দুর্নীতি আর রাজনীতি পিঠোপিঠি দুই ভাই

দুর্নীতি আর রাজনীতি পিঠোপিঠি দুই ভাই

Wednesday May 11, 2016,

4 min Read

এর আগেও বহুবার একথা বলা হয়েছে যে দুর্নীতি ক্যান্সারের মতো ভারতকে গ্রাস করছে। কিন্তু এই রোগ সারবার নয়। শেষতম ঘটনাটি হল Augusta Westland এর হেলিকপ্টার স্ক্যাম। এটা নতুন কিছু নয়। ২০১৪-র ভোটের আগেই UPA সরকারের আমলে ঘটনাটি মানুষের নজর কাড়ে। আবার করে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার জন্য মিলান কোর্টের ভারডিক্ট ধন্যবাদের দাবি রাখে। আবার শিরোনামে উঠে এসেছে বিষয়টি। বর্তমান BJP সরকার কংগ্রেসকে এবং কংগ্রেস BJP সরকারকে দুষছে। এ যেন উইম্বলডন, বল ঠেলাঠেলি চলছে এ কোর্ট থেকে ও কোর্ট। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে অতীতের মতই এখনও সমাধান কারোরই জানা নেই।

image


এই ক্লাসিক কেসটি বুঝিয়েছে, আমাদের সিস্টেমের গলদ কোথায়! কিভাবে রাজনীতির শরীরে প্লেগ রোগ দেশটাকে খোকলা করে দিচ্ছে! বাজপেয়ি সরকারের আমলে The Augusta Westland ডিলিং শুরু হয়। ২০০৩ সালে NDA সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সব VVIP হেলিকপ্টারের বিশেষ পরিবর্তন করা হয়েছিল। অভিযোগ ওঠে এমনটা নাকি Augusta Westland কোম্পানির মুনাফার কথা ভেবেই করা হয়েছিল। সেইসময়ে আর পরে প্রচুর মিলিয়ন ইউরো নাকি দিয়েছিল কোম্পানি। ফলে ২০০৪ এ বাজপেয়ি সরকার ম্যানডেট হারে, মনমোহন সিং এর সরকার ক্ষমতায় আসে। তাঁর রাজত্বে ডিলটি দৃঢ়ভাবে মুষ্ঠি আঁকড়ে থাকলেও, ২০১৪-র পার্লামেন্টারি ভোটে ফাইল পাবলিকলি বন্ধ হয়ে যায়। যখন পাঁচটি রাজ্যে ভোট চলছে ঠিক সেইসময় মিলান কোর্টের ভারডিক্ট BJP সরকারকে সুযোগ করে দিল কংগ্রেসকে কোণ ঠাসা করবার। কোর্টের বিচারে সোনিয়া গান্ধি আর আহমেদ প্যাটেলের নাম উল্লেখিত হলেও কোনও রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে এখনও কোনও প্রমাণ নেই।

BJP আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায় কংগ্রেসকে এই মানচিত্রে টেনে আনতে চায়। তবে কিছু প্রশ্ন আছে। প্রথম প্রশ্ন, Augusta Westland স্ক্যাম জনসমক্ষে আসার পর থেকেই ইতালি সরকার দ্রুত সরে পরে, বিষয়টির অনুসন্ধান হয়, রিপোর্ট পেশ হয়, নিম্ন আদালত রায় দান করে, উত্তরবিচারকারী কোর্টও নির্দেশ জারি করে। কোম্পানির দুজন উচ্চপদস্থ অফিসার ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত। মিলান কোর্টের নির্দেশ অনুসারে তাঁরা বর্তমানে জেলে আছেন। দুঃখজনক বিষয় হল ভারতে দোষীদের শাস্তি পাওয়া দূরে থাক, ঠিকঠাক অনুসন্ধানও হয়নি।

মনমোহনের সরকারের প্রথমদিকের আলস্য যদিও আমার বোধগম্য হয়,কিন্তু মোদি সরকার কি করছে? কেন গত দুবছরে কোনও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি? CBI এবং Enforcement Directorate বিষয়টি দ্রুততার সাথে অনুসন্ধান করে নি। কারা তাদের থামিয়ে দেয় এবং কেন? মোদি দাবি করেন কোনও রকম দুর্নীতি তিনি সহ্য করবেন না। দুর্নীতি করতেও দেবেন না কাউকে। যদি তিনি তাঁর শপথে অবিচলই থাকতে চাইতেন তাহলে দেশের মানুষ এই স্ক্যামের সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের এতদিনে চিনে যেত। সুতরাং তিনি দেশবাসীর কাছে বিষয়টিতে জবাবদিহি করতে দায়বদ্ধ।

