উত্তর-পূর্বে শিল্পের আলো জ্বালছেন সঞ্জীব

উত্তর-পূর্বে শিল্পের আলো জ্বালছেন সঞ্জীব

Saturday November 21, 2015,

3 min Read

গুয়াহাটিতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবসা? অনেকেই হয়তো আঁতকে উঠবেন। হয়তো বলা হবে, উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়ি শহরগুলি দেখতে মনোরম ঠিকই। কিন্তু শিল্পের পরিকাঠামো কোথায়? হাজারো প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেিও প্রয়াত সেনা অফিসারের ছেলে সঞ্জীব শর্মা গুয়াহাটিকে কেন্দ্র করেই বিছিয়ে দিয়েছেন তাঁর সাম্রাজ্যের জাল। সঞ্জীবের তথ্য প্রযুক্তির সংস্থার নাম – ওয়েবএক্স।

‘‘বাবার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতে হয়েছে। অবসরের পর বাবা গুয়াহাটিতে থাকার নির্দেশ দিলেন। আর আমি ভাবতাম, গুয়াহাটির বাইরে গিয়ে কিছু করব। কিন্তু বাবার আকস্মিক মৃত্যুতে গুয়াহাটিতে আটকে পড়লাম। গুয়াহাটি হয়ে দাঁড়াল আমার কর্মভূমি।’’ বললেন সঞ্জীব। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। প্রথম চাকরি জ্যাপ ইনফোটেকে। সেখান থেকে আইবিএম। চাকরি ছেড়ে তিনি যখন স্বাধীন ব্যবসার কথা ভাবছেন, সেসময় অনেকেই বলেছিলেন, ‘‘ভাবিয়া করিও কাজ, নইলে কিন্তু পস্তাবে।’’


সঞ্জীব শর্মা, ডিরেক্টর, (সফটওয়ার সার্ভিসেস) , ওয়েবএক্স

সঞ্জীব শর্মা, ডিরেক্টর, (সফটওয়ার সার্ভিসেস) , ওয়েবএক্স


২০০৪ সাল। পুঁজি ১৫ হাজার টাকা। বন্ধুদের কাছ থেকে পুরনো দুটি কম্পিউটার ধার করে ওয়েবএক্স-এর অফিস খুলে বসলেন সঞ্জীব। কিন্তু কাজ কোথায়? আজ থেকে ১৫ বছর আগে উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতে ‌তখন ইন্টারনেট কানেকশন তখন ‘এই আছে তো এই নেই।’ কোনও শিক্ষিত কর্মী নেই। তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে সচেতনতা নেই। অতএব সমস্যা। অসমের পরিবহণ সংস্থা এএফডিসি সে সময় রুগ্ন। বিপুল লোকসান। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে অনলাইনে টিকিট পরিষেবা চালু করার প্রস্তাব দিলেন সঞ্জীব। বিশেষজ্ঞ কমিটির আপত্তি সত্ত্বেও রাজি হয়ে গেলেন ম্যানেজিং ডিরেক্টর। এরপর? দিনরাত এক করে পরিশ্রম। ১৫ দিনেই প্রজেক্ট শেষ করল ওয়েবএক্স। চালু হল অনলাইন পরিষেবা। এএফডিসি-র আয় বাড়ল, শেয়ার দর বাড়ল। কাজ পেলেন কম করে ১৫০ জন। ছড়িয়ে প‌ড়ল ওয়েবএক্স-এর নাম।


image


২০০৮ সালে স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটের কাজ থেকে সরে এসে ওয়েবএক্স পুরোপুরিভাবে পা রাখল ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন এবং কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের দুনিয়ায়। ৪২ জন কর্মীর ওয়েবএক্স-এর কর্পোরেট অফিস গুয়াহাটিতে। অসমের বিভিন্ন প্রান্ত, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ এবং নাগাল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়েছে শাখা-প্রশাখা।


image


সঞ্জীবের কথায়, ‘‘আমরা শূন্য থেকে শুরু করেছি। আমরা মনে করি সংস্থাকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হলে নতুন কিছু ভাবতেই হবে।’’ সঞ্জীবের এরকমই এক ভাবনার ফল হল – রূপালীপর্দা ডটকম। অসমের বিনোদন জগতের তামাম খবর তুলে ধরার জন্য দ্বিভাষিক পোর্টাল তৈরি করেছে ওয়েবএক্স। কী নেই সেখানে। অসমীয়া ফিল্মের ইতিহাস, ভিডিও ফাইল, সিনেমা রিভিউ। শুরুতে ততটা সাড়া না পেলেও এখন রূপালীপর্দা ডটকম হিট। বাড়ছে দর্শক। সঞ্জীব জানালেন খুব তাড়াতাড়ি উত্তর পূর্ব ভারতের প্রথম ইন্টারনেট টিভি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে রূপালীপর্দা ডটকম।

‘‘অসমের মতো জায়গায় তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করাটা সহজ নয়।’’ কিন্তু কেন। নাছোড় প্রশ্নে সামনে দাঁড়িয়ে সঞ্জীব তুলে ধরলেন সমস্যার হাজারো বৃত্তান্ত। ‘‘তথ্য প্ৰযুক্তি নিয়ে রাজ্য সরকার নীতি ঘোষণা করেছে ঠিকই কিন্তু তা অস্পষ্ট, স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। বড় শিল্প নেই, জায়গায় দক্ষ লোক মেলে না।’’

দুই ভাইকে সঙ্গী করে তবু লড়ছেন সঞ্জীব শর্মা। এই মুহূর্তে ক্লায়েন্টদের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। গত আর্থিক বছরে আয় ছিল ৫ কোটি টাকা। এবার তা ৮ কোটির সীমা ছাড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সঞ্জীব ঘোষণা করেছেন, ‘‘কেউ যদি নতুন উদ্যোগের পরিকল্পনা দেয়, তবে স্বাগত। দরকারে বিনিয়োগ করে সেই উদ্যোগের শরিক হবে ওয়েবএক্স।’’ ইতিমধ্যে ১৩টি পরিকল্পনা জমা পড়েছে সঞ্জীবের টেবিলে। কোনওটা নাগাল্যান্ড থেকে, কোনওটা আবার এসেছে অরুণাচলের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে। শুধুমাত্র শহরে আটকে থাকার বদলে উত্তর পূর্ব ভারতের শহরতলী এমনকী গ্রামগঞ্জেও ঢুকতে চায় ওয়েবএক্স। ‘‘আমরা এখন অভিজ্ঞ, আমাদের সংস্থা আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। ওয়েবএক্স যদি উত্তর পূর্ব ভারতের জন্য কিছু করতে পারে, তবে খুব ভাল লাগবে।’’ স্বপ্ন চলকে পড়ল তরুণ তুর্কির চোখ থেকে।

লেখক — অপরাজিতা চৌধুরী

অনুবাদ — তন্ময় মুখোপাধ্যারয়