হাত নেই তবু তাঁর 'হাতিয়ার' চেষ্টা

ছোটবেলা থেকেই ক্যান্সারে একটি হাত নেই, শুধু চেষ্টাকে হাতিয়ার করে নিজের ভাগ্যকে রচনা করেছেন রচিত কুলশ্রেষ্ঠ।

হাত নেই তবু তাঁর 'হাতিয়ার' চেষ্টা

Friday October 14, 2016,

3 min Read

বাঁ-হাত কাটা গিয়েছে দুরারোগ্য ক্যান্সারে। বয়স তখন মোটে ছয়। মুম্বইয়ের বাসিন্দা রচিত কুলশ্রে্ষ্ঠ কখনও কখনও তাঁর কাটা হাতের আঙুলগুলির কথা ভাবেন। ক্যান্সার বাঁ-হাতটি বলি নিলেও জীবনের যুদ্ধে রচিতকে কিন্তু হারাতে পারেনি। একহাতি রচিত দুহাতওয়ালা যে কোনও মানুষের কাছেও জীবনযুদ্ধের ব্যাপক উদ্যমের এক নজির।

image


রচিতের বয়স এখন ৩০। ক্যান্সার ধরা পড়ে ঠিক পাঁচ বছর বয়সে। রোগ ধরা গেলেও ডাক্তারবাবুদের কিছুই করার ছিল না। রোগ সনাক্ত হওয়ার এক বছরের মাথায় বাঁ-হাতটি অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হয়। এরপর রচিতের জীবনের কাহিনি অম্লমধুর। শুরুর দিকে নানান তিক্ততায় রচিতের মনোবল ভেঙেছিল। রচিতকে শুনতে হয়েছিল, সে কিছুই করতে পারবে না। একটি মাত্র হাত নিয়ে দুহাতওয়ালা মানুষদের সঙ্গে জীবনযুদ্ধে যুঝে উঠতে পারবে না সে। রচিতের মনে আছে নানা টুকরো টিটকিরি বা অবাঞ্ছিত গুঞ্জনের ঘটনা।

স্কুলের সহপাঠীদের একাংশও তাঁকে হতাশ করবার চেষ্টা করেছিল। অথচ, বলা যা‌য়, প্রায় সব বাধা পেরিয়েই এখন রচিত একজন সফল যুবক। নিবাস মুম্বই।

আসলে বাঁ-হাতখানি খোওয়ানোর পরেপরেই রচিত বুঝে গিয়েছিলেন, জীবন কতটা রুক্ষ ও কঠিন হতে পারে। তখন থেকেই নিজের জীবনকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসাবেই দেখেন রচিত। বয়সও সেইসময় অল্প। তবে জীবনকে ওই চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখাই রচিতের পরবর্তী সাফল্যের চাবিকাঠি। যা আজও প্রতিদিন রচিতকে কোনও না কোনও ধরনের শুভ ফললাভ করাচ্ছে। যেমন, রচিত ক্রিকেট খেলতে পারেন, দাবার চালে মগজ ও ডান হাতটি পোক্ত, টেবিলটেনিসও ভাল খেলেন। ইতিমধ্যে দুবার ১৩,৫০০ ফুট পর্বতারোহণ করে এসেছেন। বিপদে পরাস্ত হননি।

নিজে্র সংকল্পে বেঁচে থাকার প্রমাণ হিসাবে ইতিবাচক কিছু একটা করতেই হয়। একজন প্রতিবন্ধী হয়েও রচিত তা করে দেখিয়েছেন। সম্প্রতি ফেসবুকের হিউম্যান্স অব বম্বে পাতায় নিজের সম্পর্কে জানিয়েছেন, বরাবর ফুটবলের ভক্ত ছিলাম। গোলকিপার হিসাবে খেলেছি আন্তঃস্কুল টুর্নামেন্টে। একটা ঘটনার কথা খুব মনে আছে। আমি গোলকিপার ছিলাম। সেবারে আন্তঃস্কুল টুর্নামেন্টে বিপক্ষ দলের প্রশিক্ষক আমায় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বললেন, বলে বলে অন্তত ৬ গোলে হারাব। চ্যালেঞ্জটা আমি নিলাম। সেবার আমরা ৪-২ গোলে জিতি। রচিত বলেছেন, নিজের সীমাবদ্ধতা নিয়ে হীনমন্য থাকতে নেই। যদিও সকলের মতো সুযোগ-সুবিধা আমি নিজেই পাইনি। তবে সাফল্যের আসল রহস্য হল মানুষের চেষ্টায়। মানুষের চেষ্টাই পারে সব!

রচিতের নিজের ক্ষেত্রে চেষ্টার স্বরূপটি বরাবরই ভিন্ন ধরনের কিছু কাজ করা। বলাবাহুল্য, এর অর্থ নিজেকেই নিজে পরীক্ষা করা। এজন্যে কাজ করার সাহস দেখানো দরকার।

রচিত কুলশ্রেষ্ঠ নিজেও বিচিত্র পেশায় কাজ করেছেন। কখনও ওয়েটার, কখনও বারটেন্ডার থেকে হোটেল ম্যানেজার অথবা কল সেন্টার এক্সিকি্উটিভের দায়িত্ব। পেশার তাগিদে বিস্তর ঘুরে নিয়েছেন ৩০ বছরের রচিত। আর নানান পেশায় কাজের শিক্ষা থেকে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করেছে্ন। সম্প্রতি একটি সংস্থা তৈরি করেছেন। পোস্ট ফিল্ম প্রোডাকশনের কাজ করা হচ্ছে সেখানে। রচিতের সংস্থার নাম সিক্রেট লোকেটর্স।

রচিত বারেবারেই পরাস্ত করেছেন ক্যান্সারকে। শৈশবেই তাঁর জীবন থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে একটি হাত। ওই হাতখানি খুব মনে পড়ে রচিতের। মনে পড়ে কাটা হাতের আঙুলগুলিকেও!