সাধারণের মধ্যে অসাধারণের খোঁজ দিয়েছে - ‘জয় মহালক্ষ্মী মহিলা উৎপাদক ঘাট’

Monday November 23, 2015,

9 min Read

চুনাবাটি – মুম্বই শহরতলীর ঘনবসতিপূর্ণ একটি জায়গা। বেশিরভাগটাই বস্তি। আর বছর দশেক আগে এখান থেকেই শুরু হয়েছিল একটা গল্প। একটা লড়াই। কয়েকজন অচেনা অজানা মহিলা হঠাৎ করেই জড়ো হয়েছিল একটা ছাতার তলায়। আর তাদের মাথায় ছাতা ধরেছিল আর একজন মহিলা। হ্যাঁ, আসলে এটা একটা লড়াই, একটা সত্যিকারের গল্প, যার চরিত্ররা সবাই মহিলা। আসলে জীবনে কখনো কখনো সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য হাল্কা একটু ধাক্কার প্রয়োজন হয়, আর এই এক ধাক্কাতেই নিজেদের জীবনটা অনেকটা বদলে ফেলতে পেরেছে ৫ জন বস্তিবাসী মহিলা। বৈষ্ণব সামন্ত, রেখা জাগতাপ, প্রিয়াঙ্কা ভাওয়াল, সুহাসিনী সাভাঙ্কার আর নমিতা ঠাকুর – এরা সবাই এক বস্তিতে থাকলেও নিজেদের মধ্যে কোন যোগাযোগ ছিলনা। হঠাৎ করেই একজন সমাজকর্মীর হাজির হওয়া, বস্তিবাসী দের শিক্ষিত করার চেষ্টা এবং সর্বোপরি তাদের একটা নতুন সুস্থ জীবন দেওয়ার চেষ্টা থেকেই শুরু হয় এই মহিলাদের লড়াই করার কাহিনী - জয় মহালক্ষি মহিলা উৎপাদক ঘাট (জে.এম.এম.ইউ.জি), মুম্বাই শহরের অতি পরিচিত একটা মহিলা পরিচালিত ক্যাটারিং গ্রুপ।

গল্পের শুরুটা প্রায় বছর দশেক আগে। হঠাৎ করেই একজন সমাজকর্মী আসেন এই বস্তিতে, তিনি এলাকার মহিলাদের ছোট ছোট দলে ভাগ করেন আর প্রত্যেক কে মাসে ৫০ টাকা করে জমানোর জন্য অনুরোধ করেন। এই টাকা জমানোর জন্য তিনি একটা রাষ্ট্রায়ত্ত বাঙ্কে সবার নামে জয়েন্ট অ্যাকাউন্টও খুলে দেন। জয় মহালক্ষি মহিলা উৎপাদক ঘাটের প্রতিষ্ঠাতা ৫ জন মহিলা এই সময়ই একে ওপরের সাথে পরিচয় হয়, পরের ছটা মাস ছিল তাদের জন্য সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। এই সময় তারা নিজেদের মধ্যে মাসে একবার হলেও দ্যাখা করার চেষ্টা করতেন আর নিজেদের সুবিধা-অসুবিধার কথা নিয়ে আলোচনা করতেন। সাথে মাসে মাসে টাকা জমানোর বিষয়টা এরা খুব সততার সাথে চালাতে থাকেন। আর এখানেই বোঝা যায় বৃক্ষ ফলেন পরিচয়। প্রথম ছ-মাসের মধ্যেই বেশিরভাগ মহিলারা দল ছেড়ে দিতে থাকে, কিন্তু এই পাঁচজন নিজেদের জায়গায় ঠিক থাকে। আর এই ছয়মাসের মধ্যেই আস্তে আস্তে ভিত শক্ত হতে থাকে জয় মহালক্ষি মহিলা উৎপাদক ঘাটের।

