উত্তর প্রদেশের বেরিলিতে সবাই এই মসজিদটিকে বুধ ওয়ালি মসজিদ বলে চেনেন। নয়া তোলা এলাকায় প্রসিদ্ধ এই মসজিদটিতে সারা বছরই ভিড় থাকে। মোগলাই স্থাপত্যের জন্যে মসজিদটি দেখতে আসেন দর্শনার্থীরা। ভক্তদেরও ভিড় থাকে। বিশেষ করে প্রতি বুধবার ভিড়টা বেশি হয়। এদিন ভক্তেরা আল্লার দরবারে মানত করতে আসেন। এক সঙ্গে কয়েকশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ নমাজ পড়তে পারেন। লাল ইটের এত বড় চাতাল খুব একটা দেখা যায় না। শতবর্ষ প্রাচীন এই মসজিদের কোনও কোণে একটুও ধুলো পড়ার জো নেই। কারণ সতর্ক নজর রাখছেন এক হিন্দু বৃদ্ধ। গোটা মসজিদের তিনিই অভিভাবক। নাম পণ্ডিত রাজেন্দ্র শর্মা। বয়স ৭৯।
তিনিও ধর্মপ্রাণ। ঠাকুর দেবতায় গভীর ভক্তি। রামে, হনুমানে, সীতায়, দুর্গায় যেমন তেমনি আল্লাতেও ভক্তি অটুট। দিনে দুবার আল্লার নাম নেন। ছোটবেলা থেকে নমাজ দেখে দেখে, আজান শুনে শুনে, কোরআন শরিফ পাঠ আর তার তরজমা শুনে শুনে বড় হয়েছেন। এখন তিনি কোনও মৌলবির থেকে কম যান না। আরবি জানেন। ফারসি জানেন। কোরআন শরিফের অনেক সুরা, আয়াত অনর্গল মুখস্থ বলতে পারেন। পণ্ডিত রাজেন্দ্র শর্মা একটা ইতিহাসের অংশ। এই মসজিদের ইতিহাসের সঙ্গে ভারতের সাংস্কৃতিক ইতিহাস এবং সম্প্রীতির ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে।
শতবর্ষ প্রাচীন এই মসজিদটি তৈরি করিয়েছিলেন পণ্ডিত শর্মার বৃদ্ধ প্রপিতামহ পণ্ডিত দাসী রাম। সন্তানের জন্যে আল্লার কাছে মানত করেছিলেন। ইচ্ছে পূরণ হওয়ায় মসজিদটি তৈরি করান।
তারপর থেকেই এই মসজিদটি মুসলিম ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মাচরণের অঙ্গ হয়ে ওঠে। এর জন্যে সামাজিক ভাবে অনেক নিন্দে সহ্য করতে হয় শর্মা পরিবারকে। কিন্তু শেষমেশ সম্প্রীতিরই জয় হয়। নিজেদের ধর্ম ত্যাগ না করেই মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্যে মসজিদ তৈরি করে পণ্ডিত দাসী রাম যে নিদর্শন তৈরি করেন তা এখনও উদাহরণ হিসেবে বেরিলির নয়া তোলা এলাকায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইমাম, মৌলবিরাও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন এই পণ্ডিত পরিবারের।
পণ্ডিত রাজেন্দ্র প্রসাদ বলছেন, তিনি একা নন তাঁর গোটা পরিবার এই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করে। মসজিদের দেখভাল বলতে শুধু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করাই নয় গোটা সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালানো থেকে শুরু করে সকালের আজানের আগে পরে ব্যবস্থা করা। পাঁচ ওয়াক্ত নমাজের তৈয়ারি সবই করেন তিনি কিংবা তাঁর পরিবারের কেউ না কেউ। মসজিদের ইমাম হাফিজ জানে আলাম, গোটা বিষয়টিতে আপ্লুত। বলছিলেন, "অত্যন্ত ভক্তির সঙ্গে যত্ন নিয়ে মসজিদের সমস্ত কাজের দেখভাল এতদিন ধরে করে আসছেন পণ্ডিতজি। কখনও আমাদের সম্পর্কের মাঝে ধর্মের পার্থক্য টের পাইনি।"
আর পণ্ডিতজির সোজা কথা "সব ধর্মই তো এক। আমি রোজ মন্দির যাই। পূজা করি। উপোষ রাখি। গলায় রুদ্রাক্ষ তুলসী আছে। আবার পীর বাবাদের দেওয়া তাবিজ কবজও আছে। আমার কাছে দুইই সমান আদরের।"