে শোলার দুর্গা প্রতিমার অর্ডার আসে। পচিশ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকাতেও বিক্রি হয়। তাছাড়া কলকাতার নামি ক্লাবগুলিতেও বনকাপাসির শোলা শিল্প জায়গা করে নিয়েছে।সারা বছরই বিভিন্ন মার্কেটিং সংস্থা এখান থেকে শিল্প দ্রব্য পাইকারি দামে কিনে ব্যবসা করেন।
হরগোপাল বাবু এই শিল্পের জন্য পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। তিনি শুধু যে গ্রামের মানুষদের এই পেশায় আনতে পেরেছেন তা নয়, নিজের পরিবারের সকল সদস্যকে যুক্ত করেছেন। যেখানে অন্য গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজে যুক্ত থাকেন সেখানে বনকাপাসির ছবিটা ভিন্ন। এখানকার ঘরে ঘরে শুধুই শোলা শিল্প, সবাই শিল্পী।