উত্তর কলকাতার ছেলে সৌরদীপ ঘোষ নিজে নিজেই একটি সংস্থা হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। অনেকেই ছবি তোলেন। অনেকেই ইনস্টাগ্রামে ছবি পোস্ট করেন, ফ্লিকারে কিংবা ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেই আনন্দ পান। কিন্তু সৌরদীপ এদের থেকে একটু আলাদা। কারণ শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের কাজ প্রদর্শন করেন না, বরং কাজ করেন বিভিন্ন সংস্থার জন্যে। বিভিন্ন ইভেন্টের ফোটোগ্রাফি করাটাই ওর কাজ। আপনি হয়ত ভাবছেন এ আর এমন কী! এরকম তো অনেকেই করেন। ফটোগ্রাফি তো আর নতুন কিছু নয়, কিন্তু ওর ফোটোগ্রাফির প্রতি ডেডিকেশনটা সত্যিই সচরাচর দেখা যায় না।
পৈতৃক বাড়ি ছিল শ্যামবাজার চত্বরে। স্কুল সল্টলেকে। যাতায়াতের পথে মাথার ভিতর ছেলেবেলা থেকেই কিলবিল করত ফ্রেম। নানান ফ্রেম। সেই থেকে ছবির প্রতি টান। আর আজ এখনও একটা বিয়ের অনুষ্ঠানের ফটোগ্রাফি করতে গেলেও সৌরদীপ সমান খুঁতখুঁতে। দীর্ঘদিন ধরে চলে সেই থিম নিয়ে ওর ভাবনা। একটা স্টোরি লাইন তৈরি করেন। সেই অনুযায়ী বিয়ের মত ইভেন্টকে স্মরণীয় করে রাখার কাজটা করেন ও। এখনও ছবি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যাচ্ছেন।
ওর একটাই কথা, "ছবি তো শুধু ছবি নয়, মুহূর্তটা ফ্রেমে বন্দি করাটাই আসল। মুহূর্ত মিস হয়ে গেলে আর তা ফিরে পাওয়া যাবে না। টেক রিটেক যতই করুন, স্বাভাবিকতার সেই সৌন্দর্য আর লেগে থাকবে না মুহূর্তের গায়ে।"
ফলে সময় নিয়ে ও খুবই সচেতন। কারণ সময়ই ওকে শিখিয়েছে সময়কে মূল্য দিতে। এই তো কদিন আগেও ও আর পাঁচজন বন্ধুবান্ধব জুটিয়ে রোববার রোববার ছবির সন্ধানে বেরত। ভালোই তো... বনের পাখি যেমন মনের আনন্দে গায় তেমনি ছবি তুলে বেড়াতেন সৌরদীপ।
সৌরদীপ বলছিলেন, আমি খুশি কারণ আমি বিকল্প একটি প্রফেশন বেছে নিতে পেরেছি। স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটির শিক্ষা টপকে আমি ক্যামেরা কাঁধে নিয়েই আজ স্বাবলম্বী। এ এমন এক অস্ত্র যা মুহূর্তকে ধরে রাখছে। আমার মুহূর্তও ধরা থাকছে পরোক্ষে।
প্রথম দিকে কেবল বন্ধুবান্ধবের ফটো তুলতাম। সেগুলি ফেসবুকে পোস্ট করতাম। অনেকেই ভালো বলতেন। ভালো হয়েছে শুনলে ভালোও লাগত। প্রথমবারের সেই রোজগার প্রসঙ্গে সৌরদীপ বলছিলেন, সত্যি বলতে কি, সুযোগ আমি পেয়েছি আমার বন্ধুদের কাছ থেকেই। এক বান্ধবী প্রথম সুযোগ দিয়েছিলেন। তার দিদির বিয়েতে ছবি তোলার। সেই শুরু। তারপর থেকে একের পর এক ইভেন্টে ছবি তুলেছেন। ছবি তোলাটাই তার প্রফেশন হয়ে গিয়েছে।
এভাবেই একদিন খবর পেলেন নির্বাচন কমিশনের ছবি তোলার একটা কাজ আছে। ঢুকে পড়লেন সৌরদীপ। এই কাজটা ওর বাউণ্ডুলে পনা ঘুচিয়ে দিল। মাটিতে দাড়িয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন উত্তর কলকাতার এই ছেলে।
এখন নিজের একটি ওয়েব সাইট তৈরি করছেন। ক্লায়েন্টের চাহিদা মত সমস্ত ব্যবস্থাই থাকছে সেই ওয়েবসাইটে। থাকছে ছবির গ্যালারি। মুহূর্ত সন্ধানী ছেলেটা এখন ছবিতে ভর করেই রুটি রুজির সন্ধান করছেন। আর হয়ে উঠছেন ছবিপ্রেমী তরুণ-তরুণীদের জন্যে অনুপ্রেরণা।