চারবার ব্যর্থ হয়েও সাফল্যের শীর্ষে ‘উইটিফিড’

চারবার ব্যর্থ হয়েও সাফল্যের শীর্ষে ‘উইটিফিড’

Sunday November 22, 2015,

4 min Read

চার চারটে প্রডাক্ট ব্যর্থ। ব্যর্থতার তকমা সেঁটে গিয়েছে গায়ে। তাই বলে কী পাততাড়ি গোটাতে হবে? এক রবিবার বিকেলে সেই স্টার্টআপের ইন্দোরের অফিসের ভেতর থেকে ভেসে এল ‘হুররে...’। আসলে এদেরই ফ্ল্যাগশিপ পোর্টাল ৬০ মিলিয়ন ইউনিক ভিজিটর পেয়েছে। আর প্রতি মাসে ২৫০ মিলিয়ন পেজ ভিউ হয়। সম্প্রতি ব্যাঙ্ককে অল ইন্ডিয়া অ্যাচিভারর্স ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ফাস্টেস্ট গ্রোইং কোম্পানি ইন আইটি সেক্টর পুরস্কার পায় এই স্টার্টআপ। মিলেছে গুগুলের স্বীকৃতি। কিছুদিন আগে নিজেদের প্রডাক্ট ব্যবহার করে সফল সংস্থাগুলির উপর কেসস্টাডি করায়, গুগুল স্টার্টআপটিকে এলিটগ্রুপে মনোনীত করেছে।

image


কাজ শুরুর এক বছরের মধ্যে ৫০০টি মোস্ট ভিসিটেড ওয়েবসাইটে জায়গা করে নেয়। ভাইরাল কনটেন্টে পাঠকদের মুগ্ধ করে ‘উইটিফিড’ সবার মনে জায়গা করেছে। উইটিফিড ডটকম হল একটি মঞ্চ, যারা মনেরভাব প্রকাশ করাতে চায়, লিখতে, পড়তে এবং নতুন নতুন বিষয় খুঁজে বের করতে চায়, তাদের জন্য। কিন্তু ‘উইটিফিড’ যা দিয়ে সারা বিশ্বে লাখো পাঠকের মন জয় করে নিল তা হল, হাতেগরম ভাইরাল কনটেন্ট।

তাহলে ‘উইটিফিড’ কীভাবে প্রথমের নড়বড়ে অবস্থা থেকে উঠে এসে সোনা ফলালো? বলতে পারি ‘উইটিফিড’ আসলে ভটসনা টেকনোলজি লিমিটেডের অন্য দুই প্রডাক্ট evrystry.com এবং thestudpidstation.com এর থেকেও বেশি সফল সহোদরের মতো। এক বছর সময়ের মধ্যে ‘উইটিফিড’ নতুন অবতারে প্রকাশিত হয়ে পেজভিউ ৫ মিলিয়ন থেকে এক ধাক্কায় ২৫০ মিলিয়নে নিয়ে যায়। ঠিক কী হয়েছিল? সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিনয় সিঙ্ঘল বলেন, ‘এইসব একরাতে হয়নি। চার বছর নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এই জায়গায় আসতে পেরেছি। প্রোডাক্ট ব্র্যান্ডিংয়ের পাঠ নিলাম। এর আগে আমাদের কনটেন্ট পোর্টাল evrystry ভালো সাড়া পায়নি। একটা আকর্ষণীয় নাম খুঁজছিলাম যেটা শুনলে প্ল্যাটফর্ম বলে মনে হবে। সম্প্রতি উইটিফিড ৪৫ হাজার ইউজার একসঙ্গে পেজে ঢোকার লক্ষ্য টপকায়। সিলিকন ভ্যালি স্টাইলে বড় পর্দায় সেই সংখ্যা দেখিয়ে, পা ঝাঁকিয়ে ৩৫ জনের টিম সেই আনন্দ সেলিব্রেট করেন।

