উদ্যোক্তা গড়তে শিক্ষায় জোর রাষ্ট্রপতির

উদ্যোক্তা গড়তে শিক্ষায় জোর রাষ্ট্রপতির

Monday November 09, 2015,

3 min Read


যাকে বলি আমরা আন্তেপ্রেনিয়রশিপ, তাতে নাকি ভারতীয় যুবসমাজের জুড়ি নেই। আর সেটা মাথায় রেখেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকেও নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং গবেষণার নেটওয়ার্ক গড়ে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। নয়াদিল্লিতে এই কথাগুলি বলছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োজন আয়ত্ব এবং শেষ্ঠত্ব, মান এবং অর্জনের ক্ষমতা, স্বায়ত্বশাসন সঙ্গে দায়বদ্ধতা। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘উদ্যোক্তা হিসেবে ভারতীয় যুবকরা অদ্বিতীয়। সারা বিশ্বের তুলনায় খুব দ্রুত স্টার্টআপ বাড়ছে ভারতে। ৪,২০০ স্টার্টআপ নিয়ে এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান তৃতীয়। তার আগে রয়েছে আমেরিকা এবং ব্রিটেন। উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে ভারত সরকার ‘স্টার্টআপ ইন্ডিয়া,স্ট্যান্ডআপ ইন্ডিয়া’ নামে ক্যাম্পেইন চালু করেছে। উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলির প্রধানদের একত্রিত হয়ে উদ্ভাবন এবং গবেষণার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে, যা উদ্যোক্তাদের তৈরি করতে সাহায্য করবে’।

image


তিনি বলেন, জাতির আর্থ-সামাজিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির। ‘কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ন্যাশনাল ইন্সস্টিউট অব টেকনোলজিকে আমি আগেই বলেছি অন্তত পাঁচটা গ্রাম দত্তক নিতে এবং সেই গ্রামগুলিকে মডেল গ্রামে পরিণত করতে। এবার আমি ১১৪টি কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানকে বলছি। দত্তক নেওয়া গ্রামগুলির সমস্যা চিহ্নিত করার পর তার সমাধানে সমস্ত শিক্ষাগত এবং প্রযুক্তিগত সুবিধা দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন সম্ভব’। রাষ্ট্রপতি ভবনে অতিথিদের সামনে এক কনফারেন্সে এই কথাগুলি বলছিলেন রাষ্ট্রপতি। তিনি ইমপ্রিন্ট ইন্ডিয়া(‘IMPRINT India’) নামে ইন্ডিয়ান ইন্সস্টিউট অব টেকনোলজি এবং ইন্ডিয়ান ইন্সস্টিটিউট অব সায়েন্সের যৌথ প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল দেশের বড় বড় প্রযুক্তি সম্পর্কিত সমস্যা মেটানো এবং তার গবেষণার রোডম্যাপ তৈরি করা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, শিক্ষামন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এবং দিল্লির ডেপুটি চিফ মিনিস্টার মণীশ সিসোদিয়া, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য এবং এনআইটি ও আইআইএস এর প্রধানরা।

শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে উদ্ভাবনী শক্তি এবং গবেষণার ওপর জোর দিয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, উন্নতি এবং উদ্ভাবন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইতিহাস সাক্ষী, স্বপ্ল প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়েও শুধুমাত্র প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে পৃথিবীর মাণচিত্রে উন্নত দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। রাষ্ট্রপতি স্বীকার করেন, গত দশ বছরে উচ্চশিক্ষায় পরিকাঠামোগত অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে সারা বিশ্বে গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও (GER) ২৭ শতাংশের তুলনায় ভারতে ২১ শতাংশ GER সত্যিই চিন্তার। মুখোপাধ্যায় বলেন, একটা নতুন শিক্ষাব্যবস্থা আনতে হবে এবং তার মাধ্যমে শিক্ষার ধারা বদলে দিতে হবে। আর সেটা করতে পারলেই ২০২০র মধ্যে GER টার্গেট ৩০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া যাবে। এই টার্গেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।

‘বৃদ্ধির দিকে নজর দিতে গিয়ে মানের সঙ্গে যেন আপোষ না হয়। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উচ্চশিক্ষায় বেশি করে সুযোগ তৈরি করে দিতে গিয়ে শুধু আসন সংখ্যা বাড়িয়েই চলেছে। এর ফলে আয়ত্ব এবং শেষ্ঠত্ব, মান এবং ক্ষমতা, স্বায়ত্বশাসন এবং দায়িত্ববোধের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। একটু ভালোভাবে চিন্তা করলে সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে, আমাদের আয়ত্ব এবং শেষ্ঠত্ব, মান এবং ক্ষমতা, স্বায়ত্বশাসন এবং দায়িত্ববোধ সবকিছুই দরকার। ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে উচ্চশিক্ষাকে আরও আয়ত্বের মধ্যে এনে দেওয়া যেতে পারে’, বলেন রাষ্ট্রপতি।

আগে আন্তর্জাতিক রেঙ্কিংয়ে ভারতের একটিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রথম দুশোয় আসতে পারত না। ‘রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব থেকে যায় আমার। অনেকেই আমার ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও রেঙ্কিং প্রক্রিয়াকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সেইভাবে এগোচ্ছে’, বলেন প্রণব। কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি রেঙ্কিং ২০১৫-১৬য় ভারতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রথমবারের মতে রেঙ্কে ঢুকে পড়ে। রাষ্ট্রপতি বলেন, যদি দেশের প্রথম ১০ থেকে ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগামী ৪-৫ বছর যদি যথেষ্ট ফান্ড দেওয়া যায়, তাহলে প্রথম একশোয় ঢুকে পড়তে পারে ভারতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।