#ig_calcutta ঝড় তুলেছে সাম্যব্রতর CI

#ig_calcutta ঝড় তুলেছে সাম্যব্রতর CI

Thursday June 16, 2016,

5 min Read

যারা আপনার মতো। ল্যান্ডস্কেপ, মেঘের জটিল রূপ অথবা বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় প্রতিবিম্বিত শহর দেখলেই ছবির ফ্রেম ভাবতে থাকেন, দেখতে থাকেন একটা পারফেক্ট ক্লিকের স্বপ্ন, এই কাহিনি তাঁদের জন্য। এই শহরে এমন মানুষের সংখ্যা কম নয় যারা ট্রেনে বাসে রাস্তায় যাতায়াতের সময় বারবার পকেট থেকে বের করেন স্মার্টফোন, তুলে ফেলেন পারফেক্ট ক্লিক। আপনি যদি নাও করেন খোঁজ নিয়ে দেখুন আপনার আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব প্রতিবেশীদের ভিতর কম করে ৫০ জনকে পাবেন যারা কেবল মাত্র ছবি তুলতে জীবনে কখনও না কখনও রাতের অন্ধকারে শহরের সব থেকে উঁচু বাড়ির মাথায় উঠেছেন। শাটার স্পিড কমিয়ে রাস্তার ছবি... ছুটন্ত গাড়ির লাল নীল হলুদ আলোগুলো রেখার মতো এঁকে বেঁকে একটা আলোর আলপনা ফুটিয়ে তুললেই সে স্যাটিসফায়েড...তারপর... এরকমই আরও অনেক এক্সপেরিমেন্টের জন্যে আপনাকে বেনারসের সন্ধ্যারতি ডেকেছে। পুজোর আগে পড়ে মূর্তি গড়ার সময় বারবার কুমোরটুলিতে ঢুঁ মেরেছেন কখনও?... ভিক্টোরিয়ার আভিজাত্য ভরা রূপ যখন ছলকে পরে এক পশলার আদরে কিংবা হাওড়া ব্রিজের চিরযৌবনে ভরা পৌরুষ যখন আসন্ন সন্ধ্যায় স্পর্ধা দেখায় হারকিউলিসের মতো দুটো ভূখণ্ডকে জুড়ে রাখবে চিরকাল, তখন আপনিই তো একটা পারফেক্ট কম্পোজিশন মিস হয়ে যাচ্ছে ভেবে অস্থির... অথবা একটা পারফেক্ট পোট্রেট আপনাকে তাড়া করে শহর-মফঃস্বল-গ্রামে, সূর্যোদয়ের ছবি তুলতে মাঝরাত থেকে ম্যালে কিংবা বিনসারে আপনি ট্রাইপড লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছেন কনকনে ঠাণ্ডায়। কারণ আপনি বিশ্বাস করেন আপনি দেখেন অন্যভাবে তাই হয়ত আপনার স্মার্টফোনের ফাইভ, এইট, থার্টিন মেগা পিক্সেলেও প্রতিদিন ভরিয়ে ফেলছেন এস ডি কার্ড। সেলফি-গ্রুভি নয়, ক্লাউডেও অ্যালবাম ফুল। তাহলে জেনে রাখুন আপনি অনায়াসে যোগাযোগ করতে পারেন সাম্যব্রতর সঙ্গে। সাম্যব্রত মল্লিক। কলকাতার ছেলে। গত পাঁচ ছ' বছর ধরে ক্যামেরা নিয়ে মেতে উঠেছেন। বলা ভালো ছবি নিয়ে। ও এখন কলকাতার ফটোগ্রাফারদের একটি কমিউনিটি Calcutta Instagrammers-এর অভিভাবক। অভিভাবক! এই শব্দটাতে একটু খটকা লাগছে নিশ্চয়ই! আসলে কমিউনিটির অ্যাডমিন বললে ওঁর কাজের গুরুত্বটা ঠিক বোঝানো যাবে না। ও ওই কমিউনিটির ফাউন্ডার কাম অ্যাডমিন কাম সিইও।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু করেছেন। ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম মিলিয়ে প্রায় কুড়ি হাজার মেম্বার আছে এতে। সাম্যব্রত বলছিলেন ওঁদের অ্যাক্টিভিটির কথা। বলছিলেন সবে শুরু হয়েছে কাজ। এর মধ্যেই দারুণ সাড়া পেয়েছেন। বেশ কয়েকটা ইনস্টামিট করেছেন। কুমোরটুলি নিয়ে কালীঘাট মন্দির নিয়ে, কলকাতার গ্রাফিত্তি নিয়ে। সব গুলোই দারুণ হিট। এই দশ এগারো মাসে একের পর এক ইভেন্ট করে গিয়েছেন সাম্যব্রত। স্পনশরশিপও পেয়েছেন। Turtle menswear, Housing India, OYO Rooms, OlaCabs, UNESCO-এরকম বহু সংস্থাকে পাশে পেয়েছেন। স্ট্রিটস অব ক্যালকাটা নামের অপর একটি ফটোগ্রাফার কমিউনিটির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে একজিবিশনও হয়েছে কলকাতায়। ২০১৬-র জানুয়ারির সেই প্রদর্শনী দারুণ সাড়া ফেলেছিল।

কথায় কথায় বেরিয়ে এলো ব্যক্তি সাম্যও। বলছিলেন সাউথ পয়েন্টে পড়তেন তখন ছবি দেখতে ভালো লাগত এটুকুই। তবে ছোটবেলা থেকেই লিখতেই বেশি ভালোবাসতেন। গল্প লিখতেন। ধীরে ধীরে সেই গল্পগুলোই ছবির সঙ্গে সম্পর্কিত হতে থাকল।যাদবপুরে ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় ছবির প্রতি টান বেশি করে অনুভব করেন। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতেও ছবির ফ্রেম নিয়ে ভাবতেন।