এরপর এই মহিলারা নিজেদের এলাকাতেই ছোট ছোট ইভেন্ট এর যেমন রেশন কার্ড এর জন্য কিভাবে অ্যাপ্লাই করতে হয় বা মেয়েদের ঠিক কি কি স্বাধিনতা থাকা উচিত, মেয়েদের কৈশোরে যেসব অসুবিধা গুলো থাকে সেগুলকে কিভাবে জয় করতে হবে এইসব নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করতে থাকে নারী সচেতনতার জন্য। এর পরেই তাদের জন্য খুলে যায় একটা সুবর্ণ সুযোগ। ব্রিহন্মুম্বাই মেউনিসিপাল কর্পোরেশন এর চিফ ডেভেলপমেন্ট অফিসার, শুভা বেনুর্বারের সাথে দ্যাখা করার একটা সুযোগ এসে যায় তাদের। উনি এদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য উৎসাহিত করতে থাকেন। মুম্বাইয়ের ‘নাকা’ জংশন নামে একটা জায়গা আছে, যেখানে অনেক লেবার শ্রেণীর মানুষরা সকাল বেলা জড় হয় নিজেদের কাজের জোগাড় করার জন্য। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে বলেন শুভাদেবী। তিনি বলেন যে ওই যায়গাতে যদি একটা সকালের টিফিনের দোকান খোলা যায়, তাহলে সেটা বেশ লাভজনক হতে পারে। প্রতিদিন সকালেই ওখানে অনেক মানুষ জড় হয় নিজেদের কাজ পাওয়ার জন্য। বিভিন্ন কন্ট্রাক্টর সেখানে যায় আর নিজেদের পছন্দ মতো লোকজন সেখান থেকে তারা নিয়ে যায় নিজের নিজের কাজের জন্য, যে কারণে খুব সকাল থেকেই সেখানে ভির জমতে থাকে। যেমন ভাবা তেমন কাজ – পাঁচ জন মহিলা নেমে পরেন নিজেদের কাজে। আসলে কিছু একটা করে দেখানর তাগিদটা ক্রমশই তাতিয়ে দিচ্ছিল শুধুমাত্র ঘরকন্নার কাজ করা এই মানুষগুলোকে। আর এটাই সেই ধাক্কা হিসাবে কাজ করে এনাদের জন্য, যা তাদের এগিয়ে নিয়ে গেছে আজকের এই প্রতিষ্ঠা পেতে।

স্বপ্ন আর বাস্তবঃ

তারা যখনই ঠিক করে যে তারা সকালের প্রাতঃরাশ বিক্রি করবে নাকা জংশনে, তারা এই কাজের সহযোগী কিছু বাসনপত্র, কাঁচা মাল এসবের ব্যাবস্থা করতে থাকে। একজন ফুচকা বিক্রেতার কাছ থেকে তারা মাসিক ১০০ টাকা ভারায় একটা ঠ্যালা গাড়ির ব্যাবস্থা করেন। প্রতিদিন খুব সকাল সকাল তারা ‘শীরা’ আর ‘পোহা’ নিয়ে পৌঁছে যেতে থাকে নির্দিষ্ট জায়গায়। কিন্তু ব্যাবসার প্রধান অঙ্গ, ঠিকঠাক প্ল্যানিং আর এই প্ল্যানিঙের অভাবে প্রথম দিন তারা খুব একটা বেশি কিছু বিক্রি করতে পারলনা। প্রথম দিন মাত্র ১৩৫ টাকার বিক্রি হয় তাদের। বাধ্য হয়ে বাকিসব তারা ফিরিয়ে নিয়ে আসে আর নিজেদের পরিবার পরিজনের মধ্যে ভাগ করে দেয়। বৈষ্ণবী জানান যে তখন তাদের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী তাদের কে বলেন যে নাকার মতো যায়গাতে কোন মহিলাকেই একসাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দ্যাখা যায়না কোন কাজ না থাকলে, আর সেখানে এরা ৫ জন মহিলা একসাথে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে অত সকালে খাওয়ার বিক্রি করছিল বলেই খুব একটা বেশি লোক সেদিকে পা দেয়নি। এই উপদেশ নিয়ে তারা ঠিক করে যে একসাথে আর এক সময়ে তারা কাজ করবেনা। তারা নিজেদের দলকে দুভাগে ভাগ করে নেয়। ভোর ৪ তে থেকে দুপুর ১২ টা অবধি একদল আবার বিকেল ৩ তে থেকে রাত ৯ টা অবধি একদল কাজ করবে। আর এই প্ল্যানিং এই কেল্লাফতে একদম। ৩-৪ দিনের মধ্যেই তারা সফল হতে শুরু করে। সকালের খাওয়ারের সাথে সাথে চাহিদা অনুযায়ী তারা ‘চা’ এর ব্যাবস্থাও করে। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। সকালবেলা শীরা আর পোহার সাথে থাকে চা আর বিকেলে সুধুই চা। এই তিনটে জিনিস বিক্রি করেই আজকে এই উদ্যোগী মহিলারা মাসে ২০০০-৩০০০ টাকা রোজগার করছে।

