মিন আমিন কোথাও একটা যাচ্ছিলেন। ট্রেনে। ট্রেনের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিল দুমড়ানো মুচড়ানো প্লাস্টিক বোতল। তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ এক ফোঁটা জল নেই। কী করা যায়? আবারও প্লাস্টিক বোতলে সিল করা পানীয় জল কেনা ছাড়া উপায় কী? সেই প্লাস্টিক যার লয়,ক্ষয় নেই, প্রতিনিয়ত পরিবেশকে দূষিত করে চলে। টনক নড়ল মিন আমিনের। তিনি আরও গভীর ভাবনায় ডুব দিলেন। কীভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করে যাত্রীদের পানীয় জল দেওয়া যায়, সেই ভাবনা।
সঙ্গী পেলেন বন্ধু অক্ষয় রুংটাকে। দুজনেই সুদূরপ্রসারী উন্নয়নে বিশ্বাসী। আইডিয়া বেরল। কিভাবে বোতল ছাড়াই পাবলিক প্লেসে টোকেন মেশিনের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করা যায়! জন্ম নিল "অমৃতধারা"।
সেটা ছিল ২০১৩। পন্ডিচেরির অরোভিল থেকে বইতে শুরু করল মিন আমিন আর অক্ষয়ের অমৃতধারা। তাঁরা পরীক্ষা করে দেখতে চাইছিলেন মানুষ এরকম বোতলহীন জল কিনবেন কিনা! মানুষ স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে কতটা সচেতন সেটাও বোঝা দরকার ছিল। পন্ডিচেরির কিছু জায়গায় পানীয় জলের ছোটো ছোটো স্টল খুলে ফেললেন।
তাঁরা অনেক আলোচনা ও অন লাইন অফলাইন ক্যাম্পেইন করেন। অক্ষয় বোঝেন যে তৃষ্ণার্ত ব্যক্তি আগেই খোঁজেন পানীয় জলের নৈকট্য। সহজে পাওয়া যাবে এমন রিফিল স্টেশন থেকে মানুষ জল কেনেন। তাঁরা ঠিক করেন শুধু তাঁদের জলের স্টল নয় বরং কিছু নির্বাচিত দোকানে ভেন্ডিং মেশিন বসাবেন। বর্তমানে তাঁরা টোকেন মেশিন ব্যবহার করছেন।জলের পরিমাণ অনুযায়ী দাম দিতে হয়। অক্ষয় জানালেন, প্লাস্টিক বোতল বাতিল করার ফলে অমৃতধারার জলের দাম প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং ওয়াটারের অর্ধেক করা গেছে।
তাঁদের সরলতাই কোম্পানির ইউএসপি। সহজ প্রযুক্তি ব্যবহার করে মেশিনের ফ্রন্ট এন্ড জুড়ে দেওয়া হয় ক্লাউড সিস্টেমের সঙ্গে। মেশিন জল সরবরাহ করে ব্যবল টপ ডিসপেন্সারের মাধ্যমে। রেগুলেটর জল সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং অন লাইনে আর.ও. ফিল্ট্রেশন ইউনিটের মাধ্যমে নজর দেওয়া হয় জলের গুণগত মানের ওপর।
সম্প্রতি মিনরা চেন্নাইতে শাখা খুলেছেন। ব্যবসা ধীরে ধীরে লাভ করতেও শুরু করেছে। শুধু পানীয় জল বেচে মূলধন জোগাড় করাটা সহজ নয়। তাঁরা মেশিন বিক্রি ও মেইনটেইনেন্স থেকে টাকা তুলছেন। তাছাড়া এঁরা B2B (Business to business) ব্যবস্থার রূপায়ণ ঘটিয়েও অর্থ জোগাড় করছেন। অনেকক্ষেত্রে দোকানদার মেশিন সংক্রান্ত অসংহত অভিযোগ করছেন। তাই প্রযুক্তিগত ভুলভ্রান্তির দিকেও অক্ষয় আর মিনের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। অরোভিলের মানুষ খুব উপকারী। এখান থেকে যাত্রা শুরুর অভিজ্ঞতা মিনদের বেশ সুখকর হয়েছে। এখন অমৃতধারা বইতে চায় দেশের প্রতিটি মেট্রো শহরে। ভৌগোলিক বিচারে বেঙ্গালুরু সেক্ষেত্রে অনেক বেশি লাভ-দায়ক,একথা অক্ষয়দের অজানা নয়।
অক্ষয় তাঁর মাস্টার্স এর পড়া অসম্পূর্ণ রেখে অমৃতধারার আইডিয়ায় স্নান করেছেন। তিনি বললেন অনেক সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় লড়াই হল বিপুল সমালোচনার মুখে পড়েও লক্ষ্যে স্থির থাকা। মনে রাখতে হবে তুমি কি করবে বলে ভেবেছিলে, সেটা করতেই হবে। পড়ে যাবে, গায়ে ধুলো লাগবে, লাগুক। আসল কথা হল ধুলো ঝেড়ে তুমি আবার গন্তব্যের দিকে চলতে শুরু করলে কিনা। তবেই তোমার জয় নিশ্চয়।