পশ্চিমবঙ্গের স্টার্টআপরা বেঙ্গল সামিটের মঞ্চ থেকে যা পেয়েছেন তা বেশ আশাব্যাঞ্জক। আন্তর্জাতিক মঞ্চ, তাবড় শিল্পপতিদের সার্টিফিকেট। মোহনদাস পাইয়ের আর্জি। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস। শিল্পমন্ত্রীর আন্তরিকতা। একটা ঢাউস প্যাভিলিয়ন। অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মের হদিস। কথা ছিল স্টার্টআপ পলিসি ঘোষিত হতে পারে। হয়নি। আর যা চাই তা বোধহয় 'দেবা ন জানন্তি'।
এবার পরের লক্ষ্য ১৬ জানুয়ারি। নয়াদিল্লি। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিকে তাকিয়ে রয়েছে স্টার্টআপ কমিউনিটি। চাইছে অ্যানিমেল বুস্ট। আর ঝিমিয়ে থাকা নয়। একটা নিশ্চিত দিশা চায় স্টার্টআপ বিশ্ব। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম গণতন্ত্র, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুক্ত বাজার, পৃথিবীর সবথেকে উর্বর আইডিয়ার দেশ। বিশ্বের সেরা মেধা উপত্যকা ভারত এবার এগিয়ে আসুক গোটা দুনিয়াকে পথ দেখাক।
নরেন্দ্র মোদির মুখ থেকে যতবার মেক ইন ইন্ডিয়া স্লোগান শোনা গিয়েছে ততবারই যেন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে স্টার্ট আপ বিশ্ব। সব্বাইতো চায়, বাণিজ্যিক সহায়ক পরিবেশ। দেশকে যদি এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তবে দরকার নতুন উদ্যোগ। আরও বিনিয়োগ। তাই বোধহয় গত বছর লালকেল্লায় মোদির ভাষণে থিম হিসাবে উঠে এসেছিল স্টার্ট আপ।
কিন্তু এরপর? স্টার্ট আপ সহায়ক পরিবেশ কি সত্যিই তৈরি হল? নাকি খামতি রয়ে গিয়েছে? সরকারের কাছে স্টার্ট আপ উদ্যোগপতিরা ঠিক কি চাইছেন তা বোঝার জন্য ইওর স্টোরি সম্প্রতি একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। অদ্ভুত ব্যাপার হল, সরকারি কাজকর্মকে চ্যালেঞ্জ করার বদলে, সমালোচনার বাণে বিদ্ধ করে দেওয়ার বদলে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে ২২০০ জন উদ্যোগপতি কিছু দাবি-দাওয়া পেশ করেছেন। বলা যেতে পারে এর মধ্যে দিয়েই প্রথমবার শোনা গেল ভারতীয় স্টার্ট আপের সুস্পষ্ট কণ্ঠস্বর।
কমপ্লায়েন্স নর্ম সহজ করার দাবি তুলেছেন ৩০ শতাংশ উদ্যোগপতি। তারা চাইছেন, এনিয়ে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
দ্বিতীয় বৃহত্তম সমস্যা হল কর নীতি। ২৫ শতাংশ উদ্যোগপতির দাবি, কর নীতি সহজ সরল করা হোক। কেন্দ্র এবং রাজ্যের লেভি নীতির ফলে ব্যবসা ধাক্কা খাচ্ছে।
১৬ শতাংশ স্টার্ট আপ উদ্যোগপতির মতে, বিনিয়োগ নিয়ে সরকারের আরও উদ্যোগী হওয়া উচিত। উচ্চমানের পরিকল্পনা এবং সৃজনশীলতা থাকলেও অনেক স্টার্ট আপ থমকে যাচ্ছে মাঝপথে।
নতুন উদ্যোগ করতে হলে শুধু পুঁথিগত দিকটা থাকলেই চলে না। দরকার উপযুক্ত প্রশিক্ষণ। এই দুয়ের মধ্যে ফাঁক থেকে যাচ্ছে বলে মনে করেন ৮ শতাংশ উদ্যোগপতি। তাঁদের মতে প্রশিক্ষণের জন্য আইআইএম এবং আইআইটি নেটওয়ার্কের বাইরে কলেজ গড়ে তুলতে হবে। দরকার উপযুক্ত প্রশিক্ষক এবং বাণিজ্য জগতের রথী, মহারথীদের। কে বলতে পারে, তাদের মূল্যবাণ পরামর্শ হয়তো অনেক স্টার্ট আপের চলার পথ মসৃণ করে দেবে।
১৬ জানুয়ারি থেকে দেশ জুড়ে ‘স্টার্ট আপ মুভমেন্ট’। ইওর স্টোরিও সক্রিয়ভাবে তার সঙ্গী। হাজার হাজার নব উদ্যোগের মতো আমাদেরও আশা ‘স্টার্ট আপ মুভমেন্ট’। শুধুমাত্র অবস্থান কিংবা প্রচার কর্মসূচিতে আটকে থাকবে না। সরকারি সক্রিয়তায় উদ্যোগপতিদের ঘাম-রক্তে তা হয়ে উঠবে সত্যিকারের আন্দোলন।