ই-কমার্সের অফুরন্ত সম্ভাবনা বলছেন পুনিত সোনি
Wednesday December 09, 2015,
3 min Read
ফ্লিপকার্ট শুরু হয় ২০০৭ সালে। তারপর থেকে বিনিয়োগকারীদের দফায় দফায় ৩১৫ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের কাহিনি গল্পের ছলেই বলছিলেন ইওরস্টোরি প্রতিষ্ঠাতা শ্রদ্ধা শর্মাকে। তিনি পুনিত সোনি। ফ্লিপকার্টের চিফ প্রোডাক্ট অফিসার বা সিপিও। আপাতত ফুলেফেঁপে ১৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের এই সংস্থা ভারতের ই-কমার্সের দুনিয়ায় ঝড় তুলেছে। যদিও ফ্লিপকার্টের এবছরের সবথেকে বড় চমক পুনিত সোনি। মোটোরোলার প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং গুগল প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট এগজিকিউটিভ গত মার্চেই ফ্লিপকার্টের সিপিও পদে যোগ দিয়েছেন। দ্য মার্কেটপ্লেস ২০১৫-র ফাঁকে শ্রদ্ধা শর্মাকে জানালেন প্রযুক্তি ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ খুঁটিনাটি।
২০২০ সালের মধ্যে ভারতে অনলাইন রিটেলের বাজার ৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের গণ্ডী ছাড়াবে। তাঁর মতে, “বৈচিত্রময় ভারতে ৫০-৬০টি দেশের বিভিন্নতা লুকিয়ে রয়েছে। প্রতিটি রাজ্যের পৃথক মডেল, গ্রাহকদের চাহিদাও আলাদা। তবে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন, নিরাপত্তা দেওয়া এবং প্রতারণা রোধ করা।‘’ যদিও অনেকক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত সমস্যা অদক্ষতার মূল বলেও মেনে নেন তিনি।
ভবিষ্যতে কোন ক্ষেত্রটিতে ই-কমার্সের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে ? এই প্রশ্নের জবাবে পুনিত সোনির উত্তর চমকে দিয়েছিল শ্রদ্ধাকে। তিনি বললেন বিয়ে এবং বিয়ের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের প্রচুর সুযোগ রয়েছে স্টার্ট আপদের কাছে।
আলোচনায় উঠে আসা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
ভারতের নতুন ট্রেন্ড ‘বেচে দাও’
ওএলএক্স, কুইকর ভারতীয় বাজারে ব্যবহৃত পণ্য বিক্রির এক নতুন ট্রেন্ড তৈরি করেছে। সেকেন্ড হ্যান্ড দ্রব্য ব্যবহারে এখন আর ইতস্তত করেন না ভারতীয় গ্রাহকরা। দ্য মার্কেটপ্লেস ২০১৫-য় মনোনীত স্টার্টআপ জ্যাপিলের প্রতিষ্ঠাতা রাশি মেন্ডাও এমনই একজন স্টার্টআপ।
পুনিতও মনে করেন, সেকেন্ড হ্যান্ড সামগ্রী বিক্রির এই প্ল্যাটফর্ম গ্রাহকের সঙ্গে গ্রাহকের সংযোগে সাহায্য করে। ব্র্যান্ডেড প্রোডাক্টের নিরাপত্তাও পাওয়া যায়।
কতটা জরুরি মোবাইল ?
বাড়িতে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ নেই। আছে শুধু সস্তার এক অ্যান্ড্রয়েড ফোন আর খারাপ সিগন্যালের টুজি কানেকশন। তাদের জন্য মোবাইল অ্যাপে ই-কমার্স পরিষেবা দেওয়া বড় চ্যালেঞ্জ সংস্থাগুলির কাছে। কারণ সমীক্ষা বলছে, ভারতে মাত্র ২ কোটি মানুষের কাছে ল্যাপটপ রয়েছে। তাহলে বাকি বিপুল সংখ্যক গ্রাহককে কাছে টানতে গেলে মোবাইল অ্যাপকেই সহজলোভ্য করে তুলতে হবে।কিছুদিন আগে ফ্লিপকার্ট তাদের মোবাইল সাইট ফ্লিপকার্ট লাইট নতুন করে বাজারে এনেছে। সেখানে 25mb র ফ্লিপকার্ট সাইটটি 10kb –তে নিয়ে আসা হয়েছে। মূল সাইটের ৯৯% সমতুল এই মোবাইল অ্যাপ।
কিন্তু ছোট্ট মোবাইল স্ক্রিনে প্রোডাক্ট ঠিকমতো দেখা যায় না, এর সমাধান কী? দর্শকদের এই প্রশ্নের জবাবে পুনিত বলেন, এটা একটা প্রচলিত ধারণার বেশি কিছু নয়। তবে এই সমস্যার সমাধানে ফ্লিপকার্ট টিম নিরন্তর কাজ করছে।
যদিও পুনিত মনে করেন, তরুণ স্টার্টআপদের প্রথম প্রথম আঞ্চলিক বিষয়টিকে মাথায় রাখতে হবে।সবরকম গ্রাহককে টার্গেট করতে গেলে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
অতুলনীয় ভারত !
দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ভারতে কাজ করার অভিজ্ঞতা অভিনব। এমনটাই বারবার পুনিতের কথায় উঠে এসেছে। তিনি বলেন, এখানে অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। রয়েছে সৃজনশীল ভাবনাও। তবে সেই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার প্রশিক্ষণও জরুরি।
আঞ্চলিক ভাষায় পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রচুর সুযোগ থাকলেও স্টার্টআপদের জন্য প্রথমদিকে ইংরাজি ভাষার অ্যাপই উপযুক্ত, যদি না তাঁরা আঞ্চলিক ভাষায় পরিষেবা দিতে স্বচ্ছন্দ্য হন।
সামাজিক দিক
বন্ধুদের সঙ্গে বা আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে দল বেধে শপিং করতে যাওয়ার একটা সামাজিক দিক রয়েছে। কিন্তু ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে শপিং করলে সেই সামাজিক দিকটি উপেক্ষিতই থেকে যায়। যদিও পুনিতের কথায়, মোবাইলের মতো অত্যন্ত ব্যক্তিগত ডিভাইস মারফত অফলাইন শপিং অভিজ্ঞতার ছোঁয়া পান গ্রাহকরা।
ভেন্ডারদের প্রশিক্ষণ
“অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে ভেন্ডারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি সম্পর্কে তাদের জ্ঞান সীমিত থাকে। স্পেশাল ক্লাস করিয়ে তাদের সাহায্য করা যেতে পারে। কারণ ভেন্ডাররাও একপ্রকার গ্রাহক। তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা না জানলে গ্রাহকদের উন্নত পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে না।”, বললেন পুনিত।
(লেখক অথিরা এ নায়ার, অনুবাদ শিল্পী চক্রবর্তী)