মুদির দোকানেও ব্যাঙ্ক, নতুন দিগন্তের দিশা ‘একো’

মুদির দোকানেও ব্যাঙ্ক, নতুন দিগন্তের দিশা ‘একো’

Thursday August 27, 2015,

4 min Read

দিদা-ঠাম্মাকে দেখেছিলাম জরদার কৌটো থেকে, ডালের বয়াম থেকে মাঝে মধ্যেই বের করে আনতেন ৫, ১০, ২০, ১০০ টাকার নোট। পরে বুঝেছিলাম আসলে ওটাই ওদের ব্যাঙ্ক। এদিক ওদিক করে সংসারের খরচ থেকে ম্যানেজ করে দু দশ টাকা সরিয়ে রাখতেন ওই ডালের বা চালের বা জরদার কৌটোয়। আর নয়তো বড়জোড় একটা লক্ষ্মীর ঘট থাকত টাকা জমানোর জন্য। বিপদে আপদে ওই ভাঁড় অথবা কৌটোয় সরিয়ে রাখা টাকাই ছিল ভরসা বাড়ির অনেকের কাছে। মনের গভীরে লুকিয়ে রাখা সাধ আহ্লাদ মেটাতেন জমিয়ে রাখা ওই টাকা থেকে। 

দোকানেই একোর ব্যাঙ্ক

দোকানেই একোর ব্যাঙ্ক


দিদা-ঠাম্মার দিন পেরিয়ে এখন অন লাইন ব্যাঙ্কিংয়ের যুগ। কিন্তু ইন্টারনেট, একটা কিম্পউটার এইসব ব্যবস্থা না থাকলে অনলাইনের আশা ছেড়ে দিন, ব্যাঙ্কের কাউন্টারে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে হাজারো ঝক্কি তখন আপনার অপেক্ষায়। কিন্তু যদি এমন উপায় থাকে,সকালে বাজারটা করতে গিয়ে মুদি দোকানেই ফটাফট সেরে নিলেন ব্যাঙ্কের যাবতীয় কাজ। তাহলে? খুব একটা মন্দ ভাবেননি। 

আপনার মনের কথা বুঝেই মুদির দোকানে ব্যাঙ্কিং সলিউশন নিয়ে হাজির ‘একো’ ব্যাঙ্কিং। যারা ব্যাঙ্কের চৌকাঠ মাড়ানোর কথা ভাবেননি কখনও, শহরের সেই গরিবগুর্বদের জন্য এবার ব্যাঙ্কিয়ের প্রয়োজন মেটাবে ‘একো’। বাড়ির কাছের মুদির দোকানে যেখানে ‘একো’ ব্যাঙ্কিং-এর পরিষেবা মিলবে সেখানে একটা অ্যাকাউন্ট খুলুন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা জরুরি কাজ ফেলে লাইনে না দাঁড়িয়ে প্রতিদিনের টাকা পয়সার লেনদেনের কাজ সেরে নিন মুহুর্তে। নতুনত্ব এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে সস্তার পরিকাঠামো দিয়ে এতটা নিরাপদ, দ্রুত এবং সুবিধাজনক আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে শহুরে গরিবদের কাছে ‘একো’ ব্যাঙ্কিয়ের নতুন দিগন্ত।


একোর আউটলেট

একোর আউটলেট


আরবিআইয়ের সূত্র বলছে, এদেশে মাত্র ৫৯ শতাংশ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা এবং গ্রাহকদের মধ্যে এই ফাঁকটাই পূরণ করতে চেয়েছে ‘একো’। একটা মুদির দোকানে টোলিফোন সংযোগ এবং ব্যাঙ্কিয়ের কাজের জন্য যতটা স্বল্প পরিকাঠামো প্রয়োজন তার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের হাতের মুঠোয় ব্যাঙ্কিং পরিষেবা এনে দেওয়াই ‘একো’র লক্ষ্য। শহরের গরিব মানুষ যাদের ব্যাঙ্ক পর্য়ন্ত যাওয়ার ক্ষমতা নেই, একো সেই গতানুগতিক ব্যাঙ্কিং পরিষেবা এবং ব্যাঙ্কের চৌকাঠ পর্যন্ত পৌঁছতে না পারা মানুষগুলির মধ্যে সেতু তৈরির কাজ করে চলেছে।

প্রয়োজন শুধু একটা মোবাইল। আশেপাশের মুদির দোকানে যেখানে ‘একো’ কাউন্টার আছে সেখানেই নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে টাকা জমা,টাকা তোলা, দেশের যেকোনও জায়গায় টাকা পাঠানো, পৃথিবীর যে কোনও জায়গা থেকে টাকা তোলা,মোবাইল টকটাইম কেনা সবরকম পরিষেবা পাওয়া সম্ভব।