যদিও তাদের এই সফলতা খুব স্বাভাবিক ছিল তবু প্রথম দিকে অনেকরকম বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাদের। কখনো বাড়িতে পরিবারের লোকজনের থেকে তো কখনো লোকাল বিক্রেতাদের থেকে অনেকরকম বাঁধা এসেছিল। আসলে জে.এম.এম.ইউ.জির এই উদ্যগের অনেক আগে থেকে যারা ওখানে চা বা অন্যান্য খাওয়ার বিক্রি করতো, আস্তে আস্তে তাদের ব্যাবসা মার খেতে শুরু করে আর তারা তখন ক্ষেপে যেতে থাকে এই মহিলাদের ওপর। বিভিন্ন রকম প্রত্তক্ষ বা পরক্ষ আক্রমণ ধেয়ে আসে তাদের দিকে। রেখা বলছিলেন যে একজন রাজস্থানি চা বিক্রেতা তাদের অনেক আগে থেকেই ঠিক তাদের উল্টোদিকে দোকান করে ব্যাবসা করত, তারা ব্যাবসা শুরু করার পর থেকে তার ব্যাবসা মার খেতে শুরু করে আর সেই রাগে সে অনেকরকম ক্ষতি করার চেষ্টা করতে থাকে। ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো থেকে শুরু করে, আরও আজে বাজে আবর্জনা সে ছড়িয়ে রাখত তাদের ঠ্যালা গাড়ির সামনে। এমনকি পচা লেবু আর লঙ্কাও সিন্দুর মাখিয়ে ফেলে রাখত সেখানে, যাতে তাদের খারাপ প্রমান করা যায়। কখনো কখনো তো ভাঙ্গা কাঁচে অনেকখানি কেটেও গেছে, কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্রি নন এরা। হার না মানা মনোভাব নিয়ে প্রতিদিন তারা সেই নোংরা আবর্জনা পরিস্কার করে নিজেদের কাজ শুরু করত।

