নতুন নোটে রঘুরাম রাজনের অসুবিধে কোথায়?

নতুন নোটে রঘুরাম রাজনের অসুবিধে কোথায়?

Monday November 21, 2016,

3 min Read

৫০০ ও ১০০০ টাকার পুরনো নোট বাতিল করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তাতে কালো টাকার মালিকরা অদূরভবিষ্যতে তেমন কোনও বিপদে পড়বেন না। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন এ কথা মনে করেন।

image


এ বছরের গোড়ার দিকে রাজন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেন। ৫০০ ও ১০০০ টাকা নোট বাতিল করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সন্ত্রাসবাদ, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেও নোট বাতিলের করে আদৌ কোনও কাজের কাজ হবে না বলে মনে করেন রাজন। রাজনের মতো আরও অনেকে নোট বাতিলের কার্যকারিতা নিয়ে সরকারের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন।

এ ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রাজন বলেছেন, কর ব্যবস্থাটিকে সংস্কার করলে এর চেয়ে ভাল কাজ হত। তাঁর কথায়., মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ আয়ের কর্মীদের আয়ের ৩৯ শতাংশ টাকা কর বাবদ কেটে নেওয়া হয়। এছাড়াও, অতিরিক্ত আদায় করা হয় সেলস ট্যাক্স। অন্যদিকে, এ দেশের সরকার উচ্চ আয়ের মানুষদের কাছ থেকে ৩৩ শতাংশ কর আদায় করেন। পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় ভারতে উচ্চবিত্তদের আয় থেকে কর বাবদ কম টাকা কাটা হয়। তাই রাজন মনে করেন, নোট বাতিল না করে কর ব্যবস্থাটিকে সাজালে একটা কাজের কাজ হতে পারত।

৫০০, ১০০০-এর নোট বাতিলের জেরে সাধারণ মানুষ ভীষণ দুর্দশায় পড়েছেন। ভূক্তভোগীদের ব্যাঙ্কের লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়াতে হচ্ছে। লাইনে দাঁড়াতে গিয়ে কাজের সময় নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া সারা দেশ জুড়ে টেনশন ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্কগুলিতে টাকা অপ্রতুল। চাহিদা ও জোগানের ভিতর ফারাক বেড়েছে। ভোগান্তির অন্ত নেই। এদিকে এটিএমগুলির অবস্থাও তথৈবচ।

সম্প্রতি দেশের শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা বর্তমান অবস্থার সঙ্গে দাঙ্গা পরিস্থিতির তুলনা টেনেছেন। তবে প্ৰধানমন্ত্রীর কালো টাকার বিরুদ্ধে প্রতিদিনই যুদ্ধং দেহি। তিনি কালো টাকার অস্তিত্ব ধ্বংস করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন স্পষ্টভাবে আবারও জানিয়েছেন. কালো টাকার কারবারিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে আয়কর প্রশাসন ঢেলে সাজানোটাই সময়োপযোগী কাজ হতে পারত। তাঁর কথায়, প্রধানমন্ত্রী যে পথে কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে চাইছেন, তাতে কালো টাকার কারবারিদের শায়েস্তা করা যাবে না। টাকার পরিবর্তে ওঁরা এবার তাল তাল সোনা জমাবেন। লাভের গুড়ের স্বাদ সাধারণ মানুষ ভাগে পড়বে না।

রাজন মুখ খোলায় ফের নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। চলতি বছরের গোড়াতে কালো টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাজনের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনার মিল হয়নি। এই মতান্তরের প্রতিক্রিয়ায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন রাজন। এরপর নিজের অনুগামী কিছু আমলার ওপর নির্ভরশীল হয়ে প্রধানমন্ত্রী ‌৫০০ ও ১০০০ টাকার পুরনো নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

রাজনের স্পষ্টাস্পষ্টিভাবে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী যে পন্থায় লড়াই চালাতে চাইছেন তা দিয়ে কালো টাকার চতুর কারবারিদের রোখা যাবে না। ওরা অবিলম্বেই আর একটি বের পন্থা বের করে ফেলবে।

এজন্য রাজন মনে করেন, কর ব্যবস্থার গলদগুলি দূর করা গেলেই সেটা উপযুক্ত কাজ হত। তাতে লুকানো কালো টাকারও হদিশ মিলত। সংরক্ষণশীল মনোভাবের কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরাগভাজন হয়েছেন রাজন। সরকারও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর পদে ওঁর পদের সময়সীমা বাড়ায়নি।

তবে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের একাংশ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে। আবার একাংশ রাজনের পক্ষে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অনীশ‌ চক্রবর্তী বলেছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে ছোট ব্যবসায়ী, অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করা লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এছাড়া সাংগ্রিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতি মুখে পড়েছে। প্রসঙ্গত, ই-কমার্স সংস্থাগুলিও সাময়িকভাবে ক্যাশ অন ডেলিভারি অপশনটি তুলে দিয়েছে।

ICICI Securities Primary Dealership-এর মুখ্য অর্থনীতিবিদ এ প্রসন্ন কিংবা Quantum Mutual Fund-এর ফিক্সড ইনকাম বিভাগের প্রধান মূর্তি নাগরাজনের মতো অর্থনীতিবিদরা অবশ্য মনে করেন, মোদি ভাল কাজই করেছেন। নোট বাতিলের ফলাফল ভবিষ্যতে ইতিবাচক ফলাফল দেবে।

গত ৫ বছরে ভারতের অর্থনৈতিক বাড়বৃদ্ধি বা গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্টের বাড়বৃদ্ধির পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১ হাজারের নোটের সার্কুলেশন বেড়েছে ১০৯ শতাংশ। জিডিপি-র থেকেও আড়াই গুণ দ্রুত হারে ৫০০ টাকার নোট সার্কুলেটেড হয়েছে। কালো টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এই পরিসংখ্যান তেমন কোনও ভরসা দিচ্ছে না।