সফল প্রোডাক্ট তৈরির ৭টি ফর্মুলা: প্রমোদ জাজু

সফল প্রোডাক্ট তৈরির ৭টি ফর্মুলা: প্রমোদ জাজু

Sunday December 17, 2017,

4 min Read

হোয়াটসঅ্যাপ, উবার, ওলা, বিগ বাস্কেট, ফ্লিপকার্ট কিংবা আমাজোন আমাদের জীবন সরল করে দিয়েছে। কিন্তু আমরা কেউ কি জানতে চাই এর পিছনে কী টেকনোলজি রয়েছে! কিংবা ব্যাক-এন্ড-এ কীভাবে কাজ হচ্ছে! জানি না আপনি জানতে চান কিনা, কিন্তু অধিকাংশ ব্যবহারকারীই এসব জানতে চান না। কিন্তু ব্যবহার করতে গিয়ে কোথাও অসুবিধে হলে প্রযুক্তিকে দুষতেও ছাড়েন না।

image


ফলে প্রোডাক্টটাই মোদ্দা কথা। তার নেপথ্যের টেকনোলজিতে আদৌ কারও আগ্রহ নেই। বলছেন বিগ বাস্কেটের চিফ টেকনিকাল অফিসার প্রমোদ জাজু। মোবাইল স্পার্কস-এর স্টেজ থেকে নেক্সট বিলিয়নের জন্যে প্রোডাক্ট কেমন হবে, কী কী গুণ তাতে থাকা অবশ্যই দরকার তার দিশা দিলেন জাজু। উল্লেখ করলেন সাতটি অবশ্য মান্য দর্শন।

প্রথম| ব্যবহারকারীর কথা মাথায় রেখে তৈরি ডিজ়াইনের দর্শন। যাকে জাজু বলছেন ইউজ়ার সেন্ট্রিক ডিজ়াইন ফিলজ়ফির কথা। প্রোডাক্টের এমন ডিজ়াইন তিনি চাইছেন যা ব্যবহারকারীর প্রয়োজন এবং চাহিদার কথা মাথায় রেখে তৈরি হবে। ব্যবহারকারীকে আরও আরাম আরও সহজ একটি সেবা উপহার দেওয়াটাই হবে প্রথম এবং প্রাথমিক শর্ত। যেমন বিগ বাস্কেটে ওরা দেখেছেন অধিকাংশ সময় গ্রাহক একই জিনিস বারংবার অর্ডার করছেন। সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর আচরণের প্যাটার্নটাই ফলো করে আরও সহজ এবং আরও দ্রুত পরিষেবা দেওয়াটাই কাম্য।

দ্বিতীয়| সারল্যই সুন্দর। ডিজাইনের মতই আইকন, ফন্ট, নাম সবটাই সহজ সরল হওয়া উচিত। ব্যবহারকারীর কাছে কখনওই সেগুলো দুর্বোধ্য বা কষ্টকর যেন না হয় সেটা প্রোডাক্টের মৌলিক শর্তগুলির একটি। ফলে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাও সহজ রাখাটা খুব জরুরি। ব্যবহারকারীর যেন মনে না হয় বিষয়টা জটিল। যেমন ধরুন হোয়াটসঅ্যাপ। ব্যবহারকারী যা চান সেই কাজটা সহজ ভাবে করতে পারার জন্যে যা প্রয়োজন সেটা আছে ওই অ্যাপে। কোনও পাসওয়ার্ডের হার্ডল নেই। ডিজাইন থেকে শুরু করে অপারেশন সবটাই সরলীকৃত।

তৃতীয়| দারুণ প্রোডাক্ট তৈরির জন্যে প্রয়োজন তথ্যের। তথ্যের ভিত্তিতেই দুর্দান্ত প্রোডাক্ট তৈরি হতে পারে। সেই সব তথ্যই একটি প্রোডাক্টের গুণগত মান বাড়িয়ে দিতে পারে যেগুলির ওপর ভিত্তি করে কাজ করা সম্ভব, যে তথ্যগুলি কোনও প্রোডাক্টের ব্যবহারকারী সম্পর্কে ধারনা দেয়। কিংবা কোনও নির্দিষ্ট প্যাটার্নকে কার্যকর করে। তথ্য এবং তার বিশ্লেষণের ভিতর দিয়েই সেরা প্রোডাক্টের রূপরেখা তৈরি হতে পারে। সেক্ষেত্রে নেট প্রোমোটর স্কোরস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সংগৃহীত তথ্যের সঠিক কোহর্ট অ্যানালাইসিস।