এরপরের ঘটনা তো অনেকটা হিন্দি ছবির চিত্রনাট্যও মনে হতে পারে। এইসব অশান্তির থেকে মুক্তি পেতে এরপর তারা ওই রাজস্থানি চা বিক্রেতার দোকান টা নিয়ে নেবার কথা ভাবল। আবার সেই যেমন ভাবা তেমন কাজ। বৈষ্ণবীর মনে পরে যে তারা ভাবল যে ওই দোকানদারকে সেখান থেকে উৎখাত করে তারা ওই দোকান টা ভাড়া নিয়ে নিজেদের ব্যাবসা টা তারা ওখানে করবে। যদিও ভাবনা আর তাকে বাস্তব রুপ দেওয়ার মধ্যে অনেক খানি পার্থক্য আছে। দোকানের মালিক তাদের থেকে ভাড়া হিসাবে মাসে ৫ হাজার টাকা আর অগ্রিম হিসাবে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে বসে। ভাড়াটা খুব একটা সমস্যার না হলেও এক কালিন ৩০ হাজার টাকা জোগাড় করে ফেলাটা খুব একটা সহজ কাজ ছিলনা তাদের কাছে। যেখানে তারা প্রথম টাকা জমাত সেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সাথে যোগাযোগ করে তারা যদি কোনরকম লোণ এর ব্যাবস্থা হয় সেই আশায়, কিন্তু তারা বুঝতে পারে যে বিভিন্ন কাগজপত্র লাগবে, এছারাও অনেকরকম প্রক্রিয়াগত সমস্যা আছে, যার ফলে লোণ পেতে পেতে তাদের মাস ছয়েক সময় লেগেই যাবে আর তাদের হাতে অতটা সময় নেই অথচ পেছনে তাকানোর সময়ও সেটা ছিলনা। তারা ঠিক করে যে ৫ জন নিজেদের মঙ্গলসুত্র বন্দক রেখে টাকা জোগাড় করবে। ভাবনাটা সহজ হলেও প্রচলিত সমাজে এটা করা খুব একটা সহজ কাজ ছিলনা। কারণ একজন ভারতীয় মহিলার কাছে মঙ্গলসুত্র কোনরকম সাধারণ গয়না নয়, স্বামী বেঁচে থাকাকালীন বা স্বামীর সাথে সংসার করলে কখনই মেয়েরা এই মঙ্গলসুত্র খুলে ফেলার কথা ভাবতেও পারেনা। আধুনিক মহিলাদের ক্ষেত্রে কিছু কিছু ব্যাতিক্রম দেখতে পাওয়া গেলেও এদের কাছে এটা বেশ একটা কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু এই পাঁচজনের মধ্যে একটা জেদ চেপে গেছিল। তাই তারা বাড়ির লোককে না জানিয়েই তাদের মঙ্গলসুত্র বন্দক রেখে টাকা ধার করে ফেলল। আর ঠিক করল যে যতক্ষণ পুরো টাকা শোধ করে তারা মঙ্গলসুত্র টা ফিরিয়ে আনতে পারছে ততক্ষণ ব্যাপারটা বাড়ির লোকের কাছে চাপাই থাকবে।

৩০ হাজার টাকা হাতে নিয়ে যখন তারা সেই দোকানটা ভাড়া নিল, তখন দুটো আনন্দ তাদের মধ্যে কাজ করতে থাকে। প্রথম হোল ওই রাজস্থানি চা বিক্রেতাকে তারা তাদের পথ থেকে সরিয়ে ফেলতে পেরেছে আর দ্বিতীয়টি হোল রাস্তা থেকে উঠে তারা একটা দোকানের ভেতর বসে ব্যাবসা করতে পারবে। রেখার মনে পরে সেই দিনগুলোর কথা। আসলে সারাদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ব্যাবসা করার থেকে একটা দোকানের ভেতর বসে বিক্রি করতে পারাটা অনেক খানি আনন্দদায়ক আর আরামদায়কও বটে।

সাফল্যের পেছনে রহস্যঃ

রেখা মনে করিয়ে দেয় যে, জে.এম.এম.ইউ.জির সাফল্য এবং এই দশ বছর একসাথে থেকে কাজ করে যাওয়ার পেছনে আসল রহস্যটা হোল, পেশাদারি মনোভাব। এখানে প্রত্যেক সদস্যকে ঘণ্টা হিসাবে টাকা দেওয়া হয়, বৈষ্ণবী বলছিলেন যে দোকানে ঢোকার আর বেরোবার নির্দিষ্ট সময় আছে আর কেউ যদি সেই সময়ের থেকে ১৫ মিনিট দেরিতেও ঢোকে তাহলে তার এক ঘণ্টার টাকা কাটা যায়। আবার কেউ যদি ব্যাবসার কোন কাজের জন্য বাইরে কথাও কাজ করতে যায় তাহলে তার যাতায়াতের ভাড়া থেকে শুরু করে তাকে আলাদা করে ওভার টাইমের পয়সাও দেওয়া হয়। অনেকেই বলেন যে মেয়েরা কখনো একসাথে থেকে কোন কাজ করতে পারেনা, একটা দল তৈরি করে কাজ করাটা মেয়েদের পক্ষে কখনই সম্ভব না। কিন্তু এই মেয়েরা কিন্তু এই না পারাটাকেই পেরে দেখিয়েছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে তাদের মধ্যে কখনো মতের অমিল বা মনমালিন্য হয়নি কিন্তু ঝগড়া বা মারামারি না করে শান্ত ভাবে বসে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করেছে তারা। চিন্তা করেছে কিভাবে আরও উন্নত করা যায় নিজেদের ভাবনা চিন্তা, নিজেদের ব্যাবসা।

