সরস্বতী পুজো ঢের বাকি। তার অনেক আগেই বাজার ছেয়ে গিয়েছে কুলে।নারকেলি কুলের একচেটিয়া আর নেই, বড় বড় কুলে এখন দোকান ঠাসা। কোনওটার ওজন ষাট গ্রাম, কোনওটা একশোরও বেশি। এইসব তথাকথিত ‘রাক্ষুসে’ কুলের অন্যতম প্রধান যোগানদার মালদহ। যা বাউ কুল নামে পরিচিত। আমের জেলার এই নতুন পরিচয় খুব বেশি দিনের নয়। বাংলাদেশ এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটি এই কুল চাষের প্রবর্তন করে। এর জন্য ওই প্রতিষ্ঠানের আদ্যক্ষর দিয়ে কুলের নাম রাখা হয় ‘বাউ’।
আমগাছের বয়স হলে। ফলন কমলে আমগাছ সরিয়ে নতুন এই ফলের চারা লাগানো হচ্ছে। একটু যত্ন নিলে প্রথম বছরেই চমকে দেওয়ার মতো ফল হচ্ছে। দ্বিতীয় বছরে আরও বেশি। যারা ব্যবসার নতুন পথ খোঁজেন তাদের কাছে রীতিমতো জনিপ্রয় হয়ে উঠেছে ‘বাউ’ কুল। মালদহে দ্রুত এই কুলের চাষ বাড়ছে। যার ‘বাউ’ কুল চাষ মন দিয়ে করছেন বিঘে প্রতি কয়েক লক্ষ টাকা রোজগার তাদের কাছে খুব একটা কঠিন নয়।
ইংরেজবাজার, গাজোল, হবিবপুর, চাঁচল, রতুয়ার মতো জায়গায় এখন ‘বাউ’ কুলের রমরমা। ফলচাষিেদের চোখের মণি। কারণটা খুব সহজ। আম গাছের থেকে খাটনি তুলনায় কম, আবার ফলনও বেশি এবং সবথেকে বড় কথা আয় আমের থেকে অনেকটা বেশি। কেন ‘বাউ’ কুলে চাষের প্রবণতা উত্তোরত্তর বাড়ছে? ইংরেজবাজারের উদ্যানপালন বিভাগের কর্মী দুলাল মণ্ডলের জবাব এত ভাল ফলন আর কোনও ফলগাছে হয় না। বছর পাঁচেক হল মালদহে এই ‘বাউ’ কুলের চাষ হচ্ছে। চাষিদের পরামর্শ দিতে গিয়ে দুলালবাবু বুঝতে পারেন এর পিছনে দৌড়ালে অনেক দূর যাওয়া যাবে। সেই স্বপ্ন নিয়ে গত বছর ১০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ‘বাউ’ কুলের চাষ করেছিলেন তিনি। ফলও মেলে হাতে-নাতে। কুল বিক্রি করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা এসেছে তাঁর। প্রথম বছরে এমন সাড়া পেয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে ঝাঁপাতে চাইছেন তিনি। তার জন্য সামনের বছর আরও ১০ বিঘা জমি লিজ নিতে চান তিনি।
বছরের গোড়ায় অর্থাৎ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে গাছ লাগাতে হয়। ফল আসতে শুরু করে ডিসেম্বর থেকে। প্রথম বছরে গাছ কিছুটা ছোট থাকে। শুরু থেকেই গাছের ফল দেওয়া শুরু হয়। প্রথম বছরে ফলের সাইজ অবশ্য বেশ বড় থাকে। ঠিক মতো যত্ন নিলে একটা গাছ থেকে প্রথম বছরেই পাওয়া যায় প্রায় ৩০ কিলো কুল। পরের বছর পরিমাণটা দাঁড়ায় ৫০ কিলো থেকে ১ কুইন্টাল। দ্বিতীয় বছরে অবশ্য কুলের সাইজটা কিছুটা ছোটো হয়। মোটামুটি কয়েক বছর এই কুল গাছ থেকে ভাল ফলন হয়। মালদহে যখন এই কুলের চাষ শুরু হয় তখন এখানকার মাটি এবং আবহাওয়া নিয়ে কিছুটা চিন্তা ছিল গবেষকদের। উদ্বেগ কম ছিল না চাষিদের। প্রথম কয়েক বছরে ‘বাউ’ কুলের প্রচুর ফলন সেই উদ্বেগ কাটিয়ে চওড়া হাসি ফুটিয়েছে চাষিদের মুখে। যার ফলে আমের জেলায় দ্রুত অর্থকরী ফসল হিসাবে উঠে এসেছে এই ‘বাউ’ কুল।বিপ্লববাবু বলেন, ‘‘আম ছাড়া জেলায় কিছু হবে না। এই মিথ অনেকটাই ভেঙেছে। আমের ওপর নির্ভরশীলতা অনেকটাই কাটিয়েছে এই কুল।’’ ‘বাউ’ কুলে সাফল্যের পর জেলার উদ্যানপালন দফতর এবার ‘আপেল’ কুল চাষে জোর দিতে চাইছে। ‘আপেল’ কুল বেশ সুস্বাদু। কিন্তু আবহাওয়ার জন্য এই কুল চাষে তেমন সাফল্য আসছে না।
চাষিদের কথায়, এক বিঘে জমিতে যেখানে আম বিক্রি করে ২ লাখ টাকা এলেই অনেক। সেখানে ‘বাউ’ কুলের চাষ হলে ছয় থেকে সাত লাখ টাকা অনায়াসেই হচ্ছে। একসময় যারা বলেছিলেন এই কুল চাষ করলে একূল ওকূল দু কূলই যাবে। তারাই এখন ‘বাউ’ কুলে দারুণ মজেছেন।