ভিসি-স্টার্টআপের রসায়ন শেখালেন মোহিত এবং জিতেন্দ্র

ভিসি-স্টার্টআপের রসায়ন শেখালেন মোহিত এবং জিতেন্দ্র

Saturday November 19, 2016,

4 min Read

ভ্যালুয়েশন, ফান্ডিং-এর মতো বিষয়গুলি নিয়ে নয়া জমানার উদ্যোগগুলি এত মাথার চুল ছিঁড়ছে যে নিখাদ ব্যবসা করার রোমাঞ্চই তাতে ক্রমে চাপা পড়ে যাচ্ছে। তবে citrus pay-এর এক্সিট স্টোরিটা কিন্তু নব উদ্যোগপতিদের উদ্বুদ্ধ করার পক্ষে যথেষ্ট।

image


মোবাইলস্পার্কস ২০১৬-তে আড্ডাচ্ছলে citrus pay-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জিতেন্দ্র গুপ্ত এবং Sequoia capital advisors India-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহিত ভাটনগর বিবিধ প্রসঙ্গে কথা বলছিলেন। তার ভিতর ছিল ভ্যালুয়েশন, এক্সিট, বিনিয়োগ, উদ্যোগপতি ও বিনিয়োগকারীর মধ্যে সম্পর্কের মত বিষয়। বিশ্বাস করুন দারুণ শিক্ষণীয় একটা সেশন। আর আলোচনায় ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছিলেন ইওরস্টোরির প্রধান সম্পাদক শ্রদ্ধা শর্মা।

ভ্যালুয়েশনই আপনার ব্যবসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু হতে পারে না, মোবাইলস্পার্কসে বলতে এসে সেই প্রসঙ্গও প্রাঞ্জল করেছেন জিতেন্দ্র আর মোহিত।

মোহিতকে দিয়েই শুরু করা যাক। মোহিত বলেছেন, ভেঞ্চার ক্যাপিটালই সব নয়। বরং উদ্যোগপতির কঠোর পরিশ্রম এক আশ্চর্য চাবিকাঠি। বাজারে তেমন ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টের সংখ্যা হাতে গোনা –উদ্যোগপতির স্বপ্নকে যে বা যাঁরা সুখেদুখে বরাবরের মতো পরিচর্যা করবেন।

তাহলে কি হবে? এ প্রসঙ্গে প্রয়োজনীয় খতিয়ান পেশ করেছেন জিতেন্দ্র। মোবাইলস্পার্কে আলাপচারিতায় নিজের ব্যবসার কঠিন দিনগুলির কথা বলতে গিয়ে জিতেন্দ্র জানালেন, তাঁর নিজের ব্যবসাটা বছর খানেক আগে খানিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেইসময় তাঁর ব্যবসায় খাটানোর জন্যে জরুরি ভিত্তিতে টাকার দরকার পড়েছিল।

জিতেন্দ্রর কথায়, সেইসময় মোহিতকে প্রস্তাব দি‌লাম, ব্যাপারটা সামাল দেওয়ার জন্যে আমার ১০ মিলিয়ন ডলার লাগবে। টাকাটা কি তুমি আমায় দিতে পারো? পরদিন সকালেই মোহিত সেই টাকা দিয়ে দিয়েছিল। আসলে সম্পর্কই হল সব কথার শেষ কথা।

উদ্যোগপতি জিতেন্দ্রর সঙ্গে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট মোহিতের এই সুসম্পর্কের রসায়ন এ দেশের উদ্যোগপতি ও ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টের ভিতর এখনও বহুল চর্চিত নয়। বরং ব্যাপারটার দিকে লক্ষ্য রাখছেন খুব কম সংখ্যক উদ্যোগপতি। তবে উদ্যোগপতিরা সম্পর্ক গড়ার কাজে মনোযোগ দিলে ভবিষ্যতের কঠিন সময়ে সামনে আসা অসুবিধাগুলি ওঁরা কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন জিতেন্দ্র।