এসবের সাথে সাথে ব্রিহন্মুম্বাই মেউনিসিপাল কর্পোরেশন পরিচালিত বিভিন্ন ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করে এই সদস্যরা মোমবাতি তৈরি, সুগন্ধি তৈরি, গয়না বানানো বা কেক, চকলেট বানানো শিখে নিয়েছে। জে.এম.এম.ইউ.জি এখন কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের স্বর্ণ জয়ন্তী শাহ্‌রই রোজগার যোজনার আওতায় এসেছে। এটা আসলে ভারত সরকারের একটা স্কিম যেখানে সমাজের নিচু তলার মানুষদের একটা নির্দিষ্ট প্লাটফর্ম দেওয়ার জন্য ভাবা হচ্ছে। মহিলাদের স্বাবলম্বী করে তোলা, তাদের স্ব-নির্ভর করে তোলাই আসলে এই স্কিমের উদ্দেশ্য। আর এই স্কিমের আওতায় এসে আজকে বিভিন্ন এক্সিবিশনে অংশগ্রহণ করা থেকে শুরু করে অনেক ক্যাটারিং এর অর্ডারও এরা পেয়ে থাকে।

রেখার মনে পরে যায় সেইদিনগুলোর কথা যখন মাসে ৫০ টাকা জমাতেও অনেক ভাবনা চিন্তা করতে হতো তাদের, স্বামীর কাছে হাত পাততে হতো। কিন্তু আজকে তারা নিজেদের বাচ্চাদের ভালো পড়াশুনা করানোর সুযোগ পাচ্ছে, তারা বিনিয়োগ করেছে যেমন তেমনি টাকা জমাতেও পেরেছে সাধ্য মতো। আর এসবই সম্ভব হয়েছে কারণ তারা স্ব-নির্ভর হয়েছে। আজকে দাঁড়িয়ে তাদের স্বামিরাও তাদের জন্য খুশি এবং গর্বিত। অনেকসময় তো পরিবারের লোকেরা তাদেরকে বিভিন্ন কাজে সাহায্যও করে যখন মালের চাহিদা খুব বেশি থাকে। দিওয়ালীর সময় একসাথে অনেক মিষ্টি এবং মোমবাতির অর্ডারও নিয়ে থাকে জে.এম.এম.ইউ.জি। আর এইসব উৎসবের সময়ে, ঠিক সময়ে মাল সাপ্লাই করার জন্য অনেকসময়ই তাদের পরিবারের লোকেরা তাদেরকে খুব সাহায্য করে। সবথেকে আনন্দের বিষয় হোল আজকে জে.এম.এম.ইউ.জির সদস্যরা বিভিন্ন মিটিং এ ডাক পান তাদের এই লড়াইয়ের কাহিনী সমাজের সামনে তুলে ধরার জন্য। একদিন যে সমাজের থেকেই অনেক বাঁধা এসেছিল তাদের চলার পথে, আজ সেই সমাজের কাছেই তারা শিক্ষক, অনেক নতুন প্রাণের স্রস্টা। তাদের এই লড়াইয়ের কাহিনী উজ্জীবিত করছে আরও অনেক রেখা, বৈষ্ণবীকে। খাওয়ারের ব্যাবসার সাথে সাথে নিজেদের একটা রেসটুরেন্ট তৈরি করার কথা ভাবছেন এখন রেখারা। আর এখানেই তারা নিশ্চিত যে তারা তাদের এই স্বপ্নকেও একদিন নিশ্চয়ই সফল করবেই আর এখানেই তাদের সাফল্য।

লেখক: প্রীতি চামিকুট্টি, অনুবাদ: নভজিত গাঙ্গুলি