আঁকিবুকি ঘর গড়চায় The Doodle Room

আঁকিবুকি ঘর গড়চায় The Doodle Room

Wednesday April 20, 2016,

3 min Read

image


আনমনে আঁকিবুকি, বেখেয়ালে গেয়ে ওঠা দু কলি, অথবা মনের আনন্দে পা মেলানো নাচের ছন্দে এভাবেই বিকশিত হয় শিল্প, বিকশিত হয় শিশু মন, এমনটাই মনে করেন কলকাতার দ্য ডুডল রুমের প্রতিষ্ঠাত্রী শালিনী ও সুমন।

দক্ষিণ কলকাতার গড়চা এলাকায় গড়ে ওঠা এই অভিনব আর্ট স্পেসটির লক্ষ্য সৃজনশীলতা, দক্ষতা ও প্রতিভার বিকাশের মাধ্যমে শিশুদের প্রকাশ স্বাধীনতা দেওয়া। ২০১৫ এর জুন মাসে ২০০০ স্কোয়্যার ফিট জায়গা নিয়ে তৈরি হয় দ্য ডুডল রুম, রয়েছে নাচের স্টুডিও, সব রকম সুযোগ সুবিধা সহ রান্নাঘর, আঁকা ও হাতে কাজের জায়গা এবং গ্যালারি।

“শিল্পের শহর কলকাতা, এখানে খুব ছোট বয়স থেকেই আমরা ছেলে মেয়েদের নাচ, গান, আঁকা বা হাতের কাজের স্কুলে পাঠাই। অলিতে গলিতে রয়েছে এমন সব স্কুল। কিন্তু আমরা একটু অন্যরকম করে ভাবতে চাইছিলাম, শিশুদের যে সহজাত প্রতিভা সেটাকেই বিকশিত করতে চাই আমরা”, বললেন শালিনী।

শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য নিয়মিত আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্ট, ব্যালে, সমসাময়িক আধুনিক নাচ, হিপহপ, হ্যাপি-ফিট (আড়াই থেকে চার বছরের শিশুদের জন্য নাচের ক্লাস), বেকারি, পাবলিক স্পিকিং, থিয়েটারের ক্লাস হয় ডুডল রুমে।

এছাড়াও হয় ওয়ার্কশপ। ডুডল রুমের পক্ষ থেকে যেমন আয়োজন করা হয় ওয়ার্কশপ তেমনই বাইরের শিল্পীরাও স্টুডিও ভাড়া করে ওয়ার্কশপ করাতে পারেন এই জায়গায়, ভাড়া করা যায় রিহার্সালের জন্যও।

image


“অনেক সময়ই বাইরে থেকে কোনও শিল্পী আসেন, যিনি কলকাতাতে ওয়ার্কশপ করাতে চান, তা সে নাচ, গান, থিয়েটার বা আঁকা যাই হোক না কেন। এ শহরের শিল্পীদের কাছে এটা একটা খুবই আকর্ষণীয় সুযোগ, কিন্তু জায়গা এক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সেই জন্যই আমরা এই ওয়ার্কশপ স্পেসটি রেখেছি। একই ভাবে রিহার্সালের জন্যও আমরা বিভিন্ন শিল্পীদের এই স্পেসটি ভাড়া দিই। প্রতি ঘন্টা হিসেবে টাকা নেওয়া হয়, ফলে শিল্পী ঠিক যেটুকু সময় ব্যবহার করছেন, সেই সময়টুকুরই টাকা দিতে হয়, সারা মাসের জন্য অকারণে ভাড়া গুনতে হয় না। বিভিন্ন রেসিডেন্সি প্রোগ্রামও হয়ে থাকে এখানে”, বললেন শালিনী।

নাচ, গান, থিয়েটারের জন্যও ভাড়া দেওয়া হয় দ্য ডুডল রুম। গ্যালারিটিতে নিয়মিত প্রদর্শনী হয়ে থাকে। শিশু-কিশোরদের সৃজনশীলতা বিকাশের পাশাপাশি, নবীন প্রতিভাবান শিল্পীদের একটি সম্পূর্ণ আর্ট স্পেস দেওয়াটাই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য, বললেন শালিনী। 

শালিনী নিজে হোটেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, সহ-প্রতিষ্ঠাত্রী সুমন মণিপুরী নাচের শিল্পী। শিল্পের প্রতি ভালবাসা থেকেই বন্ধুত্ব গাঢ় হয়েছে দুজনের, আর সেখান থেকেই শুরু দ্য ডুডল রুমের ভাবনা। দ্য ডুডল রুমের পাশাপাশি স্পর্শ বলে আরেকটি স্টুডিও চালান সুমন।

“নিজেদের বিশ্বাসে স্থির থেকে এগোনোটাই সব থেকে কঠিন চ্যালেঞ্জ, আর পাঁচটা প্রথাগত নাচ, গান আঁকার স্কুলের থেকে স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে নিজেদের মত করে কাজটা চালিয়ে যাওয়াটা বেশ কঠিন। এছাড়াও নিজেদের ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেও সময় লেগেছে বেশ খানিকটা”, বললেন শালিনী।

গ্রীষ্ম ও শীতকালীন ক্যাম্প, সিন্ডেরেলার গল্পের ভিত্তিতে শ্যাডো থিয়েটারের ওয়ার্কশপ, ক্রিসমাস ক্যারল ওয়ার্কশপ, রামায়ন,আকবর, বীরবল ইত্যাদি নানা থিয়েটার হয়েছে এখানে। হয়েছে নানা অনুষ্ঠানও. চায়না টাউন ক্রিয়েটিভসের সঙ্গে যৌথ ভাবে আর্টিস্টস কালেক্টিভ নাইট ও ক্যানভাস অ্যান্ড চায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে দ্য ডুডল রুম, হয়েছে বসন্ত আড্ডা।

“আমরা মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাস করি, আঁকিবুকি থেকে ছবি আঁকা সবই শিল্প, আর শিল্পের কোনও সীমা নির্ধারণ অসম্ভব। তেমনই সীমাহীন মানুষের বুদ্ধিমত্তা, কল্পনা, সৃজনশীলতা ও অভিব্যক্তি। এই সব কিছুকেই একটা আঁধার দিতে চেয়েছি আমরা, আমাদের এই ডুডল রুমে”, বললেন শালিনী। 

image