কথায় বলে, কিনতে পাগল, বেচতে ... নাই বলা ভালো। আর সেটা যদি রিয়েল এস্টেট হয়, তাহলে তো কথাই নেই। এই অভিজ্ঞতা সবার। অনলাইন অথবা অফলাইন, যেই পদ্ধতিতেই যান না কেন, লুকনো কিছু শর্ত থেকে যাওয়া প্রায় নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। হিসেব বলছে, বার্ষিক ২৫-৩০ শতাংশ হারে সমস্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। কিছুটা নিজেরা ভুক্তভোগী আর খানিকটা চারপাশের পরিস্থিত দেখে দুই উদ্যোক্তা গিরীশ বি এবং গোপী ঠিক করে নিলেন এই সমস্যাগুলির সমাধানের সুলুক দেবেন তাঁরা রিয়েল এস্টেট গ্রাহকদের দিশা দিতে গড়ে ফেললেন ‘মিলগ্যায়া’।
শুরুর আগে দুই উদ্যোক্তা এক বছর ধরে ফিল্ড স্টাডি করেছেন। বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্টে ঘুরেছেন, সংগঠিত-অসংগঠিত দালালদের সঙ্গে কথা বলেছেন, রিয়েল এস্টেট পোর্টালগুলি নিয়ে কাটাছেঁড়া করেছেন। শুধু তাই নয়, সম্পত্তি কেনা বেচার পুরও প্রক্রিয়া নিয়ে পড়াশোনা করেছেন দুজনে।
‘মিলগ্যায়া’ হল একটা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সম্পত্তি কেনাবেচার সুলুক দেওয়া হয়। সম্পত্তি এবং বাসস্থান কেনা-বেচা থেকে ভাড়া দেওয়া-নেওয়া সব ক্ষেত্রেই ঝঞ্ঝাটমুক্ত, স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ওয়েবসাইটটি। টিম ‘মিলগ্যায়া’য় গাইড রয়েছেন, যারা খদ্দেরদের এলাকা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিয়ে থাকেন। একই সঙ্গে গ্রাহকের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সঙ্গতিপূর্ণ বাড়ি, জমি খুঁজে দেওয়া হয়। ওয়েবসাইটে যেসব তথ্য দেওয়া থাকে সেগুলি মূলত ক্রেতা-বিক্রতাদের সঙ্গে রাস্তায় রাস্তায় হেঁট, প্রতিদিন নজরে রেখে তৈরি করা হয়েছে।
গোদরেজ, ভোল্টাস, ওয়ার্লপুল বং লোহিয়া কর্পের মতো নানা বহুজাতিক সংস্থায় ২০ বছরের ওপর সেলস এবং মার্কেটিংয়ে অভিজ্ঞতা রয়েছে গিরীশের। তিনি নারসি মনজির প্রাক্তনী এবং এমবিএর ছাত্রছাত্রীও পড়ান। গোপীরও ওরাক্যাল, টেক মাহিন্দ্রা এবং সিসকোর মতো সংস্থায় ২২ বছরের কর্পোরেট অভিজ্ঞতা।
সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দুই উদ্যোক্তা প্রথমে যে সমস্যার সম্মুখীন হন সেগুলি মোটেও রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। ‘এক কোটি টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করছিলাম। তার ৬০শতাংশই খরচ হয়ে গিয়েছিল প্রথম খরচাপাতি, প্রোটটাইপ এবং ‘মিলগ্যায়া’র জন্য আইটি ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি করতে গিয়ে’,বলেন গিরীশ। কিছু বাছা বাছা শব্দ ব্যবহার করা হয় যেগুলি গ্রাহকের কাছে সংস্থার মডেল, ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং বুঝিয়ে দেয়। ২০১২য় ইস্ট বেঙ্গালুরুতে ‘মিলগ্যায়া’ কাজ শুরু করে। পুরও এক বছর সময় লেগেছিল ২০১৩র ডিসেম্বরে প্রথম ডিল পেতে। ২০১৪র মার্চেই সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়ায় ১০। সংস্থার অ্যাসেট ভ্যালু তখন ৬.৫ কোটি টাকা।