চতুর্থ| শুধু হ্যাপি ফ্লোর কথা ভাবলে চলবে না। পাশাপাশি তৈরি থাকতে হবে হোঁচট খাওয়ার জন্যেও। কেননা সার্ভার ডাউন হওয়া বা নেটওয়ার্কের সমস্যা সামাল দেওয়ার শিল্পটাও শিখে রাখা দরকার। গুগলের উদাহরণ দিয়ে জাজু বলেন, একটা সার্চ পেজ খুলতে যদি ০.৫ সেকেন্ড দেরি হয় তাহলে গুগলের মতো সংস্থার ক্ষেত্রে ট্র্যাফিক পড়ে যায় ২০ শতাংশ। ফলে প্রোডাক্ট ব্যবহার যিনি করছেন তার ইচ্ছে তার মর্জিকে গুরুত্ব দিতে হবে বৈকি! তাকে ব্যস্ত রাখতেও জানতে হবে।

পঞ্চম| এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনার প্রোডাক্টকে শুধু শহরাঞ্চলের ইংরেজি কপচানো বাবুদের জন্যে বানালে চলবে না। মনে রাখতে হবে ভারতের অধিকাংশই বাস করে গ্রামে এবং মফঃস্বলে। ফলে সেই প্রান্তিক একশ কোটি মানুষের কথা না ভাবলে আপনার চলবে না। মোবাইল ফার্স্ট গ্রাম বাংলার কথা ভেবে অ্যাপ ঠিকই আছে। কিন্তু শুধু অ্যাপে জল গরম হবে না। চাই ওয়েব অ্যাপ। অ্যান্ড্রয়েড কিংবা অ্যাপেলের জন্যে যা পারফেক্ট প্রান্তিক একশ কোটির কাছে তার কোনও মূল্য নাও থাকতে পারে। মজবুত প্রোডাক্টের জন্যে চাই বিভিন্ন সাইজের স্ক্রিনে খাপ খায় এমন প্রোডাক্ট। চাই এমন প্রোডাক্ট যা যেকোনও ধরনের নেটওয়ার্কে দারুণ চলতে পারে। খারাপ নেটওয়ার্কেও। কিংবা ধরুন এমন ডিভাইসে যেখানে পুশ নোটিফিকেশনে সমস্যা হতে পারে আর ব্যাটারির সমস্যার কথা ভুললে চলবে না। মাথায় রাখতে হবে সিস্টেম ফোনের অপশনটাও।

ষষ্ঠ| আপনার প্রোডাক্টকে হতে হবে সস্তা। না সস্তার তিন অবস্থা এই পুরনো প্রবাদে কাজ হবে না। আপনাকে যদি টিকে থাকতে হয় তবে ভবিষ্যতের যে ক্রেতারা বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করবে তারা হবেন আরও মূল্য-সতর্ক গ্রাহক। ফলে আপনাকেও তৈরি থাকতে হবে। দাম কমালেই হবে না। আপনি কী পরিষেবা কত মূল্যে দিচ্ছেন তার নেপথ্যের যুক্তিটাও স্পষ্ট রাখতে হবে। তবে দাম কমাবেন বলে জিনিসের মান খারাপ করে দেবেন, তাহলে তো চলবেই না। প্রোডাক্টের মান ভালো রাখতে হবে পাশাপাশি দাম নিয়েও সচেতন হতে হবে তবেই হুড়মুড়িয়ে প্রান্তিক মানুষ আপনার প্রোডাক্ট কিংবা পরিষেবা গ্রহণ করবেন।

এবং সপ্তম| পাশাপাশি আপনার প্রোডাক্টকে ক্রেতার হৃদয় জয় করতে হবে। আবেগ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি এলিমেন্ট যা চিরকাল প্রোডাক্টের সঙ্গে জুড়ে ছিল। কিন্তু আগামী দিনে এই জোড় আরও মজবুত হতে চলেছে। ফলে যেকোনও প্রোডাক্ট ডেভেলপ করার সময় আপনাকে মাথায় রাখতে হবে এর মনস্তাত্ত্বিক দিকটাও। আর এই দার্শনিক বোঝাপড়াটা হয়ে গেলে এবং সেই মত প্রোডাক্টটাকে তৈরি করতে পারলে আপনার প্রোডাক্টের সাফল্য রোখে কে!