দ্বিতীয়ত বিজেপি নেতারা চিৎকার করে দাবি করছেন সোনিয়া গান্ধি এই ঘোটালায় বহু টাকা নিয়েছেন। তাই যদি কেন তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আজও কোনও পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি? প্রধানমন্ত্রী নিজে তামিলনাড়ুর ভোটের মিছিলে,মিটিং এ সোনিয়া গান্ধির বিরুদ্ধে বলেছেন, অথচ কোথাও কোনও পরিবর্তন নজরে এল না! আইনি প্রশ্ন উত্তর করার একটি নোটিসও তাঁকে ধরানো হয়নি! ইন্টারোগেশন আর অ্যারেস্ট করা তো ছেড়েই দিলাম। কৌতুকের বিষয় বিজেপি সভাপতি অমিত শা সোনিয়া গান্ধিকে বলেছেন তিনি যেন ঘুষখোর নেতাদের নাম বলে দেন। যেন চোরের কাছে ভিক্ষা চাওয়া হচ্ছে সে যেন তার সঙ্গীদের নাম বলে দেয়। আসলে কংগ্রেস মোদি সরকারকে চ্যালেঞ্জ করেছে যে তাদের পার্টির বদনাম বন্ধ করে গোটা অনুসন্ধান দুমাসের মধ্যে শেষ করতে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়নি।

এই স্ক্যামটি আমাদের গোটা সিস্টেম এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার ক্ষমতা নিয়ে বেশ কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন তুলেছে।

১) প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলি কি সত্যিই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে বদ্ধপরিকর?

উত্তর হল খুব জোরদার একটি না। বরঞ্চ এটি বিরোধী দলকে দমনের একটি অস্ত্র। ভোটের সময় বিজেপি Augusta Westland কে হাতিয়ার করে কংগ্রেসের গায়ে কালি লেপেছে। যদি তারা সত্যি চাইত তাহলে ইতালির মতো এদেশেও দোষীরা এতদিনে জেলে থাকত।

২) রাজনৈতিক দলগুলি কি দুর্নীতির উর্দ্ধে?

উত্তর আবার না। যদি কংগ্রেস ভুল করে থাকে তাহলে বিজেপিও হেলিকপ্টারের স্পেসিফিকেশন পাল্টানোর দোষ করেছে যা পরবর্তীকালে Augusta Westland কে লাভ দিয়েছে।

৩) অনুসন্ধানকারী সংস্থাগুলিকে কি অকর্মণ্যতার দায় দেওয়া যায়?

না। Augusta Westland জানায় যে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও নির্দিষ্ট সংস্থা দোষী ধরার চেষ্টা করেনি। অনুসন্ধানকারী সংস্থাগুলিকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। তাই CBI এবং ED কে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আসল দোষী সেইসব নেতারা যারা সরকারে থেকে এইসব স্ক্যামের ফায়দা লোটেন।

৪) সমাধান কি? দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই হবে কিভাবে? 

উত্তরটি সহজ। সরকারি খপ্পর থেকে অনুসন্ধানকারী সংস্থাগুলিকে মুক্ত করে দিতে হবে। তবেই সঠিক অনুসন্ধান সম্ভব। স্বাধীনভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করতে হবে।

৫) কখনও কি এমনটা হবে?

দিক দিগন্ত থেকে আওয়াজ উঠবে- না। কেন? আমি বলছি। আন্না আন্দোলনের সময় দুর্নীতিকে নিশ্চিহ্ন করতে এক স্বাধীন আর শক্তিশালী লোকপাল বিল পাশ করার দাবি ওঠে। ভয়ঙ্কর চাপের মুখে একটি দূর্বল বিল পাশ হয়েছে বটে কিন্তু আজও কোনও নিয়োগ হয়নি। যদি মোদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে এতটাই বদ্ধপরিকর তবে এতদিনে তিনি একটি অন্তত লোকপাল নিয়োগ করতেন। কিন্তু হায়!

আমার ভয় Augusta Westland বিতর্কও Bofors-এর মতো পথ হারাবে। দোষীরা মুক্ত ঘুরে বেড়াবে আর জনগণের অর্থ আগের মতোই লুন্ঠিত হবে। আমাদের সংবিধানের ভারসাম্য পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এক জন জাগরণ প্রয়োজন। তা কি হবে? লাখটাকার প্রশ্ন। ভাষণ আর স্লোগান দিয়ে কিছু হবার নয়, কারণ ক্যান্সার নির্মূল হওয়া দরকার।