গিরীশ জানান, সিআরএম পোর্টাল এবং পরিষেবার মধ্যে ফাঁক রয়েছে বুঝতে পেরেছিলেন। ২০১৪র ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রাহকদের জন্য নতুন ইন্টারফেস তৈরি করে নেন গিরীশ-গোপী। ‘২০১৫র অগস্টে, মাত্র এক মাসের মধ্যে আমরা দেড়শো নতুন ক্রেতা পাই। সব মিলিয়ে অ্যাকাউন্টে ক্রেতার সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়ে যায়। শুধু অগস্টেই সাড়ে চারশো ক্রেতা এনকোয়ারিতে আসেন’, বলেন গিরীশ। ‘মিলগ্যায়া’ এখন মাসে পাঁচটি ডিল করে। গত ৬ মাসে সংস্থার অ্যাসেট ভ্যালু তিন কোটি টাকার ওপরে চলে গিয়েছে। ‘গত ৬ মাসে যা আয় হয়েছে তাতে ব্রেক ইভেন পয়েন্টে পৌঁছে গিয়ছি। তিন বছরের পুরনো একটি স্টার্টআপের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় পাওয়া’, বলেন গিরীশ। গ্রাহকের সঙ্গে সংস্থাটির সম্পর্ক চূড়ান্ত পেশাদারীত্বে মোড়া। কাজের বিনিময়ে ফিস অথবা বিক্রির টাকার ওপর একটা শতাংশ কেটে নেওয়া হয়। দুটি স্যাটেলাইট সেন্টার খোলার ইচ্ছে রয়েছে দুই উদ্যোক্তার, একটি ইয়েলাহাঙ্কা এবং অন্যটি দক্ষিণ বেঙ্গালুরুতে। ২০১৬র প্রথম চারমাসেই এই কাজ শেষ করার ইচ্ছে রয়েছে বলে জানান তাঁরা।
‘মিলগ্যায়া’র লক্ষ্য ২০২০র মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় রিয়েল এস্টেট কনসালট্যান্ট হওয়া। চূড়ান্ত পেশাদারদের জন্য পেশাদারদের দিয়ই ১০টি শহরে ২৫টি অফিস চালানোর কথা ভাবা হচ্ছে। ‘আমাদের একটা অ্যাপ থাকবে যেখানে সমস্ত অপশনের স্ট্রিট ভিউ পাওয়া যাবে’, জানান গিরীশ। ২০১৬র মধ্যে ‘মিলগ্যায়া’র যা যা পরিকল্পনা রয়েছে তা হল-
১. প্রাথমিক বাজার (বিল্ডারের কাছ থেকে ডেলিভারি নিশ্চিত করা অথবা সুদ সমেত টাকা ফেরতের নিশ্চয়তা)
২. বাণিজ্য (সঙ্গে থাকবে রিয়েল টাইম মার্কেট প্লেস)
২০২০র মধ্যে দেশে রিয়েল এস্টেটের বাজার ১৮০ বিলিয়ন ডলার ছোঁয়ার কথা। আইবিআএফের মতে, দেশের জিডিপির ৬শতাংশ আসে হাউজিং সেক্টর থেকে। এটাই দেশের দ্বিতীয় কার্যকর সেক্টর বলে মনে করা হচ্ছে। ২০০০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত এফডিআই থেকে এসেছে ২৪.১ বিলিয়ন ডলার। এই হিসেবগুলিই দেখিয়ে দেয় কতটা দ্রুত গতিতে উর্ধমুখী রিয়েল এস্টেটের বাজার।
Related Stories
Stories by tiasa biswas
March 14, 2017
March 14, 2017
March 14, 2017
March 14, 2017