"আজ আমি ক্ষমতায় আছি তার মৌলিক কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ আমাকে কেউ কখনও আমার এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। আমি শুধুমাত্র মেয়ে বলে ছোটোবেলা থেকেই আমার জন্য আলাদা কোনও বাইবেল ছিল না। কী করব কী করব না কেউ চোখে আঙুল দিয়ে আলাদা করে দেয়নি। আর তাইই আমাকে স্বাবলম্বী করেছে।" কথাগুলো বলছিলেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন ললিতা কুমরামঙ্গলম। সাহসী দৃপ্ত ললিতা ইওরস্টোরি এবং জাতীয় মহিলা কমিশন আয়োজিত SHAKTI-র মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই কথাগুলো বলছিলেন। ৮ মার্চ নারী দিবস উদ্যাপন করল ইওরস্টোরি। দিল্লিতে একটি পাঁচতারা হোটেলে আয়োজিত হয় এই আলোচনা সভা। উপস্থিত ছিলেন গোটা দেশের তাবড় মহিলা উদ্যোগপতিরা। উদ্যোগের দুনিয়ায় মেয়েদের পিছিয়ে থাকার যে লেগাসি রয়েছে মৌলিকভাবে তাই ই ছিল মূল আলোচ্য।
দেশ তখনই এগোয় যখন নারী শক্তি জাগরিত হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম ঘটনা একবার দুবার নয় বারংবার প্রমাণিত যে নারী শক্তিই বিদ্ধস্ত সমাজকে খাদ থেকে টেনে তুলেছে। ইউরোপের ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মত ভয়ংঙ্কর তাণ্ডব খুব একটা হয়নি। সব বিদ্ধস্ত হয়ে পড়েছিল জার্মানি। সেই সময় গোটা দেশটাতে নারী শক্তিই এগিয়ে এসেছিল আজকের এই উন্নত জার্মানি মাথা তুলেছে কেবল মাত্র তাঁদের হাত ধরেই। ভারতের গ্রামে মহিলারাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কৃষি কাজ করে। শহরেও সমান তালে মহিলারাই দেশের গ্রোথ ইঞ্জিনকে ঠেলছেন। তবুও মহিলাদের লড়াইটা যতটা না কায়িক তার থেকে অনেক বেশি মানসিক। মর্যাদার এই লড়াইয়ে নিজের জায়গা করে নিতেই মহিলাদের সব থেকে বেশি হিমসিম খেতে হচ্ছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে মহিলাদের যে অগ্রগতি চোখে পড়ছে তার অধিকাংশটাই শুধু মাত্র তাঁদের একক লড়াইয়ের অসামান্য কাহিনি। স্কুল কলেজ অফিস বাস ট্রাম ট্রেন কিংবা খেলার মাঠ লড়াইটা একটু বেশিই করতে হয় মেয়েদের। সম্মানের সঙ্গে সম্মান আদায় করে নিতে হয় রীতিমত যুদ্ধ করেই।
ঘরে মহিলাদের অবদান অস্বীকার করার হিম্মত নেই কোনও সফল পুরুষেরই। ফলে মহিলাদের অস্বীকার করার উপায় নেই তবুও পিছিয়ে রয়েছে দেশের অর্ধেক আকাশ। নারী নির্যাতন যেমন হচ্ছে এনতার তেমনি নারীদের স্বীকৃতি দিতেও হেঁচকি ঢেকুর উঠছে অনেকেরই এরকম পরিস্থিতিতে মহিলা কমিশনের সাথে গাঁটছরা বেঁধে ইওরস্টোরি মহিলাদের স্বাবলম্বী করার কাজটা শুরু করে দিয়েছে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প সর্বত্রই নারী জাগরণের প্রয়োজন। আরও বেশি মহিলা উদ্যোগপতি আসুন। দেশ গড়ুন। সমস্ত অবিচারের মুখে সেটাই হবে সঠিক জবাব। Sustainable Goal এও জায়গা করে নিয়েছে লিঙ্গ বৈষম্যের এবং লিঙ্গ সংক্রান্ত অবিচারের ইস্যু গুলি। ভারত এগোচ্ছে কিন্তু গতি আরও চাই। শক্তির মঞ্চ থেকে উঠে এল এই এগোনোর মন্ত্রই।