ই-কমার্সে অ্যাপ নির্ভরশীলতা কমছে কেন?

ই-কমার্সে অ্যাপ নির্ভরশীলতা কমছে কেন?

Saturday December 05, 2015,

4 min Read

স্মার্টফোনের দাম যেমন কমছে, তেমনই সহজ হচ্ছে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া। আর এই জায়গা থেকেই অ্যাপের প্রতি মনযোগ বাড়িয়েছিল Myntra, Flipkart-এর মতো সংস্থা। বছরের মাঝামাঝি সময়ে Myntra অ্যাপ ওনলি স্ট্র্যাটেজিতে কাজ করতে শুরু করে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফ্লিপকার্টও ওই একই পথে হাঁটবে বলে শোনা যাচ্ছিল। যদিও, পরে তারা সেই পরিকল্পনায় পরিবর্তন করে এবং এখনও ওয়েবে কাজ করছে তারা। 


image


অ্যাপ ছাড়াও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গ্রাহক টানতে ফ্লিপকার্ট তাদের ‘Flipkart Lite’ পরিষেবা আট মাস বন্ধ রাখার পর ফের চালু করেছে। ব্যক্তিগত স্টাইলিং প্ল্যাটফর্ম Voonik গত বছর অ্যাপ ওনলি স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিল। যদিও, সেক্যুয়া প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা অল্পদিনের মধ্যেই বুঝতে পারে যে, এখনও জিনিসপত্র বাছা এবং কেনার জন্য মানুষ বড় পর্দাই পছন্দ করে। সপ্তাহখানক আগেই এই সংস্থা তাদের ওয়েব অ্যাপ পুনরায় চালু করেছে। Voonik এর তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারনেটে মোট মহিলা ক্রেতার সংখ্যা ৪০ মিলিয়ন এবং মহিলা স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২১ মিলিয়ন। সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা সুজয়থ আলির মতে,

মোবাইল ফোন এবং ওয়েব দুইয়ের মাধ্যমে গ্রাহক পেতে পারলে তবেই বাজারের একটা বড় অংশ দখল করা সম্ভব।

তবে অ্যাপ ওনলি ব্যবসার জায়গাও যে বাজারে রয়েছে, তা প্রমাণ করে দিয়েছে পেটিএম। যদিও পেটিএম ব্যবসা শুরুর প্রথমদিন থেকেই শুধুমাত্র মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই কাজ করেছে তারা। এছাড়াও মুদি এবং সবজির ক্ষেত্রে অন-ডিম্যান্ড স্টার্ট আপ, যেমন - গ্রোফার্স বা পেপারট্যাপ-ও কিন্তু কেবলমাত্র মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ আমাদের দেশে অ্যাপ-ওনলি স্ট্র্যাটেজিতে সফলভাবে কাজ করা যায় না, একথা ঠিক নয়।

ই-কমার্সের ক্ষেত্রে অ্যাপ ওনলি পরিষেবার জন্য কি ভারত প্রস্তুত নয়? সইফ পার্টনার্স-এর অংশীদার অলোক গোয়েল বলছেন অ্যাপ-ওনলি পরিষেবার তিনি পক্ষপাতী নন। তাঁর মতে, 

পুরোপুরি ওয়েবকে ভুলে গিয়ে শুধুমাত্র অ্যাপের মাধ্যমে পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা সঠিক নয়। ক্রেতারা কম্পিউটার ব্যবহার করতে চান না মোবাইল ফোন, সেই বিষয়টা তাঁদের উপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত। কোনও সংস্থা তাঁদের নিয়ম ক্রেতাদের উপর চাপিয়ে দিতে পারে না।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালের মধ্যে ভারতে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৩৬ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। ২০১৭ সালের মধ্যে সেই সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়াবে ৩১৪ মিলিয়নে। এই তথ্য পাওয়া সত্ত্বেও, স্ন্যাপডিলের মতো সংস্থা, যাদের বিক্রির ৭৫ শতাংশই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে হয়, তারাও অ্যাপ ওনলি পন্থা নিতে নারাজ। সংস্থার সিইও আনন্দ চন্দ্রশেখরণ-এর মতে 