আসলে যে কোনও নতুন উদ্যোগপতিরই অনেক ধরনের জিজ্ঞাসা থাকবে। যেমন, কীভাবে তিনি বেড়ে উঠবেন, স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার নেওয়ার প্রয়োজন হলে তাঁর পক্ষে ঠিক কী করণীয়? নাকি ওই উদ্যোগপতি একলা স্বাধীনভাবে পথ ‌চলবেন? এই রকম টানাপোড়েনের পর্বে স্বভাবতই দরকার পড়ে সব কিছু গভীরভাবে খতিয়ে দেখা। না হলে তো নিজের ব্যবসায়িক স‌মস্যাগুলির ফাঁদ কেটে বেরোতে পারবেন না তিনি।

Sequoia capital advisors India-এর এমডি মোহিত বলেছেন, এ দেশে স্টার্ট আপ ইকোসিস্টেমের এখনও বহু পথ চলার বাকি রয়েছে। তবে এ পর্যন্ত খুব অল্প সংখ্যক মানুষই উপলব্ধি করেছেন, এ দেশে স্টার্ট আপ ইকোসিস্টেমের জন্মমুহূর্তের আগেপরের অধ্যায়।

মোহিত বলেছেন, আপনি যে সংস্থাটি গড়েছেন সময়ের প্রয়োজনে সেটি থেকে এক্সিট করতে হতে পারে। উদ্যোগপতির নিজের কম্পানির প্রোডাক্ট সম্পর্কে ভাবাবেগ থাকবেই। আর থাকে সংস্থায় বিস্তর মাথা ঘামানোর পর্বও। রণকৌশল হিসাবে তাও কখনও কখনও এক্সিট করা দরকার। এটা ব্যবসার ওঠাপড়ার সঙ্গে জড়িত শর্ত। এ ধরনের ওঠাপড়ার অভিজ্ঞতা উদ্যোগপতি মাত্রই অর্জন করবেন।

কোন সময়ে স্টার্ট আপটিকে এক্সিট করানোর দরকার হবে, আবার কোন ক্ষেত্রে স্টার্ট আপটিকে এক্সিট করানোর প্রয়োজন নেই – এটা হল এক কথায়, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো বাস্তব সত্য। উদ্যোগপতিদের এক্সিটের প্রক্রিয়া খোলামনে করার পরামর্শ দিয়েছেন মোহিত।

মোবাইলস্পার্কসে বলতে গিয়ে মোহিত অনুযোগ করেছেন, উদ্যোগপতিরা যেন এখন বড্ড বেশি ভ্যালুয়েশন আর ফান্ডিং নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। তাতে শুধু ব্যবসার জন্যেই ব্যবসা করার উদ্দেশ্যের মতো যে রোমাঞ্চ ছিল, তা থেকেও সরে যাচ্ছেন। ফলে নয়া জমানার উদ্যোগপতিদের ভিতর অনেকেই ব্যবসা করে নির্ভেজাল আনন্দ পাচ্ছেন না।

উদ্যোগপতি আর ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টের অভ্যন্তরীণ সুসম্পর্কই হল তুরুপের তাস। আপনি যখন একজন উদ্যোগপতি হিসাবে কোথাও পিচ করছেন – মোদ্দা কথায় তখন আপনি সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীর সঙ্গে এক ধরনের হার্দিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেষ্টা করছেন। কেননা পিচ করাকালীন আপনি আর কোনও সংস্থাকে বেছে পিচ করেন না। একজন মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন।

তাও উদ্যোগপতি এবং বিনিয়োগকারীর মধ্যে কখনও সম্পর্ক তৈরি হয়। আবার কখনও তা হয় না। তবে আপনাকে আপনার উপযুক্ত কো-ফাউন্ডার কিংবা ঠিকঠাক বিনিয়োগকারী খুঁজে বের করতে হবে।

এ ব্যাপারে citrus pay-এর জিতেন্দ্র বলেছেন, ব্যাপারটা ভ্যালুয়েশনের নয়। আদতে বিষয়টা দাঁড়িয়ে আছে যে ভিতের ওপর তা হল সুসম্পর্ক। তবে একস‌ঙ্গে কাজ করার মতো একটা ভালো টিম থাকাটাও অত্যন্ত দরকারি। নিজের সংস্থায় একটা ভালো কাজের টিম গড়ে তুলতে টানা দুবছর খেটেছেন জিতেন্দ্র। বলাবাহুল্য, যে দলটি নিয়ে আপনি কাজ করতে চলেছেন, তার সদস্যরা সুখেদুখে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ না মেলালে শেষপর্যন্ত কিছুই দাঁড়ায় না।