৩০ সেপ্টেম্বর অথবা ৩০ অক্টোবর। যদি আপনি সংস্থার মালিক হন তাহলে বছরের এই দুটো দিন আপনার বুক ধড়ফড়ানির কারণ হতেই পারে। ৩০ সেপ্টেম্বর ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ফর্ম ভরার শেষ দিন। আর ৩০ অক্টোবর সংস্থার রেজিস্ট্রেশন সহ অ্যানুয়াল ফিন্যানশিয়াল স্টেটমেন্ট (বার্ষিক আর্থিক ঘোষণা) ভরার শেষ দিন। যদি আপনার সংস্থায় এনজেল বা ভিসি ফান্ডিং থাকে অথবা যদি তৃতীয় পক্ষের বিনিয়োগ নিজের সংস্থায় টানতে চান, মনে রাখবেন আয়কর ফাইল পরিষ্কার রাখা সবচেয়ে জরুরি। কারণ বিনিয়োগের পূর্ব শর্ত হল দুই পক্ষের পূর্ণ সম্মতি।
নতুন ব্যবসা শুরু করার আগে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকতে হবে। তার সঙ্গে আইটি রিটার্ন ফাইল সহ আনুষাঙ্গিক আরও কয়েকটি বিষয়ের দিকে নজর দিতে হয়। বাজারে তাড়াতাড়ি ঢুকে পড়ার চক্করে যা হবে দেখা যাবে গোছের মনোভাব থাকা ঠিক নয়। প্রথম দু তিন বছর চলার পর তিনটের মধ্যে অন্তত দুটো র্স্টাটআপ বন্ধ হয়ে যায়। কর সংক্রান্ত বা ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীর মধ্যে অসম্মতি তার মূলে হয়ত নয়, কিন্তু এগুলিই এক একটা কারণ।
বেশিরভাগ স্টার্টআপগুলির ধারনা, যেহেতু তাদের ব্যবসায়ীক কোনও লেনদেন নেই, লসে চলে, ফলে তাদের ট্যাক্স ফাইল করার কোনও প্রয়োজন নেই। বাস্তব হল, যাই পরিস্থিতি হোক না কেন যেকোনও সংস্থা, লিমিটেড কোম্পানি বা অংশীদারীত্বের ব্যবসাতে পাঁচটি মূল বিষয় মেনে চলতেই হবে। বিষয়গুলি নীচে বিস্তারিত দেওয়া হল-
অ্যাকাউন্টিং এবং বুক কিপিং
কেনা বেচার হিসেব এবং বিল-ইনভয়েস রেখে বাৎসরিক হিসেব ঠিক রাখা বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর কাছে যেন বোঝা। এই হিসেবটুকু না রাখলেই সর্বনাশ অবস্যম্ভাবী। যেমন ধরা যাক, সংস্থা তৈরির সময় রেজিস্ট্রেশন ফিস, নাম অ্যাপ্রুভাল, এবং স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হয়। তারপরও, সংস্থার মালিক ব্যবসা শুরুর সমস্ত কিছু দেখভালের জন্য প্রচুর টাকার বিনিমযে অভিজ্ঞ ফার্মকে দায়িত্ব দেয়। সংস্থা তৈরির আগের এই খরচটুকু অনেক ট্যাক্স বাঁচিয়ে দেয়। তাছাড়া ইনভয়েসে ভ্যাটের ব্রেক-আপ থাকে এবং সার্ভিস ট্যাক্স তো আশীর্বাদের মতো, বিশেষ করে ধার চাওয়ার ক্ষেত্রে দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। সবরকম খরচ, বিশেষ করে ব্যবসার জন্য যত খরচ হয়েছে তার সবটাই সংস্থার মালিকের হিসেব রাখা উচিত। যদিও রেভিনিউ থেকে এগুলি বাদ হয়ে যায়। যদি কোম্পানি লসেও চলে তবুও সবকিছু রেকর্ডে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয় যাতে পরে প্রফিট দিয়ে সেটাকে পরে ভরে দেওয়া যায়।
শাস্তির ব্যবস্থা
ঠিক মতো হিসেব দেখাতে না পারলে যিনি এর জন্য দায়ী থাকবেন তাঁকে জেল এবং জরিমানা দুই শাস্তিই ভোগ করতে হবে। সর্বাধিক ১ বছর পর্যন্ত জেল অথবা আর্থিক জরিমানা ৫০,০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫,০০০০০ টাকা পর্যন্ত, কখনও জেল এবং জরিমানা দুটোই ভোগ করতে হয়।
ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করা
আয়কর রিটার্ন ফাইল করাই আয়ের সব থেকে বিশ্বাসযোগ্য প্রামাণ্য দলিল। কিন্তু অনেকে আয়কর রিটার্ন ফাইল করে না, কারণ তাঁরা প্রক্রিয়াটাই জানেন না। যেকোনও স্টার্টআপের উচিত কর পরামর্শদাতা নিয়োগ করা যিনি সময়ে ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করে নানা সুবিধা পেতে উদ্যোক্তাদের সাহায্য করতে পারেন। কী কী সুবিধা পেতে পারেন জেনে নিন-
