অভিভাবকদের সঠিক পথ দেখাচ্ছে ‘পেরেন্ট সার্কেল’

অভিভাবকদের সঠিক পথ দেখাচ্ছে ‘পেরেন্ট সার্কেল’

Saturday December 19, 2015,

3 min Read

মার্কিন ‌যুক্তরাষ্ট্রে টানা ২০ বছর কাটানোর পর দুই সন্তানকে নিয়ে ভারতে ফিরে এক বড় সমস্যার মুখে পড়লেন নলিনা রামলক্ষ্মী। নতুন শহরে দুই সন্তানকে নিয়ে খাপ খাইয়ে নেওয়া নেহাত সহজ কাজ ছিল না। বরং এতদিন আমেরিকায় কাটানোর ফলে একটা সাংস্কৃতিগত মোড়ের সামনে পড়তে হয় তাঁকে। পঠনপাঠন ক্ষেত্রে সনাতনি ও বিশ্বব্যাপী, এই দুই বিপরীত মেরুর ভাবনার মধ্যে একটা সংযোগ সৃষ্টির আপ্রাণ চেষ্টা শুরু করেন তিনি। নলিনার মতে, শুধু তিনি নন, এই একই সমস্যার সঙ্গে অনেক অভিভাবকই লড়াই চালাচ্ছিলেন। ছেলেমেয়ের জন্য বিভিন্ন শ্রেণির পঠনপাঠন থেকে শুরু করে অন্যান্য খবরাখবর, সব কিছু সম্বন্ধে অবগত থাকার জন্য তাঁদের একটা স্থানীয় ম্যাগাজিনের খুব দরকার হয়ে পড়েছিল। যেখান থেকে তাঁরা ছেলেমেয়ের পড়াশোনাকেন্দ্রীক ‌যাবতীয় খবর পেতে পারেন। নলিনার এই অনুধাবনই জন্ম দিল ‘পেরেন্ট সার্কেল’ নামে একটা ম্যাগাজিনের। যা অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে শিক্ষাক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের এক ছাদের তলায় নিয়ে আসে। যেখানে তাঁরা সন্তানদের সার্বিক উন্নতির জন্য তাঁদের ভাবনা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে পারেন।

image


একজন য‌খন অভিভাবক হিসাবে তাঁর পথচলা শুরু করেন তখন, হঠাৎই তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে তাঁরা কী সঠিক পথেই সন্তানদের গড়ে তুলতে পারছেন? নলিনার মতে, সাধারণভাবে পড়াশোনার দিকে নজর দিলেও অভিভাবকরা অনেক সময়ই সন্তানের আবেগপ্রবণ দিকগুলোকে উপেক্ষা করে যান।

‘পেরেন্ট সার্কেল’ ম্যাগাজিন এমন সব বিষয়কেই অন্তর্ভুক্ত করে। সে আচরণগত দিকই হোক বা পঠনপাঠনের বিভিন্ন বিষয়ের সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা ব‌ৃদ্ধি। এমনকি জীবনধারণ ও পুষ্টিকর খাদ্য সম্বন্ধীয় সুচিন্তিত আলোচনাও জায়গা পায় এই ম্যাগাজিনে। এই ম্যাগাজিনের জন্ম দেওয়ার উদ্দেশ্যও ব্যাখ্যা করেছেন নলিনা। তাঁর দাবি, অবস্থার প্রেক্ষিতে এমন একটা জায়গা দরকার ছিল যেখানে সব স্টেকহোল্ডারের এক জায়গায় মিলিত হবেন এবং তাঁদের নাম হবে অভিভাবক। এমন একটি গোষ্ঠী যাঁরা নিজেদের মধ্যে নতুন নতুন ভাবনা ও জ্ঞান ভাগ করে নেবে।

নলিনা স্বীকার করে নিয়েছেন পেরেন্ট সার্কেল তৈরিতে তাঁকে উৎসাহ দিয়েছিল তাঁর ছেলেমেয়ে। ২১ বছরের ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র, মেয়ের বয়স ১৭। সেও উচ্চশিক্ষায় ব্যস্ত। ফলে তাঁরা এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে যেখানে তাদের সাহায্য করা মানে হল নলিনার জন্য শুধু বসে দেখা যে তারা কি করছে। অর্থাৎ তাদের পড়াশোনায় নলিনার সরাসরি সাহায্য করার আর কোনও প্রয়োজন ছিল না। ফলে অন্য অভিভাবকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নলিনার সামনে এটাই ছিল আদর্শ সময়। তাই নলিনা বিভিন্ন শিক্ষক ও মনোবিদের সঙ্গে আলোচনা করে অভিভাবকদের সামনে প্রতিনিয়ত আসা সমস্যার সমাধান ম্যাগাজিনে লিখতে শুরু করলেন। যা তাঁকে দ্রুত অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দিল। নলিনার বিশ্বাস অভিভাবকরা তখনই লাভবান হবেন, যখন তাঁরা নিজেদের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান করতে শুরু করবেন।

image


২০১০ এ প্রথম এই ম্যাগাজিনের ভাবনা নলিনার মাথায় আসে। ২০১১ সাল থেকে শুরু হয় পেরেন্ট সার্কেলের পথচলা। এর আগে গ‌ৃহবধূ হিসাবে দিন কাটানো নলিনার পড়াশোনা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। পড়াশোনা শেষ করে একটি নতুন সংস্থায় বেশ কিছুদিন কাজও করেছিলেন। ফলে একটা নতুন উদ্যোগের ক্ষেত্রে তার মার্কেটিং, বিজনেস স্ট্র্যাটেজির মত বিভিন্ন বিষয় কী করে সামলাতে হয় সে সম্বন্ধে একটা প্রচ্ছন্ন ধারণা নলিনার ছিল। সেটাই তাঁর ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি।

জীবনে এগিয়ে চলার জন্য কোনও একজন ব্যক্তিকে আদর্শ হিসাবে বেছে নেননি নলিনা। বরং বেশ কয়েকজনের থেকে একটু একটু করে গুণ আয়ত্ত করেছিলেন। মায়ের কাছ থেকে তিনি পেয়েছিলেন দয়া ও উদারতা, বাবার কাছ থেকে পেয়েছিলেন নিয়মানুবর্তিতা ও একাগ্রতা আর ঠাকুমার কাছ থেকে পেয়েছিলেন ভালবাসা ও আন্তরিকতা। অধুনা চেন্নাইবাসী নলিনা নিজেকে একজন স্বপ্নসন্ধানী বলতেই পছন্দ করেন। তাঁরাই নলিনাকে উদ্ধুব্ধ করে, যাঁরা জীবনে কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে তাদের স্বপ্ন ও লক্ষ্যকে স্পর্শ করেন।

সময়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে এবার পেরেন্ট সার্কেলকে ডিজিটাল করার উদ্যোগ শুরু করেছেন নলিনা। নলিনা চান আরও বেশি করে অভিভাবকের কাছে পৌঁছতে। তাঁদের উপকারে লাগতে। নলিনার দাবি, অভিভাবকদের এক পরিবর্তনশীল প্রজন্মের সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। যেখানে অভিভাবকরা ডিজিটাইজেশন চাইছেন। অভিভাবকদের মধ্যে সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যেই তিনি কাজ করে যাবেন বলে জানিয়েছেন নলিনা।