একোর মোবাইল পরিষেবাও বেশ মনকাড়া। এসএমএস, আইভিআর, ইউএসএসডি নানা অ্যপ্লিকেশনের সাহায্যে এক্কেবারে সাধারণ থেকে অত্যাধুনিক সব ধরনের মোবাইল হ্যান্ডসেটের মাধ্যমে টাকার লেনদেন সম্ভব।পরিষেবা নিরাপদ করতে ‘একো’ দুটো জিনিসে জোর দিয়েছে।গ্রাহকদের নামমাত্র খরচে একটা এককালীন পাসওয়ার্ড জেনারেটর ‘ওকেকি’ দিয়ে দেওয়া হয়।এবার পরিষেবা পেতে মোবাইলে ডায়াল করার জন্য শুধু নম্বর সম্পর্কে জ্ঞান থাকলেই চলে যায়। ‘ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি)আমাদের পরিষেবার মেরুদণ্ড। ব্যাঙ্কে এর কোনও বিকল্প নেই।আমরা বিপ্লব ঘটানোয় বিশ্বাস করি,তার জন্য ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া আর কোনও উপায় নেই’, বলছিলেন একোর সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং সিওও অভিনব সিনহা।

image


২০০০ বেশি আউটলেটের উন্নত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ‘একো’ প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে।বেশিরভাগ আউটলেট রয়েছে একেবারে উন্নত শহর থেকে দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ, উত্তর প্রদেশ, পঞ্জাব, বিহারের শহুরে এলাকায়।এইসব এলাকাগুলিতে এমন একটা সময় ছিল যখন গাড়ির চালক, বাড়ির ঠিকা পরিচারিকা কেউ ব্যাঙ্কে নিজের একটা অ্যাকাউন্টের কথা ভাবতেই পারতেন না।

স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া,ইয়েস ব্যাঙ্ক এবং এইচডিএফসি ব্যাঙ্গের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে নিয়েছে ‘একো’।এত থাকতে বেছে বেছে কেন এই তিনটি ব্যাঙ্কের সঙ্গে একো জোট বাঁধল তার কারণ বলতে গিয়ে অভিনব জানান, ‘এসবিআই এখন সবচাইতে বড় ব্যাঙ্কিং পরিষেবা,এইচিডএফসি বেসরকারি ব্যাঙ্ক সেক্টরে অগ্রদূত এবং ইয়েস ব্যাঙ্ক একেবারে হালের অথচ নতুন ,উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দেশের কোনায় কোনায়’।এছাড়াও এমন অনেকসংস্থা আছে যারা বিল মেটায়,টাকা সংগ্রহ করে এবং টাকা পৌঁছে দেয়,তাদেরও অংশীদার করে নিয়েছে একো।২০১৩য় এনএসআইএইচ পুরস্কার ‘একো’কে পরিচিতি দেয়।উন্নত প্রযুক্তি ও তার ব্যাবহারে উৎসাহিত করে। এই মুহূর্তে ‘একো’ই সবচাইতে কম খরচে মোবাইলে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দিয়ে থাকে। ‘একো’ এবার দেশের দ্বিতীয়,তৃতীয় সারির শহর এবং গ্রামে তাদের পরিষেবা ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। সবসময় নতুন কিছু নিয়ে আসা এবং নিরবিচ্ছিন্ন পরিষেবা নিশ্চিত করতে করে প্রয়ুক্তির ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীলতা ‘একো’র তালিকা গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়। ভারতে আর্থিক অবস্থা বেশ চিন্তার।সেখানে ‘একো’র মতো সংস্থা বড় ধরনের বিপ্লব ঘটিয়ে দিতে পারে।

image


‘একো’ মনে করে কয়েকটি বিষয় এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

  1. সচেতনতা- পরিষেবা ব্যাঙ্কিয়ে শেষ কথা।নানা পরিষেবা ধারাবাহিকভাবে যুক্ত হয়েছে।কিন্তু এই পরিষেবা দেওয়া নিয়ে যে সচেতনতা তৈরির কথা ছিল সেটা সন্তোষ জনক নয়।তার উপর আর্থিক পরিষেবার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন সবচেয়ে জরুরি।
  2. পরিকাঠামো এবং সাহায্য -গ্রাহকদের ক্ষোভ নিয়ে ভাবতে হবে। ক্ষোভ থাকলে মেটানোর ব্যবস্থাকরতে হবে।আরও বেশি এটিএম, আরও বেশি লেনদেনের জায়গা বাড়াতে হবে।‘একো’ আসলে ব্যাঙ্ক নয়।কিন্তু তারা এমন ব্যাঙ্কের সঙ্গে কাজ করে যারা গ্রাহকদের ভালো-মন্দ বোঝে।
  3. উন্নত প্রযুক্তি-অল্প সময়ে উন্নত পরিষেবা দিতে আইইসিট, মোবাইল এবং আরও নানা প্রয়ুক্তির ব্যবহার ব্যঙ্কিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৬৫ মিলিয়নের ওপর লেনদেন, ভারতে যার বেশিরভাগটাই মোবাইলের মাধ্যমে করে যাচ্ছে ‘একো’। আর সারা বিশ্বে নিরাপদ লেনদেনের ক্ষেত্রে একমাত্র সমাধান হিসেবে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে ‘একো’।