image


‘উইটিফিড’ পাঠকদের সামনে কনটেন্ট তুলে ধরে আর রেভিনিউ আসে নানা ডিসপ্লে অ্যাড এবং টুলস যেমন, Google AdX, OpenX, epom এবং Content.ad- এইসবের মাধ্যমে। ‘উইটিফিড’এ যেটা ইউনিক সেটা হল Viral9.com । ৬হাজার সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার কনটেন্টকে ভাইরাল করে তোলে। ওয়েবসাইট ভিউ দেখে গুগুল ‘উইটিফিড’এর জন্য আলাদাভাবে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার নিয়োগ করেছ। ‘বর্তমানে আমাদের একটা টিম রয়েছে যারা ভাইরাল ভিডিওগুলি দেখে। ওয়েবসাইটে পোস্টের আগে লেখকরা কনটেন্ট দেখে দেন অথবা লেখেন। এখন আমরা এমন এক সিস্টেম নিয়ে কাজ করছি যেখানে ‘উইটিফিড’ ই ঠিক করবে কোনটা ভাইরাল আর কোনটা ভাইরাল নয়’, বলেন সহ প্রতিষ্ঠাতা শশাঙ্ক বিষ্ণই। কলেজের তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় ২০১২ সালে শশাঙ্ক অ্যামেজিং থিংগস ইন দ্য ওয়ার্ল্ড নামে একটি ওয়েবসাইটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ‘উইটিফিড’এর তৃতীয় সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রবীন সিঙ্ঘল বলেন, ‘আজকাল আমরা যে অ্যাড লিঙ্ক দেখি কিছুদিন পর সেসব আর থাকবে না। এখন অ্যাডগুলির সঙ্গে গল্প জুড়ে দিতে হয়’। ‘যখন শুরু করেছিলাম, মাথায় দুই প্রতিযোগী Buzzfeed এবং Diply কথা ছিল। বাজারে তখন এরাই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ওদের থেকে আলাদা হতে গিয়ে আমরা শুধু আরেকটা ওয়েবসাইট খুলে কনটেন্ট নষ্ট করতে চাইছিলাম না, একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাইছিলাম, যেখানে ফটো ব্লগ থাকবে, যত খুশি শব্দ শেয়ার করা যাবে’, প্রবীণের ব্যাখ্যা।

‘‘উইটিফিড’এ যে কেউ কাজ করতে চাইলে, তাদের গান গাইতে, জোকস বলতে, কৌতুকাভিনয় বা নাচ করতে বলা হয়। এই ধরনের লোক চাই আমরা। এখানে যে কেউ যা খুশি করতে পারে, কেউ বিচার করতে আসবেন না’, বিনয়ের সংযোজন। ‘বেশিরভাগ কর্মী ফ্রেশার। আমাদের বিশ্বাস, ‘নবীন মেধা নতুন কিছু শেখার ব্যাপারে আগ্রহী থাকবে, ‘উইটিফিড’এর ধরন ধারণে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে’, বলেন প্রবীন। টিমটার জন্য একটা অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে যেখানে অবিবাহিত ছেলেরা সবাই একসঙ্গে থাকেন। সংস্থাই মাসিক প্রয়োজনের টাকা যোগায়। একজন কুক রয়েছেন যিনি স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করে সবাইকে ফিট রাখেন।

দুই ভাই বিনয় এবং প্রবীনের সঙ্গে হরিয়ানার বাসিন্দা শাশাঙ্কের দেখা হয় কলেজে পড়ার সময়। কলেজের তৃতীয় বর্ষে তাদের স্টার্টআপ চালু করেন। তিন বছর চেন্নাই থেকে সংস্থা পরিচালনা করেছেন। পরে বিনয় যখন ইন্দোরে শশাঙ্কের বাড়ি যান, তখনই তাঁর মনে হয় স্টার্টআপের জন্য ইন্দোরই ঠিক জায়গা। তিন মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৪র জুনে ব্যবসা ইন্দোরে চলে যায়। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে ‘উইটিফিড’এর বছরে ৬ মিলিয়ন ডলারের বেশি টার্নওভার। প্রতিষ্ঠাতারা সাফল্যের পুরও কৃতিত্বই দেন টিমকে। আমরা স্কিল হায়ার করি না, লোক নিই। যা তাদের করতে ভালো লাগে তাই করতে দিই। তাই সবাই নিজের নিজের কাজ ভালোবাসে। একটা পরিবারের মতো থাকে সবাই মিলে, বললেন শশাঙ্ক। বিনয়ের ভাষায়, ‘সাফল্যের কোনও সমীকরণ হয় না, নিজের ফর্মূলা নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়’।

লেখক-মুক্তি মাসিহ

অনুবাদ-তিয়াসা বিশ্বাস