মধুবনীর জাদুতে বিশ্ব মাতাতে চান বিদূষিনী

আর পাঁচজন শিক্ষিকাদের মতো ‘বাড়ি থেকে স্কুল, স্কুল থেকে বাড়ি’ জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। জীবিকাটা উপভোগ করলেও চাইছিলেন নতুন কিছু করতে। ব্যবসা বা উদ্যোগপতি হয়ে জীবনকে দিতে চাইছিলেন নতুন মোড়। ছেলে জন্মাবার পর সন্তান পালনের ছুটিতে পেয়েছিলেন বেশ খানিকটা সময়। ব্যস আর কী, খেলে গেল বুদ্ধিটা। এক কালের কেমিস্ট্রি টিচার রাতারাতি হয়ে গেলেন মধুবনী ‌আঁকিয়ে। বিশ্বের দরবারে মধুবনী শিল্পকে তুলে ধরতে ক্যানভাসে রঙের ছটা ঝরালেন বিদূষিনী প্রসাদ।

মধুবনীর জাদুতে বিশ্ব মাতাতে চান বিদূষিনী

Saturday September 19, 2015,

2 min Read

মধুবনী শিল্প সামগ্রী নিয়ে বিদূষিনী

মধুবনী শিল্প সামগ্রী নিয়ে বিদূষিনী


ইচ্ছেটা মনের কোটরে বাসা বেঁধেছিল সেই কলেজের দিনগুলোতে। তখন থেকেই বিহারের মধুবনী শিল্পের দিকে ঝোঁক ছিল বিদূষিনীর। জন্ম কলকাতায় হলেও, মধুবনীর আঁতুরঘর বিহারেই কেটেছিল তাঁর বেশিরভাগ জীবন। সে কারণে শিল্পের সূক্ষ্ম কারিগরি বিষয়গুলোর সঙ্গে একাত্ম হতে তাঁর বেশি সময় লাগেনি।


মধুবনী শিল্প সামগ্রী নিয়ে বিদূষিনী

মধুবনী শিল্প সামগ্রী নিয়ে বিদূষিনী


বাবা ছিলেন বিহারের ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটর। কলকাতায় মাধ্যমিকের পাট চুকিয়ে তাই ফিরতে হয়েছিল পাটনাতেই। সেখানে রসায়নে স্নাতক ও স্নাতোকত্তর ডিগ্রি লাভ। পরে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন বিদূষিনী। উঁচু শ্রেণির পড়ুয়াদের অঙ্ক ও বিজ্ঞানের পাঠ দিতেন তিনি। এভাবেই কেটে যায় বেশ কয়েকটা বছর। পরবর্তী কালে বিয়ে করে দিল্লিতে চলে আসেন। সেখানেও শিক্ষকতা চালিয়ে যান। তবে ছেলে জন্মাতেই উদ্যোগপতি হওয়ার ইচ্ছাটা ফের চাগাড় দিয়ে ওঠে। ছেলেকে লালন পালনের সময়ই ছেড়ে দেন ‘কেরিয়ার লঞ্চার’-এ পাঠ্যক্রম উপদেষ্টার চাকরি। এরপর স্থায়ীভাবে মন দেন মধুবনীতে। এই শিল্পে কোনও প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও অল্প সময়েই তা করায়ত্ত করে ফেলেন বিদূষিনী। এমনকী কিছুদিনের মধ্যে নিজেই মধুবনী কর্মশালার আয়োজন শুরু করেন। ফেসবুকে পেজ তৈরি করে মধুবনী শিখতে আগ্রহীদের উৎসাহ দেন তিনি। ২০০৬ সালে স্বীকৃতি পায় তাঁর শিল্পকর্ম। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের অনলাইন পোর্টাল ‘নোভিকা’-য় জায়গা পায় বিদূষিনীর মধুবনী কাজ। অল্প দিনের মধ্যেই তাঁর কাজ প্রশংসা পায়। অনেকেই বিদূষিনীর কাজ কিনে নেন।


বিদূষিনীর শিল্পকর্ম

বিদূষিনীর শিল্পকর্ম


তবে ‘নোভিকা’ ছাড়াও বেশ কিছু এনজিও অনলাইনে তাঁর ছবি বিক্রিতে সাহায্য করে। ইতিমধ্যেই দেশের বেশ কয়েকটি আর্ট গ্যালারিতে দেখানো হয়েছে তাঁর শিল্পকর্ম। বেঙ্গালুরুর রেনেসাঁ ছাড়াও কেরলের ডেভিড হলে দর্শকদের মন পেয়েছে মধুবনী। এছাড়াও বেঙ্গালুরু আইআইএম-এর শিল্পোৎসব ‘ভিস্তা’-তেও জায়গা করে নিয়েছে বিদূষিনীর কাজ। দেশীয় শিল্পের প্রতি তাঁর কাজকে সম্মান জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের সুতি ও বস্ত্র বুনন মন্ত্রক। তাঁকে মন্ত্রকের তালিকায় এক যোগ্য শিল্পী হিসাবে মান্যতা দেওয়া হয়েছে।

তবে এত কিছু মান পেয়েও সন্তুষ্ট নন বিদূষিনী। ক্রেতারা মধুবনী কাজের দাম-দর করলেই মনে মনে চটে যান তিনি। বলেন, ‘‘দেশের মানুষ আজ আর বিদেশি ছাড়া খায় না। এদিকে গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না।’’