স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। খুব বেশি সময় নেননি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে। একলাখি ন্যানো বাজারে ছেড়ে মধ্যবিত্তের নাগালে এনে দিয়েছিলেন চারচাকার স্বাদ। লক্ষ্য ছিল, রেস্তর অভাবে সাধ থাকলেও যারা গাড়ি কিনতে পারেন না, স্কুটার বা বাইকে চড়ে পরিবার নিয়ে ঘোরেন, তাদের জন্য সস্তার চারচাকা। আর মধ্যবিত্তের স্বপ্নের সুতোয় যিনি বাস্তবকে গেঁথে দিয়েছিলেন, নতুন করে তাঁর পরিচয় দেওয়ার কিছু নেই, তিনি রতন টাটা। টাটা সন্সের চেয়ারম্যান। সেই রতন টাটা এবার ভারতীয় স্টার্টআপে সুযোগের খনি হিসেবে দেখছেন চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষা প্রযুক্তিকে।
‘আমার মতে, আগামীতে সারা পৃথিবীতে যেটা সাড়া ফেলে দিতে চলছে এবং ভারতে আগে কখনও যা হয়নি সেটা হল চিকিৎসা বিজ্ঞানে অভূতপূর্ব ব্রেকথ্রু। কারণ হল কম্পিউটিং থেকে গানিতিক এবং গবেষণা সবেতেই স্টার্টআপ চলে আসা। সম্পূর্ণ বায়োটেকনোলজি এবং লাইফ সায়েন্সের একই অবস্থা। তাই এখনও পর্যন্ত যেসব রোগ সারানো যায়নি, সেসব ক্ষেত্রের চিকিৎসাতেও যুগান্তকারী কিছু দেখছি আমি। এবং আমার মনে হয়, সারা বিশ্বে এটা ঘটবে’। স্টার্টআপদের টেকনোলজি ইনকিউবিটর টি হাবের উদ্বোধনে এসে এই সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন রতন টাটা।
তিনি আরও বলেন, নতুন টেকনোলজি পুরনো টেকনোলজিকে অকেজো করে দেবে না। প্রশ্ন করা হয়েছিল, স্বাস্থ্যসুরক্ষা সম্পর্কিক কোনও স্টার্টআপে তিনি বিনিয়োগ করছেন কি না। তার সরাসরি উত্তর অবশ্য দেননি। যদিও বলেছেন, ‘ভারতের বাঘ’কে প্রকাশ্যে আনতে যেসব তরুণ উদ্যোক্তা আগ্রহ দেখাবেন তাদের পাশে থাকবেন তিনি। আরেক প্রশ্নের জবাবে টাটা বলেন, তাঁর আশা, ভারতে গাড়ির বাজারে ন্যানোর চাহিদা রয়েছে। ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ক্রেতারা ওই দামে গাড়ি চান। কিন্তু একটা ভুল ধারণা ভেঙে দেওয়া দরকার। আমরা কোনও প্রতিযোগিতায় যাইনি। অন্য গাড়ির সঙ্গে তুলনায় যাইনি। দুচাকায় সওয়ারি পরিবারকে সব আবহাওয়ায় চড়া যাবে এমন একটা গাড়ি দিতে চেয়েছিলাম। আমি এখনও আশাবাদী, যাদের গাড়ি দরকার, পরিবার আছে এবং সব আবহাওয়ায় গাড়ি চাই, তাদের গ্যারেজে জায়গা করে নেবে ন্যানো। আমার মনে হয়, এমন প্রডাক্টের জায়গা সবসময় রয়েছে’।
দেশজুড়ে যে অসহিঞ্চুতা নিয়ে বিতর্ক চলছে তাতে ইন্ডাস্ট্রির কী মত জানতে চাইলে টাটা কোনও মন্থব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘ভারত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য পরিচিত। আমার মনে হয় না এতে আমার কিছু মন্তব্য করার রয়েছে। আমি শুধু বলতে পারি, এই দেশে আমরা এক সঙ্গে বাস করি এবং আশা করি সবাই একসঙ্গে শান্তিতে বাস করতে পারবো। এই ইস্যুতে কোনও রকম পর্যবেক্ষণে যেতে চাই না’। ‘ভারত স্ম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমরা একসঙ্গে কাজ করি, বাস করি দেশের জন্য। আমি নিশ্চিত,তাতে কোনও ছেদ পড়বে না, রতন টাটার ব্যাখ্যা।
তেলেঙ্গনা সরকারের উদ্যোগে গড়া টি হাবের প্রথম ফেস উদ্বোধন করেন ইএসএল গভর্নর নরসিমহান এবং রতন টাটা। টি হাব হল টেকনোলজি ইনকিউবেটর (যেখান থেকে বিকাশ ঘটবে)। ইন্ডিয়ান স্কুল অব বিজনেস, দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এবং ইউনিভার্সিটি অব ল- এর পাশাপাশি আরও অনেক সংস্থার সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে টি হাব। ন্যাসকম চেয়ারম্যান বিভিআর মোহন রেড্ডি জানান, টি-হাবে ৩০০ স্টার্টআপের জায়গা হবে, ৮০০ কর্ম সংস্থান হবে। টি হাবের সঙ্গে ন্যাসকমের ১০ হাজার স্টার্টআপ এবং ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার মউ হয়েছে।