স্ন্যাপডিল ওয়েব প্ল্যাটফর্মে বিশ্বাস করে এবং ই-কমার্সের সব প্ল্যাটফর্মকেই সমর্থন করে। ভবিষ্যতে কখনও হয়তো কোনও একটি পদ্ধতিতেই ব্যবসার কথা ভাবতে হতে পারে, কিন্তু এই মুহূর্তে ব্যবহারকীদের চয়েস দেওয়া উচিত বলেই মনে করেন তিনি।

সাধারনত কোনও একটি পরিষেবা যদি প্রতি ৭দিন বা ১০দিনে অন্তত একবার দরকার হতেই থাকে সেক্ষেত্রে গ্রাহকেরা অ্যাপ ব্যবহার করেন। হাইপার-ফাউন্ডেড ভারতীয় স্টার্ট আপ বিষয়ক বই The Golden Tap এর লেখক কাশ্যপ দেওরা বলছেন,

সাধারনত ক্রেতারা মাসে একবার বা কয়েকমাসের মধ্যে একবার ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে জিনিস কেনেন। সেক্ষেত্রে তাঁরা যে অ্যাপ ব্যবহার করবেন না তা তো বলাই বাহুল্য। কেবলমাত্র ঘনঘন ব্যবহার করতে হলে তবেই আপ-এর প্রয়োজন।

অ্যাপ ওনলি পরিষেবা মূলত ডেটা এবং ইউসেজ প্যাটার্নের উপর নির্ভরশীল। ভারত পিসি রেভোলিউশনে পিছিয়ে ছিল তার কারণ এদেশের অধিকাংশ মানুষ তার ব্যয়ভার বহন করতে পারেন নি। ইনভেস্টোপ্যাড-এর সহ প্রতিষ্ঠাতা রোহন মালহোত্রার মতে,

মোবাইল ওনলি অ্যাপ্রোচ খারাপ নয়, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এতে ওয়েবের তুলনায় খরচ অনেক বেশি। পুঁজির বিষয়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই জায়গা থেকেই তো অনেক সংস্থা ওয়েবের মাধ্যমে ব্যবসা বন্ধ করার কথা ভাবতেই পারছে না। বাজারে টিকে থাকার জন্য ওয়েব একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। গ্রোথ স্টেজে থাকা স্টার্ট আপগুলিও ওয়েবে তাদের বিস্তার বাড়ানোর কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে চাইছে।

তবে, তাৎক্ষণিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে মোবাইল অ্যাপের বিকল্প নেই। "ক্যাব, হোটেল, সিনেমা বা ট্র্যাভেল টিকিট এইসবের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সমাধান প্রয়োজন হয়। এইসব ক্ষেত্রে ওয়েবের চেয়ে অ্যাপ অনেক এগিয়ে। কিন্তু এই পুরো পদ্ধতির জন্য অনেক বেশি পরিমাণ এবং লাগাতার পুঁজির প্রয়োজন," জানালেন ওয়ো রুমস-এর চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার মনিন্দর গুলাটি।

অ্যাপ-ওনলি বা অ্যাপ-ফার্স্ট স্ট্র্যাটেজির ক্ষেত্রে শুরুর দিকে বিভিন্ন অফার, ডিসকাউন্ট এইসবের দরুণ প্রচুর গ্রাহক পাওয়া যায়। যদিও লো মেমরি স্টোরেজ, হাই ইনস্টল রেট - মোবাইল ফোনে এইসব সমস্যার কারণে সংস্থাগুলিকে ওয়েবে কাজ করতেই হয়। অ্যাপের খরচের প্রাথমিক ধাক্কা সামলাতে পারলেও স্টার্ট আপ সংস্থার জন্য লাগাতার পুঁজি জোগাড় করতে পারাও কঠিন।

বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, আজকাল ফলো-অন ফান্ডিং পাওয়া মোটেই অসুবিধার নয়। তবে বিনিয়োগকারীরা কিন্তু, সব সংস্থার কাছ থেকেই লাভের মুখ দেখতে চাইছেন। যেকোনও মূল্যে ব্যবসা করার চেয়েও একটা সময় পর বাজারে টিকে থাকার লড়াইটা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। সেই জায়গা থেকেই সংস্থাগুলির অ্যাপ-ওনলি স্ট্র্যাটেজি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার সময় এসেছে।

লেখা : জয় বর্ধন

অনুবাদ: বিদিশা ব্যানার্জী