- আয়কর অফিসাররা সবসময় ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছেন। সময়মতো আয়কর দিলে অফিসারদের হাতে নাকানি চোবানি খাওয়ার সম্ভবনা থাকে না।
- ব্যবসার ক্ষতি ক্যারি ফরোয়ার্ড হয়ে যেতে পারে। পরবর্তীকালে লাভের অংশ দিয়ে সেটা পুষিয়ে দেওয়া যায়।
- বিনিয়োগ টানার জন্য আয়কর রিটার্ন ফাইল অত্যন্ত জরুরি।
- একমাত্র ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করলেই ট্যাক্স রিফান্ড দাবি করা যায়।
প্রতি বছর আয়কর রিটার্ন ফাইলের শেষ দিন ৩০ সেপ্টেম্বর। যদি সংস্থার জন্য ট্রান্সফার প্রাইসিং প্রযোজ্য হয়, তবে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ দিন প্রতিবছর ৩০ নভেম্বর হয়।
শাস্তির ব্যবস্থা
ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করতে দেরি হলে ইউএস ২৩৪ এ ধারা প্রয়োগ হবে। ১৩৯ ধারা অনুযায়ী বেঁধে দেওয়া সময়ে যদি করদাতা কর দিতে না পারেন তাহলে আয়কর রিটার্নের শেষ দিন থেকে যেদিন জমা দেওয়া হল সেই দিন পর্যন্ত প্রতি মাসে অথবা মাসের বাকি সময়টুকুর জন্য এক শতাংশ করে জরিমানা দিতে হয়। তাছাড়া, ট্যাক্সরিটার্ন ফাইল না করার জন্য জরিমানা ৫০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
বিধিবদ্ধ অডিট নিয়মানুবর্তিতা
যে কোনও সংস্থায় বার্ষিক অডিট বাধ্যতামূলক। যে সব এলএলপি (লিমিটেড লায়াবিলিটি পার্টনারশিপ)তে বছরে ৪০ লাখ টাকার ওপর টার্নওভার আছে অথবা ২৫ লাখ টাকার অংশীদারিত্ব থাকে তাদের এলএলপি অ্যাক্ট অনুযায়ী প্রতিবছর অ্যাকাউন্ট অডিট করতে হয়। এলএলপি অ্যাক্ট অনুযায়ী, যদি এলএলপির অংশীদাররা অ্যাকাউন্টের অডিট করাতে না চান, তবে স্টেটমেন্ট অব অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড সলভেন্সিতে একটা বিবৃতি দিতে হবে। এই বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়ে দিতে হবে অংশীদাররা হিসেব রাখার ব্যাপারে তাঁদের দায়িত্ব, ধারা এবং আইন ছাড়াও ফর্ম ৮ এর শংসাপত্র সম্পর্কে সচেতন। তারপরও অবশ্য নিশ্চিন্তে থাকার কোনও কারণ নেই।
আরওসি নিয়মানুবর্তিতা
যে কোনও সংস্থার (শেয়ার ক্যাপিটাল থাকুক আর নাই থাকুক) এবং এলএলপি সংস্থাগুলিকে কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের কাছে বার্ষিক আর্থিক রিপোর্ট দিতে হয়। ২০১৩ সালে কোম্পানি অ্যাক্ট-এ বার্ষিক আরওসি নথিবদ্ধ করে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হয়েছে। এই বার্ষিক ফাইলিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে ২০১৩র অ্যাক্ট মেনে সংস্থার অধীনস্থ সংস্থাগুলিকেও আরওসির সঙ্গে ই-ফর্ম পূরণ করতে হয়।
শাস্তির ব্যবস্থা
আরওসির জন্য শাস্তির ক্ষেত্রে এতটাই কড়াকড়ি যে সংস্থা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সময় মতো জমা না পড়লে বাড়তি ফিস ১২ গুন পর্যন্ত বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ২০১৩র কোম্পানি অ্যাক্ট অনুযায়ী, আইন ভাঙার গুরুতর অপরাধে সংস্থার ডিরেক্টরকে জেল পর্যন্ত যেতে হতে পারে।
সীমিত দায় সংস্থাগুলির জন্য শাস্তির ব্যবস্থা-
অদ্ভুতভাবে এলএলপিগুলি ট্যাক্স দেরিতে দিলেও তাদের জন্য কোনও লেট ফাইলিং ফি নেই। একটাই নিয়ম প্রতিদিন ১০০ টাকা করে জরিমানা। হিসেব হয় জমা দেওয়ার শেষ দিন থেকে যে দিন জমা পড়ল সেই দিন পর্যন্ত।
আগেই বলা হয়েছে, ব্যবসার যাই হাল হোক এই নিয়ম মানতেই হবে। নয়তো সম্পূর্ণ চালু একটা সংস্থাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যদি এখনও আপনার সংস্থার জন্য এই কাজগুলি করে উঠতে না পারেন তাহলে এখনই শুরু করুন। আপনার সাধের সংস্থা বা ব্যবসা যাতে শাস্তির খাঁড়ায় বন্ধ করে দিতে না হয় সেই চেষ্টা করুন।