২০১০ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপার্সে কাজ পান। পোস্টিং ছিল উত্তর পূর্ব ভারত। শিবালিক হিমালয়ের কোলে অসামান্য একটি ল্যান্ডস্কেপে তিনটে বছর থেকেছেন সাম্যব্রত। গুয়াহাটি, আইজল, মেঘালয় ছিল ওঁর ঘরবাড়ি। সঙ্গে একান্ত বন্ধু বলতে ওর লেখার নোটবুক আর প্রথম ক্যামেরা ক্যাননের পাওয়ার-শট। অনেক কিছুই করা যেত না ওতে। কারণ ওটা ছিল ফিক্সড লেন্স ক্যামেরা। অপটিকাল জুম। ছবি উঠত ঠিক ঠাক। ছবি তুলতে তুলতেই ছবি তোলা শিখেছেন সাম্য। যাই দেখতেন তাই-ই ছবির ফরম্যাটে কুঁড়িয়ে রাখতেন। এসব করতে করতেই পেলেন স্বীকৃতি। ২০১৩ সালে জিতলেন একটি ছবি প্রতিযোগিতা। পুরস্কারে পেয়েছিলেন ওর জীবনের দ্বিতীয় ক্যামেরা ক্যানন ৫৫০ডি। এবার আরও আরও করে জড়িয়ে গেলেন ছবির সঙ্গে।

যত শিখেছেন তত বুঝেছেন ভুল ঠিক এগুলো চোখের ব্যাপার। অঙ্ক কষে তোলা ছবিতে অঙ্কই বেশি চোখে পড়ে। ছবি কোথাও হারিয়ে যায়। প্রকৃতির সৌন্দর্যের স্বাভাবিকতায় মুগ্ধ এই প্রেমিক নিজেকে Deckle Edge হিসেবে ব্যাখ্যা করতে ভালোবাসেন। সেকারণেই তাঁর ট্যুইটার হ্যান্ডলই বলুন বা ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল সবেতেই এ নামে ওঁকে খুঁজে পাবেন।

২০১৫ সালে দেশের সেরা পাঁচ ফটো-ব্লগারের একজন হয়েছিলেন সাম্যব‌্রত মল্লিক। Kotak, Star Sports, Sky Scanner, Bacardi, Magma, ASUS, Borosil, Bluestone, WeChat, Vicks-এর মত সংস্থা আয়োজিত ব্লগিং প্রতিযোগিতা জিতেছেন সাম্য। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। কাজ করেন কেপিএমজি-তে। আদ্যন্ত কর্পোরেট চাকরি। তারমধ্যেই সময় দেন তাঁর প্যাশনকে। খুব যে এবড়ো খেবড়ো ভাবে সে কাজ করেন তাও নয়। বলছিলেন ও এখন একা নন। সঙ্গে আছে একটা আস্ত টিম। রীতিমত স্টার্টআপের মত করে চালাচ্ছেন এই কমিউনিটি। ফলে এই সংস্থা অন্যতম মালকিন প্রীতি রায়চৌধুরি কনটেন্ট ম্যানেজারের দায়িত্ব সামলান। সুজয়কুমার দাস এবং গৌরব ধর ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের অ্যাডমিন। ওঁদের উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন প্রখ্যাত ফটোগ্রাফার সৌম্যশঙ্কর ঘোষাল। ফলে উদ্যোগপতি সাম্যব্রত যথেষ্ট গুছনো। তিনি এখন ভাবছেন এই ২০ হাজার মেম্বারের এই বিশাল কমিউনিটি নিয়ে আর কী কী করা যায়। বলছিলেন সম্প্রতি বাজারে আসছে ওঁদের নিজস্ব অ্যাপ। যার মারফত মোবাইল ফোনে ছবি তুলে সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়াটা একেবারে জলভাত হয়ে যাবে। ফলে ওঁদের সদস্যরা ফেসবুক ট্যুইটার এবং ইনস্টাগ্রামের মারফত সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়তে পারবেন সহজেই।

প্ৰশ্নটা অনেকক্ষণ ঘুরপাক খাচ্ছিল মাথার ভিতর। 'হঠাৎ ফোকাসটা ইনস্টাগ্রাম কেন?' জিজ্ঞেস করতেই মনে হল প্ৰশ্নটা যেন সাম্যর কমন পড়ে গিয়েছে। এক নাগাড়ে বলতে থাকলেন, "বেঙ্গালুরু, মুম্বাইয়ে ইনস্টাগ্রাম নিয়ে মাতামাতি এত হয়। সেখানে কথা কথায় ইনস্টাগ্রামে ছবি পোস্ট করার রেওয়াজ আছে কিন্তু কলকাতার মানুষের এত ভালো নান্দনিক রুচি, এত সুন্দর ছবি তুলতে পারেন তাহলে ইনস্টাগ্রামে সেটা পোস্ট করবেন নাই বা কেন? ইনস্টাগ্রামের দর্শকরা শুধু ছবির খোঁজেই আসেন। ভালো ছবি দেখতে চান। অন্য সংস্কৃতিকে জানতে চান। আর আমরা সেটাই করছি।" বুঝলাম, অরকুট করা বাঙালি যেমন অন্যদের তুলনায় পরে ফেসবুকে ঢুকে এটাকেই new foundland হিসেবে পেয়েছে তেমনি সৃজনশীল ওই মানুষের দল এবার ইনস্টাগ্রাম জয় করে নেবে খুব শিগগিরই। আর তাঁদেরই সেনাপতি সাম্যব্রত মল্লিক।